নববর্ষের আনন্দ থেকে বঞ্চিত মদনের কৃষকরা

ফয়েজ আহম্মদ হৃদয়, মদন থেকে: হাওরাঞ্চলে নতুন ফসল ঘরে তুলার মধ্যে দিয়েই কৃষক পরিবার ও ব্যবসায়ীদের হালখাতায় শুরু হয় নববর্ষের আনন্দ। প্রতি বছর এই দিনটি আসলেই কৃষকের ঘরে ঘরে নতুন ধানের পিঠা, পায়েস অন্যান্য রসালো খাদ্যের আনন্দ উপভোগ করত পরিবারের সদস্যরা। ব্যবসায়ীরা সারা বছরের হিসেব হালখাতার মাধ্যেমে শেষ করতেন এই দিনে। ৭ দিন ব্যাপি চলত বৈশাখী মেলা।শিশু, কিশোর ও বিভিন্ন বয়সী লোকেরা সারাদিন মেলায় ঘুরাফেরা করে নতুন জামা-কাপড়, খেলনা,খাদ্যদ্রব্য কেনা-কাটা করত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাত ব্যাপি বাউল আসর মেলায় ভিন্ন বিনোদনের যোগান দিত। সবাই বছরটিকে আনন্দের সাথে বরণ করে নিত। এ বছর রোববার সকালে উপজেলা প্রসাশনের উদ্যেগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। ঢিলে ঢালে ভাবে দুই-এক স্থানে বৈশাখী মেলা হয়েছে।

কিন্তু এ বছর বোরো ফসল ব্রি ধান-২৮ এ চিটা হওয়ায় নেত্রকোনা মদনের কৃষক ও ব্যবসায়ী পরিবারে আনন্দ নেই শুধু আছে হাহাকার। কৃষক মাঠের ফসল কাটাতে পড়েছে বিপাকে। বোরো ধান চিটা হয়ে যাওয়ায় মাড়াই ভাগে ধান না কেটে টাকা দিয়ে জমির ফসল কাটতে চায় বহিরাগত শ্রমিকরা। এতে ৭/৮শ টাকায় ১০ শতাংশ জমির ধান কাটাতে কৃষকের উৎপাদিত সম্পূর্ণ ধান বিক্রি করেও শ্রমিকের এ মূল্য পাওয়া যাবে না। ফলে কৃষকরা নারাজ থাকায় বহিরাগত শ্রমিকরা এ এলাকা ছেড়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছে। কৃষকরা মাঠের ফসল নিয়ে পড়েছে খুবই বিপাকে। বর্তমানে উপজেলার ফতেপুর,তিয়শ্রী,মাঘান,গোবিন্দশ্রী ও মদন ইউনিয়নের কৃষক পরিবারে চলছে চরম ধাদ্যভাব ও ঋণের যন্ত্রনা। হাওরাঞ্চলে কোথাও নেই নববর্ষের আনন্দ।
এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ফতেপুর গ্রামের হারেছ উদ্দিন তালুকদার, ইঞ্জিল খান, আব্দুল জব্বার, লতি মিয়া, বালালী গ্রামের সিপন মিয়া, রোকন ,ফারুক মাঘান গ্রামের রবিউল, জাহের উদ্দিন,গোবিন্দশ্রী গ্রামের রুকন, শাকিল, জাবেদ মিয়া জানান, এ বছর বর্ষার পানি আগে চলে যাওয়ায় ঋণ নিয়ে আগাম বীজতলা ও ধান রোপন করি। এর মধ্যে রাতে কুয়াশা পড়ায় ধানের শীষ শক্ত না হয়ে চিটা হয়ে যাওয়ায় আমরা খুবই দূরাবস্থায় আছি। শ্রমিকের মজুরীর তুলনায় উৎপাদিত ধানের মূল্য কম হওয়ায় অধিকাংশ জমির ধান জমিতেই থাকবে। সারা বছর কি খাব? কি দিয়ে হবে সন্তানদের বরণ-পোষণ? কিভাবে করব ঋণ শোধ? এমন দুশ্চিন্তার অন্ত নেই আমাদের মতো কৃষক পরিবারে। আমরা সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করি।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম আকন্দ বোরো ধানে চিটা হওয়ায় এ উপজেলার কৃষকরা নববর্ষের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়ার সত্যতা স্বাীকার করে বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকরা খুবই দুরাবস্থায় আছে। এদের পূর্ণবাসনের জন্য সরকার কর্তৃক সম্ভাব্য সব ধরণের সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্থক্ষেপ কামনা করি।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।