
বিশেষ প্রতিনিধি: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরুকে তাঁর নিজ জেলা নেত্রকোণায় জাকজমকপূর্ণ সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। সাংসদ হিসেবে শপথ ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর বুধবার প্রথম তিনি নিজ এলাকায় এলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন সংগঠন তাঁকে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।
মো. আশরাফ আলী খান খসরু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোণা-২ (সদর ও বারহাট্টা) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮৭ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন। তিনি নবম সংসদ নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী থেকে ৮৬ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে প্রথমবার নির্বাচিত হন। টানা দুই বারের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরু মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নম্বর সেক্টরের টাইগার কোম্পানির প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে নেত্রকোণার বিভিন্ন রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেন। তাঁর প্রয়াত পিতা এনআই খান মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
মন্ত্রী বুধবার সকাল ১০টার দিকে নেত্রকোণা-ময়মনসিংহ সড়কের শ্যামগঞ্জ বাজার এলাকায় আসার পর নেতা-কর্মীরা তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিতে থাকেন।
মন্ত্রী গাড়িবহন নিয়ে ওই সড়কের পাশে বাগড়া মাদ্রাসায় এলে তাঁকে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। পরে চল্লিশা এলাকায় মন্ত্রী তাঁর মায়ের নামে গড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘হেনা ইসলাম কলেজে’ এলে তাঁকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সংবর্ধনা প্রদান করেন। এর পর কলেজ মাঠে চল্লিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। এতে নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার ফকিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় মন্ত্রী তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। সেখান থেকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নেত্রকোণা সার্কিট হাউজে যান। সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন মন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এর পরে মন্ত্রী মদনপুরে হযরত শাহ সুলতান কমরউদ্দিন রুমীর মাজার জিয়ারত করেন। সেখান থেকে বিকেল তিনটার দিকে শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় পুরাতন কালেক্টরাল প্রাঙ্গণে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতিয়র রহমান খানের সভাপতিত্বে এবং যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো. নজরুল ইসলাম খান ও শ্রমবিষয়ক সম্পাদক গাজী মোজাম্মেল হোসেনের যৌথ সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার নুরুল আমীন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক তফসীর উদ্দিন খান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার রায়, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ খান পাঠান, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা রহমান খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মারুফ হাসান খান প্রমুখ।
মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেবে সরকার। নেত্রকোণা হাওরাঞ্চল। এখানে ছোট-বড় ১৩৪টি হাওর রয়েছে । এ জেলায় মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া মন্ত্রী মানুষের কল্যাণের স্বার্থে সততা ও আস্থার সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মী ও সরকারি-কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজ করার নির্দেশ দেন। বক্তব্যের এক পযায়ে তিনি বলেন, আমি এত সংবর্ধনা চাই না। সেজন্য আমি পথে পথে তোরণ নির্মাণ করতে ও মোটরসাইকেল, গাড়িবহ নিয়ে শোডাউন করতে নিষেধ করেছি। আমি তো আপনাদেরই লোক। আপনারা আমাকে ভালোবাসেন তা আমি জানি। এর প্রমাণ হিসেবে আপনারা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দিয়েছেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীতিকে ভোট দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকের যে গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন দোয়া করবেন আমি যেন সততা ও স্বচ্ছভাবে সে দায়িত্ব পালন করতে পারি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে তরুণ সমাজের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আমাদের এই তরুণ সমাজই দেশকে বদলে দিচ্ছে। শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ আজ ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কাছ থেকে এখন বিশ্বের অন্য দেশ শিক্ষা নিচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়াতেও তিনি উপদেশ দেন। সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত নেত্রকোণা গড়তে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।’
সন্ধ্যায় পিতা-মাতার কবর জিয়ারত শেষে মোক্তারপাড়ায় মিতালী ক্লাবের ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন। রাত সাড়ে সাতটার দিকে জেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সভাপতি (পদাধিকার বলে) জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে মন্ত্রী নেত্রকোণা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এর পর সরকারি কলেজে মতবিনিময়, জেলা প্রশাসকের কাযালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়, সদরের মৌগাতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সংবর্ধনা শেষে রাত নয়টার দিকে মোক্তারপাড়া এলাকায় পৌর কাযালয়ের সামনে বন্ধুসভার আড্ডায় যোগদান করার কথা রয়েছে।