
সঞ্জয় সরকার: মুক্তিযোদ্ধা ও সাতারু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য আমার দাদা শ্বশুর। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে টানা ৬১ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার নদী পথ সাতড়িয়ে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। এর আগেও একাধিকবার সাতাড়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ১৮৫ কিলোমিটার নদী পথ পাড়ি দেয়ার সময় তাকে নিয়ে কথা হচ্ছিল বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক তপন দা’র (ড. তপন বাগচী) সঙ্গে। আমার দাদা শ্বশুর জানার পর তিনি একুশে পদকের একটি ফরম পাঠিয়ে দিয়ে বললেন, ’তোমার দাদা শ্বশুরের জন্য আবেদন করে দেখতে পারো’। বিষয়টি আমি অতি গুরুত্বের সঙ্গে নিলাম। স্ত্রী পিয়া বৈশ্যকে নিয়ে হাজির হলাম দাদা শ্বশুরের কাছে। তখন তিনি মদনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দাদুকে একুশে পদকের প্রস্তাব পাঠানোর কথা বললাম। খুব একটা আগ্রহ দেখালেন না তিনি। বললেন, ‘ওসব আমার হবে না। তুমি যদি পাঠাতে চাও- তবে পাঠাও’। এসব নিয়ে কিছুটা অভিমান ছিল তার। তবুও রাজি করালাম তাকে। আমি তার সাঁতারের দীর্ঘ ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষাজীবন ও পারিবারিক জীবনের বিস্তারিত লিখে আনলাম। এরপর একুশে পদকের ফরমটা পূরণ করে একটা বিশাল প্রোফাইল তৈরি করে নিয়ে গেলাম নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক জনাব মঈনউল ইসলামের কাছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় বিষয়টা অতি গুরুত্বের সঙ্গে নিলেন। তিনি প্রস্তাব করে প্রোফাইলটি মন্ত্রনালয়ে পাঠালেন।
আজ ৬ ফেব্রুয়ারি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয় একুশে পদক প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করলো। ২১ জনের তালিকায় আমার দাদা শ্বশুর ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের নামটিও আছে। আমার ইচ্ছা ছিল তিনি যেন সাতারু হিসেবে পদক পান। কিন্তু তাকে দেয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। সাতারুর চেয়ে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়টি আরো অনেক বড় এবং গর্বের। এ যেন আমাদের আকাঙ্ক্ষার চেয়েও বেশি কিছু প্রাপ্তি। খবরটি শোনার পর থেকে বেশ আনন্দে আছি। মাননীয় জেলা প্রশাসক জনাব মঈনউল ইসলাম এবং বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক তপন দাকেও (ড. তপন বাগচী) ফোন করে কৃতজ্ঞতা জানালাম। তারাও আমাকে ধন্যবাদ জানালেন। প্রক্রিয়াটির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকতে পেরে আমি যারপরনাই গর্বিত ও আনন্দিত। সাফল্যের তৃপ্তিতে বুকটা ভরে গেছে আমার। দাদা শ্বশুর নিজেও অভিনন্দন জানিয়েছেন- জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং আমাকে। সত্যিই খুব ভাল লাগছে আমার।
এর আগে একুশে পদক প্রাপ্ত (মরণোত্তর) সু-সাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরীর প্রোফাইলটিও আমি রেডি করে দিয়েছিলাম। সুপারিশ করেছিলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় যতীন সরকার। আর প্রস্তাব করে পাঠিয়েছিলেন তখনকার জেলা প্রশাসক জনাব ড. মুশফিকুর রহমান।
উল্লেখ্য, সাতারু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের বাড়ি নেত্রকোনার মদনের জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে। নেত্রকোনায় একুশে পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় আরো একটি নাম যুক্ত হলো আমাদের। দাদু, আপনাকে অভিনন্দন!