
জাহিদ হাসান: নেত্রকোণার ঠাকুরাকোণা-কলমাকান্দা সড়কের যোগাযোগের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে এ অঞ্চলে যাতায়াতকারী মানুষ। ঈদকে সামনে রেখে সড়কটিতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে। বাড়তে পারে দুর্ঘটনাও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নেত্রকোণায় ঠাকুরাকোণা-কলমাকান্দা সড়কটি সতেরো সালের বন্যায় বিভিন্ন অংশে ভেঙ্গে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ,বারবার সংস্কার কাজ হলেও কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কিছু দিন যেতে না যেতেই ২০ কিলোমিটার সড়কের পুরো সড়কেই ভেঙ্গে খানাখন্দকে পরিণত হয়েছে। গত ৫ বছরেও সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও এখন সারা দেশের সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই প্রায় বিশ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছেন। ফলে সময় ও অর্থের অপচয় বাড়ছে। কলমাকান্দা বাসষ্ট্যান্ড হতে বাহাদুরকান্দা, গুতুরা বাজার হতে দশধার পর্যন্ত সড়কের অবস্থা আরো খারাপ।
স্থানীয় সড়ক বিভাগ প্রতিবছর ২/১ বার সড়কের ভাঙ্গা মেরামতের নামে (মেইনটেইন্স) বিপুল অংকের বরাদ্দে এনে দায় সাড়ছে। সড়কে ছোট-বড় খানাখন্দ তৈরী হওয়ায় তা চলাচরের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত এই সড়কটি সংস্কারের দাবী জানিযেছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে ইট এবড়ো থেবড়ো খানাখন্দে হেঁটে চলাচলেরও অনুপোযোগী।পাশাপাশি ছোটবড় অনেক খানাখন্দ তৈরি হওয়াতে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পুরো সড়ক জুড়েই কোথাও কোথাও দেবে উচুঁ-নিচু হয়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও বড় বড় গর্তে খানা-খন্দে পরিণত পরিণত হওয়ায় ৬ মাস ধরে ২/৩ নম্বর আধলা (নষ্ট) ইট দিয়ে, জুড়াতালি দিয়ে রাখা হয়েছে। রাস্তার উভয় পাশের স্থানে স্থানে ভেঙ্গে গেছে। ফলে যানবাহন চলা দুরের কথা পথচারীরা পায়ে হেঁটে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই হোঁচট খায়। রাস্তার চরম বেহাল অবস্থা থাকায় মটর সাইকেলসহ মালবাহী যানবাহন বিকল্প রাস্তা ধরে পাবই- সিধলী সড়ক হয়ে রাস্তা ঘুরে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে চলাচল করছে।
হিরাকান্দা গ্রামের জালাল আকন্দ,পাবই গ্রামের আলী উসমান এর ছেলে মোজাম্মেল হক,একই গ্রামের মৃত সুরুজ আলীর ছেলে ডিপ্টি মিয়া,রায়পুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ ফকির বলেন, এই রাস্তাটি একটি জনগুরত্বপূর্ন রাস্তা। রাস্তাটি ৫/৬ বছর আগে নামকাওয়াস্তে মেরামত করা হয়েছিলো। বেশী দিন টিকে নাই। আজকালকার অনেক ঠিকাদারদের কাজ বড়জোড় ৬ মাস গেলেই রাস্তা আর থাকেনা। তারপর আমাদের এলাকা নীচু-হাওর এলাকা, কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোণা ২০ কিলোমিটার সড়ক। এই সড়কটি মূলতই উচ্চতা কম, বন্যার পানিতে সহজেই নিমজ্জিত হয়ে যায়। কাজেই সরকার সঠিক পরিকল্পনা করে সঠিক কাজ করলে এই সড়কের এমন বেহাল-দশা হতো না।
গুতুরা-বড়তলা গ্রামের কায়ছার ও দশধার গ্রামের দবীর হোসেন ও হুমায়ন কবীর জানান, প্রায় দেড় বছর ধরে এই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী, যোগাযোগের জন্য করুন অবস্থা।অথচ এই রাস্তা দিয়ে সীমান্তবতী উপজেলা কলমাকান্দা, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর এলাকা ও নেত্রকোণার শত শত গ্রামের মানুষ, বাহাদুরকান্দা, ডুবিয়ারকোণা, গুডমন্ডল, পাবই, হিরাকান্দা, নিশ্চিন্তপুর, বাইশদার দশধার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাই স্কুল সহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার, হাজার মানুষকে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হয় এপথ দিয়ে।
অপরদিকে বাইশদার গ্রামের তুফান আলী, হুমায়ন, সালিপুরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদির উদ্দীন, বালু ব্যবসায়ী শাজাহান, ঠাকুরাকোণা বাজারের শিক্ষক কাশেম, লিটনসাহা, বাবুল সাহা ও হোসেন আলী জানান, কলমাকান্দা বাসষ্ট্যান্ড থেকে গুতুরা বাজার, পাবই থেকে দশধার পর্যন্ত এবং দশধার থেকেও ঠাকুরাকোণা সড়কের পুরো রাস্তা জুড়েই বড়-বড় গর্ত, খানাকন্দকে ভরে গেছে। সেগুলো জোড়াতালি দিযে রাখা হচ্ছে। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে বিভিন্ন ধরনের শত-শত যানবাহন। সড়কটিতে খানাখন্দ থাকায় এবং বেইলী ব্রীজ গুলো অকেজো ও ঝুকিপূর্ণ থাকায় প্রায় কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। হতাহত হচ্ছে অনেকেই। অথচ গত দুবছর আগে সড়কটি নির্মান বাবত প্রায় কোটি টাকা এবং সম্প্রতি সড়কটি চলাচলের উপযোগী করার জন্য ১ কোঠি টাকা খরচ করা হলেও কোন কাজই আসছেনা এলাকাবাসীর।
এদিকে স্থানীয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুর আলম তরফদার বলেছেন,সড়কটির জন্য তিনশো দশ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এবছর একশো কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। ল্যান্ড সার্ভে চলছে। আর ঈদে সাময়িক মেইনটেইন্স করে চলাচলের উপোযোগী করে দেয়া হবে।