বাংলাদেশে যোগাযোগ খাতে সাফল্যের নাম পদ্মাসেতু

বিশেষ প্রতিনিধি: যোগাযোগ খাতে বর্তমানে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সমালোচনার মুখে সরকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয় পদ্মা সেতুকে। গত মহাজোট সরকারের তিন বছর পার হওয়ার পর, ২০১১ সালের নভেম্বরে ‘সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়’ (তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়) এর দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার ছিল চরম বিপাকে। দুনিয়া জুড়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের দিকে অভিযোগের তীর ধেয়ে আসতে থাকে। একদিকে মন্ত্রণালয়ের ইমেজ সংকট অন্যদিকে হাতে মাত্র দু’বছর সময়। এমন এক কঠিন বাস্তবতায় দায়িত্ব নিয়ে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কতটা সফল হতে পারবেন তা নিয়ে নিজেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমি শেষ বেলার মন্ত্রী, একটু পরেই গোধূলি’। সেই গোধূলি বেলার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হাত ধরে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। গত মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে পদ্মা সেতুর কাজ যথাসময়ে শেষ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে মাওয়া ও জাজিরা অংশে মোট ৫টি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। মাওয়া অংশে ৬ নম্বর ও ৭ নম্বর পিলার এবং জাজিরা অংশে ৩৬, ৩৭ ও ৩৯ নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। নকশা অনুযায়ী পদ্মাসেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার আর প্রস্থ ২১.১ মিটার। মূল সেতুর পিলার বসবে ৪২টি। সংযোগ সড়ক মোট ১২ কিলোমিটার। মাওয়া অংশে ১.৫ কিলোমিটার ও জাজিরায় ১০.৫ কিলোমিটার। সংযোগ সড়কের সাথে থাকবে টোলপ্লাজা, পুলিশ স্টেশন, পাওয়ার প্লান্টসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। এ প্রকল্পে পরিবেশ ব্যবস্থাপনার আওতায় ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার ২শ’ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও তা দূর হয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সভায় পদ্মা সেতুতে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আরেক স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। প্রকল্পটি ২০২২ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ সমাপ্ত করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পটি চারটি সেকশনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত আড়াই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করে ২০১৮ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দিন থেকে রেল চালুর পরিকল্পনা করছে সরকার। নতুন রুটটি হবে ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া হয়ে মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে রেলওয়ের জন্য এটি সবচেয়ে বড় প্রকল্প।

এছাড়া যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশাপাশি পৃথক রেল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে বর্তমান সরকারের। এজন্য প্রাথমিক যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরই এই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।