
বিশেষ প্রতিনিধি: ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হতে পাওনাদার ব্যবসায়ী স্বপন মিয়াকে (৪৫) চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে পাওনাদার। হত্যা করে নিহতের লাশ সড়কের পাশে অর্ধেক মাটিচাপা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে গ্রেপ্তার হওয়া ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও তাঁর দুই সহযোগী এমন বর্ণনা দিয়েছেন নেত্রকোণার একটি আদালতে। আদালতের বিচারক ছিলেন জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারিন ফারজানা।
নিহত ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া পৌর শহরের কুরপাড় এলাকার নিজ বাসায় থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার আইলউড়া গ্রামে। তিনি শহরের নাগড়া মাইক্রোস্টেশন এলাকায় তাজ গ্লাস হাউজের মালিক ছিলেন। গত সোমবার বেলা ১১ টার দিকে নেত্রকোণা মডেল থানা পুলিশ সদর উপজেলার কারলি বালিজুরি এলাকার সড়কের পাশ থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করে।
এদিকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও তার দুই সহযোগীকে ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গত সোমবার গভীর রাতে পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন, সদরে রৌহা মড়লবাড়ি গ্রামের মো. মোসলেম উদ্দিনের ছেলে হোটেল ব্যবস্থাপক মো. আরিফুল ইসলাম (৩৫), তাঁর সহযোগী একই এলাকায় অজ্ঞানপার্টির সদস্য মো. জালাল উদ্দিন (৫০) ও ও ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার অচিন্তপুর গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে গার্মেন্টস কর্মচারী মো. জাহিদ মিয়া (৩২)।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, স্বপন মিয়া গত রোববার সকালে বাসা থেকে খাবার খেয়ে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট দিতে বের হন। এর পর দুপুরে তাঁর কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে শহরের ফিরে আসেন। কিন্তু বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাঁর পরিবারের লোকজন জরুরি প্রয়োজনে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি। এর পর দীর্ঘ সময় ধরে আত্মীয়-স্বজনরা ফোনে চেষ্টা করলেও সাড়া দেননি। বিয়য়টি সন্দেহ হলে ওই দিন রাতে থানা পুলিশকে জানানো হয়। গত সোমবার সকালে সদরের কারলি বালিজুরি এলাকার সড়কের পাশ থেকে পুলিশ তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে। ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ওই দিন রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে তিনজনকে আটক করে।
পুলিশের দাবি, আটক হওয়া ওই তিন ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আদালতে তাঁরা ১৬৪ দ্বারা জবানবন্ধী দিয়েছেন।
নেত্রকোণা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহান উদ্দিন খান জানান, ‘আদালতের জবানবন্ধীতে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আরিফুল ইসলাম ওরফে রুবেল ব্যবসায়ী স্বপন মিয়ার কাছ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। ওই টাকা ফেরৎ পেতে সম্প্রতি আরিফুলকে তাগদা দিচ্ছিলেন স্বপন। গত রোববার বিকেলে পাওনা টাকার মধ্যে ১ লাখ টাকা পরিশোধ করার কথা বলে স্বপনকে প্রথমে হিরণপুর বাজারের একটি ঘরে ডেকে নিয়ে যান আরিফুল। সেখানে পরিকল্পিতভাবে জালাল ও জাহিদের সহযোগিতায় জুসের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়। তখন তাদের সঙ্গে আরও দুজন সহযোগী ছিলেন। স্বপন অচেতন হয়ে পড়লে তাকে একটি সিএনজিতে নিয়ে বিভিন্ন স্থান ঘুরে রাতে কারলি বালিজুরি এলাকায় একটি সড়কের পাশে যান। এরপর অচেতন স্বপনকে গলায় রশি প্যাচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁরা স্বপনের নাক-মুখ, গলাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করেন। এতে স্বপন মিয়া মারা গেলে লাশ গুম করতে মাটিচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায়। ওসি আরো জানান, হত্যায় অন্য দুই আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’