হাওরাঞ্চলে ফসল রক্ষাবাঁধ সংস্কার শুরু হয়নি : দুশ্চিন্তায় চাষিরা

পল্লব চক্রবর্তী: নেত্রকোণায় হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কারের কাজ এখনো শুরু হয়নি। কাজের নির্ধারিত সময়ের এক মাস চলে গেলেও এখনো প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়নি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ কাজ না করলে আগাম বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে হাওরাঞ্চলের অসংখ্য বেড়ি বাঁধ।

নীতিমালা অনুযায়ী, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ ১৫ ডিসেম্বর শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। তার আগে অবশ্যই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন এবং ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণের কাজ চূড়ান্ত করতে হবে।

জানতে চাইলে নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, ‘স্থানীয়ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে পিআইসি কমিটি গঠন করা হয়। এর পর জেলা কমিটিতে পাঠিয়ে জেলা প্রশাসকের অধীনে পিআইসি অনুমোদন করা হয়। এবার কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। তবে সবাই মিলেই চেষ্টা করছি দ্রুত কাজ শুরু এবং সময়মতো শেষ করতে। দুই-তিন দিনের মধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এর মধ্যে মদনে কমিটি গঠন হয়েছে। দু এক দিনের মধ্যে ত্রিয়শ্রীতে দেড় কিলোমিটার বাঁধের কাজ শুরু হবে।’
নেত্রকোণা পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণার খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ, মদন ও কলমাকান্দা উপজেলার হাওড়াঞ্চলে ২৭১ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধ রয়েছে। ওই বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের ৪১ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমির রোরো ফসল নির্ভর করে। খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ ও মদন উপজেলা মূলত হাওর এলাকা। জেলায় ছোট বড় মোট ১৩৪ টি হাওর রয়েছে। এর মধ্যে খালিয়াজুরিতে ৮৯টি হাওর। জেলা পাউবো সূত্র বলছে, এবার জেলায় ৯৯টি প্রকল্পের জন্য ১৯ কোটি ৯৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। গত বছরে জেলায় মোট বরাদ্দ ছিল প্রায় ১৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে এবার চার ভাগের এক ভাগ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলছেন, ‘যে টাকা পাওয়া গেছে তা দিয়ে আগে কাজ শুরু করা যাক। পরে কাজের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ বাড়তে পারে। বরাদ্দ হওয়া টাকাগুলো পিআইসি উপজেলা কমিটির সভাপতির হিসাব নম্বরে দু-এক দিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দেয়া হবে।’

সূত্র আরো জানায়, নেত্রকোণায় ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ আগে ঠিকাদার এবং পিআইসি দিয়ে করানো হতো। ২০১৭ সালের এপ্রিলে ব্যাপক ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বাঁধের কাজের নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করে। গত বছর থেকে ঠিকাদারি প্রথা বাদ দিয়েসব কাজ সুবিধাভোগী ও স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে গঠিত পিআইসির মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। আর বাঁধের কাজে সরাসরি যুক্ত জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক জেলা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা কমিটির প্রধান। পিআইসি গঠন করবে উপজেলা কমিটি। তাঁরা জেলা কমিটিতে পাঠিয়ে পিআইসি অনুমোদন করে নেবে। একটি পিআইসি একটি প্রকল্পের কাজ করবে। এ দিকে পিআইসি গঠন ও বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু না হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের ভাবিয়ে তুলছে। কারণ দেরিতে কাজ করা হলে বাঁধ মজবুত হবে না। আর ভারী বৃষ্টিপাত ও আগাম বন্যা হলে পানিতে বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষকদের বোর ফসলই একমাত্র সম্বল। এই ফসলের ওপরই নির্ভর করে কৃষকদের সারা বছরের সংসার খরচ, চিকিৎসা, আচার-অনুষ্টান ও সন্তানদের পড়ালেখা।
খালিয়াজুরীর পুরানহাটি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, ‘গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাঁধে মাটি কাটার কাজ প্রায় ২০ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল। এবার শুনতেছি এখনো পিআইসিই গঠন হয়নি। এতে করে আমরা চিন্তিত। দেরিতে হলে কাদা মাটি দিয়ে বাঁধ সংস্কার করা হবে। এতে তেমন একটা লাভ হবেনা।কাদা মাডির বাঁধ টিকেনা।’
জানতে খালিয়াজুরি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, পিআইসি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করতে কিছুটা দেরি হলেও দেড় দুই মাসের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে।’

জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, সাতচল্লিশ কোটি টাকা ব্যয়ে মোহনগঞ্জের চর হাইজদা প্রকল্পের ফসল রক্ষার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। বাঁধটির কাজ শেষ হলে ডিঙ্গাপোতা হাওর সহ কয়েকটি হাওরের ফসল রক্ষা হবে।বাকি ‘প্রকল্পগুলো দ্রুত গঠন ও বাঁধ সংস্কার কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মদন উপজেলায় প্রকল্প গঠন ও অনুমোদন হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে কাজের উদ্বোধন করা হবে। এ ছাড়া বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে কাবিটার জেলা মনিটরিং কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য কয়েক দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি পাঠানো হবে।’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।