সাড়া ফেলেছে ‘মানবতার দেয়াল’

বিশেষ প্রতিনিধি : ‘আপনার অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যান, প্রয়োজনীয় জিনিস এখান থেকে নিয়া যান’- এমন ব্যতিক্রমধর্মী এক উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেন নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলা সীমান্ত এলাকার এক যুবক জাহাঙ্গীর মাহমুদ। আর ই এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন এলাকাবাসীও।

মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত সীমান্তবর্ন্তী উপজেলা নেত্রকোণার দুর্গাপুর। গারো, হিন্দু, মুসলিম খ্রিষ্টানসহ বেশ কয়েকটি সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে বসবাস এই সীমান্ত এলাকায় । ধর্মের পাশাপাশি এখানে বসবাসরত মানুষের জীবন ধারণের পেশাও ভিন্ন ভিন্ন। পাহাড় ঘেরা জনপদ হওয়ার শীতের প্রকোপ চলে আসে আগে ভাগেই । ফলে শীতের প্রকোপে অসহায় হয়ে পরে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল মানুষজন।

তাই দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল মানুষের সমস্যা কিছুটা লাঘব করতে পনেরো নভেম্বর বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীর মাহমুদ নামের এক উদ্যামী যুবক নেত্রকোণার দুর্গাপুর পৌরসভার শিবগঞ্জ বাজারের মসজিদ মার্কেটের একটি দেয়ালে গড়ে তুলেছেন ‘মানবতার দেয়াল’।

শুরুতে এলাকার কয়েকজনের সহযোগিতায় দেয়ালে রং করে দুইটি হ্যাঙ্গারে পুরোতন কিছু কাপড় ঝুলিয়ে তাঁর চিন্তা চেতনা আত্মপ্রকাশ ঘটায়।

তাঁর এই ব্যতিক্রম উদ্যোগ দেখে দুদিনের মাঝেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীর মাহমুদের এই ‘মানবতার দেয়াল’।
বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন স্থানে খুব দ্রুতই ভাইরাল হচ্ছে ‘মানবতার দেয়াল’। সেই সাথে তাঁর উদ্দ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন এলাকার লোকজন। বাসার অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখন স্থান পাচ্ছে ‘মানবতার দেয়ালে’।

দুর্গাপুর পৌরসভার বাসিদা জাহাঙ্গীর মাহমুদ সম্প্রতি সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী পাস করেছেন। পড়াশুনা শেষে কোনো চাকরিতে না গিয়ে শুরু করেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাবা ইদ্রিস আলী সরকার একাত্তরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সমাজের উন্নয়নের কাজ করে আসছেন। মানবতার দেয়াল ছাড়াও রক্তদান বিষয়ে স্থানীয়ভাবে ‘আমরা ব্লাড ডোনার’ নামের আরো একটি সংগঠনের সাথে আছেন তিনি। বিগত ৪ বছরে প্রায় ২০০ ব্যাগ রক্তের জোগান দেয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

উদ্দ্যোগটির নাম ‘মানবতার দেয়াল’ রাখার কারণ কেন জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর মাহমুদ জানান, আমি বাজার থেকে ব্যাগ তৈরির জন্য পুরান প্যান্ট কিনতে গিয়ে মানুষের ভীড় দেখি। এসময় মাথায় এলো, পুরাতন কাপড় গুলো কিভাবে অন্যদের দেয়া যেতে পারে। ‘আমরা হেলায় বা আলসতার কারণে কাউকে দান করতে পারিনা। আবার কাকে দিব, দিতে গেলে সে নেয় কি না, কাপড়টা দিয়ে তাকে ছোট করা হবে কিনা এরকম বিভিন্ন প্রশ্ন আমাদের মনে আসে।’

কিন্তু যদি এটাকে এমন একটা স্থানের রেখে যায় সেখানে সবাই নিজের মানবতা বোধ থেকে ইচ্ছা মত অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যাবে আবার প্রয়োজনীয় যে কোন জিনিস নিতেও পারবে। এখানে কাউকে কারো মুখোমুখি হতে হবে না। তাই এর নাম রেখেছি ‘মানবতার দেয়াল’।

তিনি আরো জানান, আমার ইচ্ছা এটাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া।
আমাদের আশেপাশের গরীব অসহায় মানুষগুলা যেন কাপড়ের জন্যে বিশেষকরে শীতের কাপড়ের জন্যে কেউ কষ্ট যেন না করে। এই জন্যেই এই উদ্যোগ।
আর এটা খুব সহজেই করা যায়। দরকার শুধু আন্তরিক ইচ্ছা শক্তির।
বাড়তি তেমন কোন ইনভেস্ট লাগে না।
আমার কাছে যে কাপড়টার তেমন কোন মুল্যই নাই, সেই কাপড়টা আমার পাশের একজন গরীব মানুষের অনেক প্রয়োজনীয়।
আমরা হেলায় বা আলসেমি করে কাউকে দান করি না অনেক সময়, দান করা হয়ে উঠে না।
আবার কাকে দিব, দিতে গেলে কি না কি ভাববে কিংবা নিবে কিনা তাকে কাপড়টা সেধে তাকে ছোট করা হবে কিনা, এটাও ভাবার একটা ব্যাপার। কিন্তু আপনি যদি এটাকে “মানবতার দেয়ালে” রেখে যান তাহলে আপনাকে যেমন এসব ব্যাপারের মুখোমুখি হতে হবে না। আবার যার প্রয়োজন সে কিন্তু কোন প্রকার দ্বিধা ছাড়াই তার প্রয়োজনীয় কাপড় বা জুতাটা এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবে কোন প্রকার দ্বিধা ছাড়াই।
আপ্নি দান করার যে আনন্দ সেটা পেলেন, আর গরীব মানুষটাও কোন প্রকার ছোট হওয়া ছাড়া উপকৃত হলো।
মানে দুইটা ব্যাপারই অনেক সুন্দর ভাবেই হয়ে গেল।
‘নেত্রকোণা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং কলমাকান্দা উপজেলার বালুচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম স্যারের কাছ থেকে আমি এ বিষয়ে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এছাড়াও ঢাকায় সামিউল নামে আমার এক চাচা আছেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আমার ভাগ্নী কামরুন্নাহার মুন্নি। এই দুইজন ব্যক্তি আমাকে যথেষ্ট সাহস জুগিয়েছেন ।’ বর্তমানে বিষয়টি বেশ সাড়া ফেলেছে দেখে বিশ ভালো লাগছে। আমি চাই পাড়ায় পাড়ায় এধরণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
দুর্গাপুরের জলসিঁড়ি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা দীপক সরকার বলেন, এ ধরণের উদ্যোগ সমাজের দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। তাঁর এই চিন্তা সমাজের উপকারে আসবে।

 

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।