প্রবন্ধঃ মুজিবনগর সরকার ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

প্রবন্ধঃ মুজিবনগর সরকার ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

 -তিতাস মিয়া ,প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, নেত্রকোণা সরকারি কলেজ, নেত্রকোণা ।

উপস্থাপনাঃ  বাংলার ইতিহাসে মুজিবনগর সরকার গঠন ও শপথ গ্রহণ দু’টি তাৎপর্যমণ্ডিত ঘটনা। আকবরের বাংলা অভিযানকালে বাংলার বারোভূঁইয়াদের বিদ্রোহে, ইংরেজ আমলে ফকির সন্যাসী বিদ্রোহে ও ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে বাংলার স্বাধীনতা অর্জন করা যায় নি১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হলেও ‘পূর্ববঙ্গ’ স্বাধীন বাংলা হয়নি। ’৪৭ এর দেশ বিভাগ হওয়ার সময় শরৎ বসু, সোহরাওয়ার্দী, শামসুল হকের মত নেতাদের অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননের বিপ্লবী মুজিবনগর সরকার তাই স্বাধীন বাংলা গঠনের জন্য বাঙালির দীর্ঘকালের স্বপ্নের রূপায়ন। ক্ষুদ্র কলেবরে মাত্র ৬ জন সদস্য নিয়ে এই সরকার গঠিত হলেও জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সর্বস্তরের মানুষের ও বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায় করে অত্যন্ত সফলভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে দেয় এই সরকার

মুজিবনগর সরকার গঠনঃ অপারেশন সার্চলাইট চলছে। ঘুমন্ত নিরীহ নর-নারীর উপর কাপুরুষুচিত আক্রমন শুরু হল। এই বিপর্যস্ত মানুষের আর্তচিৎকার ভেদ করে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ওয়্যারলেসে করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বাণী তরঙ্গে ভাসছে।

“ইহাই হয়ত আমার শেষ বার্তা। আজ হুইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। ………পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও”[i]

পরক্ষণেই বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলেন। গ্রেফতারের দায়ীত্বে নিয়জিত ৫৭ ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর জাফর আরেকটি ওয়্যারলেসে জোরালো কণ্ঠে পাল্টা ঘোষণা দিলেন “Big bird(মুজিব) in the cage…Others not in their nest….Over.”[ii] উত্তাল মার্চের বাকি দিনগুলি পাক বাহিনীর হত্যা, লুন্ঠন আর অগ্নিসংযোগের উন্মাদনায় অতিবাহিত হল। তাজউদ্দীন আহমদ ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা  ভারতের উদ্দেশ্যে সীমান্ত পাড়ি দিলেন। ১০ এপ্রিল 1971 দিবাগত রাতটি ছিল ভিন্ন ধরণের। আকাশবাণী কোলকাতার বেতার কেন্দ্র থেকে বরাবরই প্রচার করা হচ্ছিল যে রাত ১০ টার পর একটি বিশেষ সংবাদ প্রচার করা হবে। রাত ১০ টায় শব্দসৈনিক দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের  সতেজ ও মসৃণ কণ্ঠে উচ্চারিত হলো শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবাদটি। তিনি বললেন-

“স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামের নতুন এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান। উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম আর সরকারের প্রধানমত্রী তাজউদ্দীন আহমদ।”।[iii] ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও আবু হেনা এম কামরুজ্জামানকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য নিয়োগ করা হয়। এম এ জি ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়।

১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর ১৭ এপ্রি লঅনুষ্ঠিত হয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান।একটি কথা আছে ‘History repeats’ অর্থাৎ ‘ইতিহাসের পূণরাবৃত্তি ঘটে’। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল তার ঠিক ২১৪ বছর পরে, মেহেরপুরের অখ্যাত ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথ তলার এক আম্রকাননেই বাংলার সেই অস্তমিত স্বাধীনতার সূর্য আবারও উদিতহচ্ছে। বাংলাদেশের সাড়ে ৭কোটি মানুষ এবং বঙ্গবন্ধুর তরফ থেকে বাংলার বীরেরা তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করছে।

অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানে বিষ্ময়করভাবে কাঠের চৌকি পাতানো মঞ্চে শুরুতেই বাংলাদেশকে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রূপে ঘোষণাকরা হলো। সেদিন কোরআন তেলাওয়াতের জন্য কোনো ইমাম, মুয়াজ্জিনকে পাওয়াযা য়নি। তাই উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা ভিড়ের মধ্যে থেকে মেহেরপুর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র বাকের আলীকেতুলে আনলেন ক্বেরাত পড়তে। তার মিষ্টি ক্বেরাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল অনুষ্ঠান। অবশ্য এই ক্বেরাত পড়ার জন্য পাক হানাদাররা পরবর্তীতে তার গায়ে গুড় মাখিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে শরীরে পিঁপড়ার বাসা ঢেলে দিয়েছিল। সেদিন বাকেরের শরীরে ফুলে থাকা বিষাক্ত পিঁপড়ার কমড় হয়তো পাকিস্তানের নিশ্চিত মৃত্যুর আগে বাঙালিকে দেয়া মরণ কামড়ের প্রতীক হয়ে ভেসেছিল।

বীরত্বের সাথে দেশি, ভারতীয় ওবিদেশি ৫০ জন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রূপে ঘোষণা করা হয়।এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর দীর্ঘ ভাষণের একটি চুম্বক অংশে বলেন, “পাকিস্তান আজ মৃত এবং অসংখ্য আদম সন্তানের লাশের তলায় তার কবর রচিত হয়েছে”[iv] আর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাঁর ভাষণের শুরুতেই বলেন, “আজ এই আম্রকাননে, একটি জাতি জন্ম নিল”[v]

প্রথম মহাযুদ্ধের পর জার্মানির ওয়াইমার রিপাবলিকের কথা আমরা জানি যা সংকটকালীন অস্থায়ী সরকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসিবাহিনী ফ্রান্স দখল করে নিলে জেনারেল দ্যগল লন্ডনে যেভাবে ফ্রান্সের প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন, অনেকটা সেভাবেই বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার আদর্শের অনুসারীরা কলকাতার আট নম্বর থিয়েটার রোডে স্বাধীন বাংলাদেশের এই অস্থায়ী সরকার গঠন করেছিলেন। এই সরকারের সঙ্গে কম্বোডিয়ার প্রিন্স নরোদম সিহানুকের গঠিত সরকারের তুলনা করা যায়, যার সদর দফতর দীর্ঘকাল চীনের বেইজিংয়ে ছিল; কোনো কোনো সময়ে থাইল্যান্ডেও ছিল। অন্যদিকে সরকার কাঠামোর বিচারে মুজিবনগর সরকার ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। ৭০ এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ট দলের নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। সরকারে বঙ্গবন্ধুর পরই উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্থান নির্ধারণ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নাম নয়। সুতরাং রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয় কারণ মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকারে নীতি নির্ধারণমূলক সিদ্ধান্তসমূহ সংসদের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু যুদ্ধকালীন সময়ে সংসদ সহজে আহ্বান করা সম্ভব ছিল না। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি সংসদকে না ডেকেও শুধু মন্ত্রীসভার অনুমোদন নিয়ে যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাই স্বল্পতম সময়ে অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতির হাতে নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করা হয়। তবে উপ-রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেন ।

মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের ত্যাগঃ  মানুষের জন্মের সময় তার মায়ের প্রসব বেদনা হয়। একইভাবে একটি জাতির জন্মবা একটি দেশের জন্মের প্রসব বেদনাও কোনো অংশে কম নয়। বরং কখনো কখনো তারচেয়েও বেশি।পশ্চিমপাকিস্তানের দীর্ঘ ২৪ বছরের শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, নীপিড়ন এবং বাংলাভাষার অধিকার হরণের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বীর বাঙ্গালিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল। যার রূপকার ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তাই “পশ্চিম পাকিস্তানের ২৪ বছরে শাসন শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন- সন্তানজন্মকালে মায়ের প্রসব যন্ত্রণা থেকে অনেক অনেক গুণ বেশি”।[vi]         
কথাগুলোএজন্য গুরুত্বপূর্ণ যে,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমানবিক বোমা, অন্যান্য রাসায়নিক অস্ত্রসহ আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র প্রয়োগ করেও যেখানে সারা বিশ্বে ৭২ মাসে মারা গেছে ৫০- ৫৬ মিলিয়ন বেসামরিক (civilian) মানুষ[vii] সেখানে পাকিস্তানি হায়েনারা মাত্র ৯ মাসেই প্রাণে মেরেছে ৩০ লক্ষবাঙালি। সেসময় প্রায়এক কোটি মানুষ মাতৃভূমি ছেড়ে শরনার্থী হয়েছে পার্শবর্তী দেশে। কাজেই বাংলাদেশের জন্ম, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন পৃথিবীর মানচিত্রে সবচেয়ে ট্রাজেডির, সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষরণের এবং অনেক বেশি আত্মাহুতির ও ত্যাগের।আমরা অনেক ‘দাম দিয়ে কিনেছি আমাদের এই বাংলা’।

মুজিবনগর সরকারের ভুমিকা ও গুরুত্বঃ  মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা ও বিজয় অর্জনে মুজিবনগর সরকারের  ভুমিকা চিরঅম্লান এবং ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।কেননা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনীর সংগঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অসামান্য। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, জয় বাংলা পত্রিকা, সরকারের পক্ষে বিভিন্ন পোস্টার, লিফলেট ও প্রামাণ্য চিত্র তৈরি প্রভৃতি বিষয়গুলো মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে রূপ দিয়েছে। “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধে দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসাবে কাজ করে”।[ix] এ মন্ত্রণালয়ের আর্ট ও ডিজাইনার হিসেবে কামরুল হাসান বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রং ও মাপ নির্ধারণ করেন এবং এটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। আমাদের বর্তমান পতাকাও সেটিই। তাঁর অংকিত ইয়াহিয়া খানের ব্যঙ্গচিত্র ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে-এর মাধ্যমে ইয়াহিয়ার প্রতি মুক্তিকামী মানুষের আক্রোশকে ফুটিয়ে তোলা হয়।

জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এই সরকার ছিল সম্পূর্ণ বৈধ একটি সরকার-যা না হলে জনগণ যতই প্রশংসা করুক না কেন আমরা আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী অথবা বিদ্রোহী হয়ে পড়তাম। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, কূটনৈতিক তৎপরতা, গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা, শরণার্থী সমস্যা সমাধানের জন্য সে সময় মুজিবনগর সরকার গঠন ছিল যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত। এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ প্রবল যুদ্ধে রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়।

১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে চারশ’ চৌষট্টি শব্দে রচিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী। স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্রটিই হলো “স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান আইনি দলিল-যা আমাদের সংবিধান এবং সরকার গঠনের মূল ভিত্তি। প্রজাতন্ত্রের সূচনালগ্নে এই ঘোষণাপত্রটি রাজনৈতিক বৈধতার শক্ত ভিত হিসেবে কাজ করেছে”[x]

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সুদূরপ্রসারী তাৎপর্যের জন্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তার গৌরব বহন করে যাবে। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র উদ্ভবের প্রেক্ষাপট, পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর সীমাহীন নিপীড়ন-নির্যাতন-বঞ্চনা, অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বৈষম্য এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির বীরত্ব অভিব্যক্ত হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে। ঘোষণাপত্রে গণপ্রজাতন্ত্রের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’-এই তিনটি বিশেষ শব্দ চয়ন করা হয়, যাকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে থাকি। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশের জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ঘোষণাপত্র তথা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ। স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হয়েছে সেই ১৯৭১ সালেই । কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও বাংলাদেশের জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার ও গণতন্ত্র নিশ্চিত হয়েছে কি?

উপসংহারঃ তবু এটা স্বীকৃত ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জীবনে একটি শ্রেষ্ঠ ঘটনা। ১৯৪৮ সালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীসত্তার উন্মেষ ঘটে এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিজয়ের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতি তার চূড়ান্ত পরিণতি পায়। বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, আধুনিক, গণতান্ত্রিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ও ’70 এর দশকের তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা মুছে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার স্বপ্ন এখন আমাদের সামনে। আর এই দিনবদলের সংগ্রামের পথ চলায় বাঙালি জাতিকে মশালের মত পথ দেখাবে এপ্রিল ১৯৭১এর ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের সংগ্রামী স্মৃতি ।

[i]    হাসান হাফিজুর রহমান (সম্পাঃ), বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র, ৩য় খণ্ড (ঢাকাঃ তথ্য মন্ত্রণালয়, গণ. প্রজা. বাং. সরকার,১৯৮২)পৃষ্ঠাঃ ১।

[ii]   সিদ্দিক সালিক, Witness to Surrender(ঢাকা: দ্যা ইউনিভার্সিটি প্রেস লি,১৯৯৭), পৃ ৭৫,

[iii]  শারমিন আহমদ, তাজউদ্দীন আহমদঃ নেতা ও পিতা (ঢাকা:ঐতিহ্য প্রকাশনী, ২০১৪) পৃষ্ঠা ৫৩।

[iv]ড. এ কে এম রিয়াজুল আহসান, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা, দৈনিক শ্যামল বাংলা,১৭এপ্রিল,২০১৮

[v] প্রাগুক্ত।

[vi] মোতাহার হোসেন, দৈনিক আজকালের খবর, ‘মুজিবনগর সরকার ও স্বাধীনতা’,১৪ এপ্রিল, ২০১৯।

[vii] Wikipedia, the Free Encyclopedia.

[ix]মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, মুজিবনগর সরকার ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (ঢাকা: বাংলা একাডেমী,২০০৮) পৃঃ ২১৭

[x] বাহালুল মজনুন চুন্নু (সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকার’,

প্রতিদিনের সংবাদ, ঢাকা, ১৪ এপ্রিল ২০১৯।

( প্রবন্ধটি ১৭ এপ্রিল ২০১৯ মুজিবনগর দিবসে নেত্রকোণা সরকারি কলেজ, নেত্রকোণায় আয়োজিত সেমিনারে পঠিত)’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।