
বিশেষ প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযোদ্ধা মোঃ গোলজার হোসেন তালুকদারকে ২২ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে গোলজার হোসেন তালুকদারের পক্ষে তাঁর পুত্র এডভোকেট মাশহুদুল মান্নানের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু এমপি, নেত্রকোণাা তিন আসনের এমপি অসীম কুমার উকিল।
জানা যায়, মোঃ গোলজার হোসেন তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলজার হোসেন তালুকদার ১৯৬১ সালে আইয়ুব মার্শাল’ল বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে পদার্পণ করেন, মরহুম আব্দুল খালেক সাহেবের হাত ধরে। হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেন।বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নির্দেশে, শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্রলীগের গোপন বিপ্লবী শাখা ‘নিউক্লিয়াসের’ সক্রিয় সদস্য হিসেবে সকল কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন।১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা কর্মসূচি প্রচার করেন বৃহত্তর ময়মনসিংহে প্রতিটি গ্রামগঞ্জে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে, বঙ্গবন্ধুর মুক্তির আন্দোলন ও ছয় দফা, এগার দফার আন্দোলনে ‘নেত্রকোণা মহকুমা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের’ অন্যতম নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দেন। এর মাঝে তিনি স্কলারশিপে উচ্চ শিক্ষার জন্য জাপান যাবার সুযোগ পান। বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডিস্থ বাড়ীতে নেতার আশীর্বাদ নিতে গেলে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তোদের নিয়ে আমি বাঙ্গালীর মুক্তির স্বপ্ন দেখি। তোরা যদি না থাকিস তাহলে কিভাবে হবে। যাস না, দেশটা স্বাধীন হলে সব পাবি। ‘ বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশকে শিরর্ধায মনে করে দেশেই থেকে গেলেন গোলজার হোসেন। এর মাঝে ১৯৭০ নেত্রকোণা সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসাবে বিপুল ভোটে “ভি.পি” পদে নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সনে ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ‘ নেতৃত্ব দেন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর সাথে নেত্রকোণায় নৌকার পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালান। ১৯৭১ সনে অসহযোগ আন্দোলনে নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা হিসাবে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে সারা জেলায় মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের রসদ সংগ্রহের নেতৃত্ব দেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে১৯৭১ সনে মুজিব বাহিনীর উপ-আঞ্চলিক অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। দেরাদুনের ভারতীয় আর্মি হেড কোর্য়াটারে প্রশিক্ষণ নিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন। মুজিব বাহিনীর মটিভেটর হিসেবে তোড়া জুনে মুক্তিযুদ্ধাদের মোটিভেট করেন মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক শেখ ফজলুল হক মণির নির্দেশে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের যুব সমাজকে একত্রিত ও গঠনমূলক দেশ গড়ার কাজে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে, শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৭২ সনে আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত করেন গোলজার হোসেনকে। একই সাথে নেত্রকোণা জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে নেত্রকোণায় যুবলীগকে শক্তিশালী করতে কাজ করেন। সদ্য স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের বিরোধীতা করে কতিপয় ছাত্রনেতার নেতৃত্ব বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে জাসদ যখন সারাদেশে ছাত্রলীগকে বিভক্ত করে ষড়যন্ত্র, সংঘাতের অপ-রাজনীতি শুরু করে তখন গোলজার হোসেন নেত্রকোণা জেলা ছাত্রলীগকে সুসংবদ্ধ রাখতে থানায় থানায় সাংগঠনিক কাজ করেন। ১৯৭৫ সনে বঙ্গবন্ধু কৃষক, শ্রমিক মেহনতী মানুষের জন্য শোষিতের গণতন্ত্র ও বাঙ্গালীর সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে ২য় বিপ্লব কর্মসূচী বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেন এবং গোলজার হোসেনকে নেত্রকোণা জেলা বাকশালের সম্পাদক মনোনীত করেন। কিন্তু ভাগ্যর নির্মম পরিহাসে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ৭১ এর পরাজিত শক্তি, কতিপয় দালাল কুলাঙ্গার মীরজাফরের বংশধর। সে রাতেই ঢাকায় গ্রেফতার হন গোলজার হোসেন। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আর্মি কনসানট্রেশন ক্যাম্পে। নির্মম নির্যাতন ও মৃত্যু ভয় সেদিন তাকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেননি।