কেন্দুয়ায় স্কুটি বাইক ব্যবহার করে সময়মতো স্কুলে যাচ্ছেন শিক্ষিকা নেলী

বিশেষ প্রতিনিধি: সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষা করে নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মাদ্রাসার নারী শিক্ষকদের মধ্যে স্কুটি বাইক ব্যবহারকারী প্রথম নারী মেহেরুন্নেছা নেলী । তিনি বিলাসীতার জন্য নয় প্রয়োজনের তাগিদেই স্কুটি বাইক ব্যবহার শুরু করেন । গণপরিবহনের চেয়ে ঝামেলা কম,অর্থ ও সময় সাশ্রয়ের কারণে স্কুটি বাইক চালিয়ে প্রতিদিন কর্ম ক্ষেত্রে যাতায়াত করেন শিক্ষিকা মেহেরুন্নেছা নেলী । স্কুটি ব্যবহারের ফলে সময়মত কর্মস্থলে পৌছা সম্ভব হচ্ছে । স্কুটি ব্যবহার না করলে অপরিচিত লোকজনের সাথে শেয়ার করে যাতাযাত করা খুবই বিব্রতকর । স্কুটি বাইক চালাতে গিয়ে নেতিবাচক অনেক মন্তব্যের সম্মুখীন হলেও তিনি তা পাত্তা দেন না । নারীদের স্কুটি বাইক চালানোকে তিনি দেশের উন্নয়নের অগ্রগতির বার্তা বলে মনে করেন । মেহেরুন্নেছা নেলী কেন্দুয়া উপজেলার কাউরাট গ্রামের হাজী মোঃ ফরিদ হোসেনের কন্যা । তাঁর মায়ের নাম হাজী তাহরিমা খোরশেদ । তাঁর স্বামীর নাম মোঃ আজিজুল ইসলাম । দাম্পত্য জীবনে ২ কন্যা সন্তানের জননী মেহেরুন্নেছা নেলী । কন্যাদ্বয় যথাক্রমে মৃন্ময়ী ও পৌষি ।মৃন্ময়ী ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে । আর মেহেরুন্নেছা নেলী নওপাড়া ইউনিয়নের দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। বাসা থেকে কর্মস্থলে প্রতিদিন ৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় তার । স্কুটি ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে । এসব কথায় তিনি কখনো কান দেননি । তাঁর এক বড় ভাইয়ের ঢাকাতে প্রেসের ব্যবসা রয়েছে । অপর বড় ভাই পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন । মেহেরুন্নেছা নেলী জানান-পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন ভাইয়ের অণুপ্রেরণায় আমি ২০১৫ সালে স্কুটিটি কিনি এবং ব্যবহার শুরু করি । মেহেরুন্নেছা নেলী মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি কেন্দুয়া উপজেলা যুবমহিলীগের উপদেষ্ঠা ও মানবাধিকার নারী সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন । সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করছেন । মেহেরুন্নেছা নেলী আরও বলেন-বাসা থেকে প্রতিদিন কর্মস্থলে যাতায়াত করতে অনেক সময় নষ্ট হতো তার। সেই সঙ্গে গণপরিবহনের ভোগান্তি তো ছিলই। এসব থেকে মুক্তি পেতে ভাইয়ের অনেুপ্রেরণায় কিনে ফেলেন একটি স্কুটি। এরপর থেকে প্রতিদিন নিজের স্কুটি ব্যবহার করে তিনি নিজে যাতায়াত করা শুরু করে দেন । স্কুটি ব্যবহার করতে গিয়ে কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন জানতে চাইলে মেহেরুন্নেছা নেলী বলেন, নিজের সাহসটাই আসল এবং সেটাই প্রথম নিরাপত্তা। অনেকে বিদ্রূপ করতে পারেন, কিন্তু সেগুলোকে গুরুত্ব দিলে চলবে না। আর পরিবার ,স্বামী-সন্তান ও বন্ধুরা পাশে থাকলে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। মেহেরুন্নেছা নেলী নিজেকে একজন মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। নারী-পুরুষ নিয়ে কোনো সামাজিক সংশয় বোধ করেননি বলে জানান। চালকের আসনে বসে নানা রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে বলেও জানালেন মেহেরুন্নেছা নেলী । সুন্দর অভিজ্ঞতাই বেশি। তিক্ততা কিছু থাকলে সামলাতে হয় উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে। নারীবান্ধব পরিবেশের ঘাটতি এবং এ নিয়ে নানা সংশয়ের বিষয়েও সচেতন রয়েছেন মেহেরুন্নেছা নেলী । তিনি জানান, প্রতিদিন নারীরা কর্মস্থলে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েন। অপরিচিত পুরুষ চালকের সঙ্গে চলতে নিরাপত্তার বিষয়টা সবচেয়ে শুরুত্বপূর্ণ। কিছুটা অস্বস্তিও থাকে। আরও নারী যদি স্কুটি বাইক ব্যবহার শুরু করেন ,তাহলেই এটা সর্বজনীন হয়ে উঠবে। মেহেরুন্নেছা নেলীর মতে,মেয়েদের স্কুটি চালানোকে খুব জটিল করে না দেখে অন্যান্য মানুষের মতো সহজ ভাবলেই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে শুরু করবে। এ ক্ষেত্রে পুরুষদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন-তাঁর পাশাপাশি আরও নারী এই স্কুটি বাইক চালানোয় এগিয়ে আসবেন, এটাই আমার কাম্য।’

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।