অতিরিক্ত পড়ার চাপে ঘর ছাড়ছে শিশুরা : ৪ শিশু উদ্ধার

বিশেষ প্রতিনিধি: সম্প্রতি নেত্রকোণা শহরে একদিনের ব্যবধানে ১১ দিন বয়সের শিশুসহ স্কুলের প্রাথমিক শাখায় পড়ুয়া চার শিশু নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। তবে এ বিষয়গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপহরণের খবর হিসেবে ছড়িয়ে পড়লে জেলাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। প্রত্যেক মা-বাবা থাকেন সন্তানদের নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ও আতঙ্কে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে সর্বশেষ নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে ১১ দিন বয়সের নিখোঁজ এক শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ।
নেত্রকোণা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দিন খান জানান, শিশুটি অপহরণ হয়নি। শিশুর বাবা কাশেম ও খালা ঝর্ণার যোগসাজশে লুকিয়ে থানায় জিডি করেন। অথচ তারা ঢাকায় জান্নাতুল বেগম নামের এক আত্মীয় কাছে শিশুটিকে পাঠিয়ে দেন। ওসি বলেন, শিশু উদ্ধারের জন্য পুলিশের তৎপরতা দেখে নিজেদের ভেতরে ভীতি সৃষ্টি হলে শিশুকে ব্যাগ করে বৃহস্পতিবার (আটাশ ফেব্রুয়ারী) সকালে হাসপাতালে রেখে যেতে আসেন। এসময় শিশুর বাবা কাশেম, খালা ঝর্ণা ও সহযোগী শিউলী আক্তারকে আটক করে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এরআগে (সাতাশ ফেব্রুয়ারী) বুধবার দিনগত মধ্যরাতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সামিউল আলম ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নাফিজ তানভীর নাফিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার করে। সামিউল নেত্রকোণা শহরের সাতপাই পশ্চিমপাড়ার মৃত আব্দুল্লাহ্র ছেলে এবং নাফিজ মোক্তারপাড়া মসজিদ কোয়াটার এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে। অপরদিকে একই দিনগত রাত ৮টার দিকে নেত্রকোণা শহরের সাতপাই স্টেশন থেকে ক্রিয়েশান কিন্ডারগার্টেনের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রিফাত হাসান জয়কে উদ্ধার করা হয়েছে। জয় জেলা শহরের কাটলি এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে।
নেত্রকোণা জেলা সূজনের সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল জানান, শিক্ষার্থীদের পড়ার চাপে শৈশব নষ্ট হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে,শিক্ষক অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। মা-বাবাকে অবশ্যই শিশুদের শৈশব উপভোগ করতে দিতে হবে। পড়াশুনার নামে শিশুদের অধিকার হরণ করা চলবে না। তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) এসএম আশরাফুল আলম জানান, অভিভাবকরা চিন্তা করেন শিশুদের বড় অফিসার বানাতে হবে।অনেক ভালো পড়াশুনা করাতে হবে। শিশুদেরও যে একটা শৈশব আছে, নিজস্ব জগত আছে এটা ভুলে গেলে হবেনা। ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন থেকে রাত পর্যন্ত ভিন্ন সময়ের মধ্যে শিশু নিখোঁজের ঘটনাগুলো ঘটে। এগুলো নিয়ে নেত্রকোণা মডেল থানায় পৃথক পৃথক সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে। পরবর্তীতে খবরগুলো জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশু অপহরণের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু উদ্ধারের পর স্কুল পড়ুয়া শিশুরা জানায়, বিদ্যালয়-প্রাইভেটে অতিরিক্ত পড়ার চাপ ও মা-বাবার বকুনিতে ঘর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা অজানার উদ্দেশ্য বেরিয়েছিল।

নেত্রকোণা জেলা পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী প্রত্যেক শিশুদের বাবা-মাকে তাদের সন্তানের প্রতি যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, অতিরিক্ত কোনো কিছু কারও জন্য মঙ্গল ডেকে আনে না। এ ঘটনাগুলো থেকে সবাইকে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।