ঈদুল ফিতরের ‘নয়’দিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন টাঙ্গুয়ার হাওর

হাবিব সরোয়ার আজাদ: ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের কুলঘেষা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নৈসর্গিক অপরুপ দৃশ্যবলীতে প্রকৃতি তার নিজ হাতেই সাজিয়েছেন হাওরের রাজধানী সুনামগঞ্জ জেলাকে।
তাই এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে লাখো পর্যটকগণকে আকৃষ্ট করবে সমুদ্র সাদৃশ্য বিশাল জলরাশীর টাঙ্গুয়ার হাওর -সুন্দরবন লেক হাবেলি রাজবাড়িসহ সুনামগঞ্জের ৩৩ দর্শনীয় স্থান।
জেলার প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্য্যরে ভান্ডার তাহিরপুরের পাহাড়,টিলা, সীমান্তনদী , চুনাপাথর খনি প্রকল্প, শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী লেক), সমুদ্র সদৃশ্য টাঙ্গুয়ার হাওর, জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান, হলহলিয়ার রাজবাড়ি, লালঘাট ঝর্ণা,রাজাই ঝর্ণা, সুন্দরবন লেকসহ প্রতি বছর দুটি ঈদে ৩৩টি দর্শনীয় স্থান দেখতে কয়েক লাখ দেশি -বিদেশি পর্যটক, ভ্রমন পিপাসুদের আগমন ঘটে সুনামগঞ্জের হাওর ও সীমান্ত জনপদে।
এবার শবে কদর, পবিত্র ঈদুল ফিতর ও সাপ্তাহিক ছুটিসহ ৯ দিনের ছুটি থাকায় এসব দর্শনীয় স্থান দেখতে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ লোকের সমাগম ঘটবে তাহিরপুরসহ গোটা জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোতে।
অনেক পর্যটক ৪ জুন রাত থেকেই তাহিরপুর, বাদাঘাট, ট্যাকেরঘাটে অবস্থান করছেন ঈদের ছুটি কাটানোর ফাঁকে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে।
পরিবেশ ও মানবাধিকার উন্নয়ন সোসাইটির এক গবেষণায় প্রকাশ, প্রকৃতির রাজ্য তাহিরপুরেই শুধুমাত্র প্রকৃতির অপরুপ রুপ দেখতে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহার ছুটির দিনগুলোতে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখের মত দর্শনার্থী এবং পর্যটকের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে প্রতি বছর।
অন্যান্য বছরের তুলানায় এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পরে ৯ দিনের ছুটিতেও বরাবেরর মত তাহিরপুর সহ জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোতে গড়ে দুই থেকে আড়াই লাখের মত দেশি বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীর আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে ৪ জুন থেকে। ৮ জুন শনিবার ছুটি শেষ হলেও সব মিলিয়ে ৯ দিনের ছুটি শেষে ৯মে অফিস-আদালত, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে।
সেক্ষেত্রে ঈদের দিন থেকে ঈদের ছুটির শেষ বিকেল পর্যন্ত লাখো পর্যটকের আগমণের অপেক্ষায় রয়েছে সুনামগঞ্জের প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্য্যের ভান্ডারখ্যাত মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে থাকা তাহিরপুরের হযরত শাহ আরেফিন(রহ;) আস্থানা, ওপারের মেঘালয় পাহাড়ে হযরত শাহ আরেফিন (রহ:)’র ইবাদত খানার পাহাড়ি গুহা সঙ্গে ঝর্ণা ধারা, ২৩ কিলোমিটার দৈর্ঘের রুপ বৈচিত্র সম্পদে ভরপুর মরুময় দৃশ্যাবলীর সীমান্তনদী জাদুকাঁটা, সবুজের অভায়ারণ্য বারেকটিলা, এশিয়ার সর্ব বৃহৎ জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান, রাজারগাঁও অদ্বৈত প্রভুর আখড়াবাড়ি, গড়কাটি ইসকন মন্দির, হলহলিয়ায় হাবেলি রাজবাড়ি, কড়ইগড়া-রাজাই আদিবাসী পল্লী, কড়ইগড়া মাঝের টিলা, রাজাই টিলা, রাজাই ঝর্ণা ধারা, টেকেরঘাটের বড়ছড়া শুল্ক ষ্টেশন, বড়ছড়া বীর শহীদদের বধ্যভুমি, ভারতঘেষা ভাঙ্গারঘাট কোয়ারী, টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প থাকা শহীদ সিরাজ বীর উওম লেক (নীলাদ্রী লেক), ৭১’র মুক্তিযোদ্ধের ৪নং সেক্টরের ৫নং সাব সেক্টরের টেকেরঘাটের শহীদ স্মৃতিস্থম্ভ, কাঁচ বালির টিলা, টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প, শহীদ সিরাজ বীর উওমের সমাধীস্থল, টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে টেকেরঘাট পাহাড়ি ছড়া, লাকমা ছড়া, লালঘাট ছড়া, লালঘাট ঝর্ণাধারা, চারাগাঁও শুল্কষ্টেশন ,লামাকাঁটা গ্রাম সংলগ্ন সুন্দরবন কোয়ারি (লেক), বাগলী ছড়া নদী, বাগলী শুল্ক ষ্টেশন, শনি-মাটিয়াইন হাওর ও ওয়ার্ল্ড হেরিটেইজ রামসার সাইট মাদার ফিসারিজ অব টাঙ্গুয়ার হাওরসহ নানা দর্শনীয় স্থানগুলো।
এছাড়াও জেলার ছাতকে রয়েছে বৃটিশ আমলে স্থাপিত ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, চুন ফ্যাক্টরী, বৃটিশ আমলের ইংলিশ টিলা, লাফার্জ সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, রুপওয়ে, পেপার মিল, মণিপুরী সম্প্রদায় অধ্যুষিত ছনবাড়ির লাগোয়া সীমান্ত নদী সোনাইঘেষা বাগান বাড়ি।
এছাড়াও দোয়ারাবাজার উপজেলায় রয়েছে, বাঁশতলা শহীদ মিনার ও বীর শহীদদের কবরস্থান, টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড, সীমান্তনদী খাসিয়ামারা, আদিবাসী পল্লী ঝুমগাঁও।
জেলার সদর উপজেলায় রয়েছে মরমী কবি সাধক পুরুষ হাসন রাজার বাড়ি ও মিউজিয়াম, পুরাতন কালেক্টরেট ভবনে ঐহিহ্য জাদুঘর, ডলুরা শহীদ মিনার।
এসব দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ বিষয়ে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান জানান, দেশি বিদেশি পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে সুনামগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন ও সংশ্লিস্ট দর্শণীয় এলাকার থানা পুলিশ আন্তরিক রয়েছেন।
সুনামগঞ্জ ২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো মাকসুদুল আলম বললেন, পর্যটকগণ সীমান্তঘেষা যে কোন দর্শণীয় স্থান দেখতে চাইলে কোনো অবস্থাতেই যেন বাংলাদেশ -ভারত সীমান্ত অতিক্রম না করেন।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জের যে কোন দর্শনীয় স্থানে পর্যটক কিংবা ভ্রমণ পিপাসুরা ভ্রমণে আসলে জেলা প্রশাসন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন।
যেভাবে যাবেনঃ
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের যে কোনো স্থান থেকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হয়ে সরাসরি বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, লেগুনা, অটোরিক্সা করে তাহিরপুর উপজেলা সদর কিংবা লাউড়েরগড় ও বিন্নাকুলিঘাটে পৌঁছে মোটরসাইকেল কিংবা লঞ্চ, স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ভাড়া নিয়ে ইচ্ছে মতো ঘোরাফেরা করা যায় তাহিরপুরসহ জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোতে।
থাকা খাওয়া :কোনো পর্যকট কিংবা দর্শনার্থী রাতে থাকতে চাইলে জেলা সদর ছাড়াও তাহিরপুর উপজেলা সদরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, উপজেলা পরিষদের রেষ্ট হাউস ও অন্যান্য হোটেলে নির্ধারিত ভাড়ায় গ্রুপ কিংবা স্বপরিবারে থাকতে পারবেন। দর্শণীয় স্থান গুলো আশে পাশে কিংবা কাছাকাছি গ্রামীণ হাটবাজাওে রয়েছে একাধিক ভাল মানের রেষ্টুরেন্ট। আগাম অর্ডার দিয়ে রাখলে সুনামগঞ্জের মিঠা পানির হাওরের দেশীয় প্রজাতির নানা রকম স্বাধের টাটকা মাছ সহ সব রকমের খাবার সহনীয় মুল্যে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।