শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

বিশেষ প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। ১৯৮১ সালের এই দিনে বিদেশে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণী দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এবার আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, শেখ হাসিনার সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দেশব্যাপী দোয়া, মিলাদ মাহফিল, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ইত্যাদি। দিনটি উপলক্ষে আজ বেলা ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনাসভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বিশিষ্ট নাগরিক ও জাতীয় নেতারা অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে দেশ ও জাতির কল্যাণে, গণতন্ত্রের উন্নয়নে, আধুনিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য শেখ হাসিনার সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করে যথাযোগ্য মর্যাদায় তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটি পালনের জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে হত্যা করে খুনিরা, তখন শেখ হাসিনা তার স্বামী ড. এমএ ওয়াজেদ, দুই সন্তান ও ছোট বোন শেখ রেহানাসহ পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন। ফলে তারা প্রাণে বেঁচে যান। পরে তারা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন।

১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। এর পর দীর্ঘ নির্বাসিত সময় কাটানোর পর আজকের এই দিনে দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দিনটি ছিল রবিবার। ওই দিন শেখ হাসিনাকে বহনকারী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকার তৎকালীন কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ওইদিন প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বঙ্গবন্ধুকন্যাকে একনজর দেখতে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলানগর পর্যন্ত লাখো জনতার ঢল নামে। এ সময় সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী লাখো কণ্ঠের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা বিমানবন্দর এলাকা।

দেশে ফিরে বিমানবন্দরে লাখো জনতার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাংলার মানুষের মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি; আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই। স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর বঙ্গবন্ধুকন্যা অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, আমি সামান্য মেয়ে। সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে আমি ঘর-সংসার করছিলাম।

কিন্তু সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেলসহ সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে গত ৩৭ বছরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। ব্রাকেটবন্দি বহুধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে শুধু ঐক্যবদ্ধই নয়, শক্ত হাতে হাল ধরে দেশের বৃহত্তম ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।