
অর্থনীতি ডেস্ক:মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সরকারের সুশাসনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্রমাগত প্রচেষ্টায় দেশ ক্রমেই পৌঁছে যাচ্ছে অভিষ্ট লক্ষ্যে। সঠিক নেতৃত্ব, দেশের প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের দায়বদ্ধতার কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতির উদীয়মান সূর্য। দিন বদলের স্বপ্ন নিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশীয় উৎপাদন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে অতীতের যেকোন সরকারকে টপকে গেছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বিশ্ববাসী আজ বিস্মিত। দেশের সার্বিক উন্নয়ন, জিডিপি বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র অর্জনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের পার্থক্য খেয়াল করলে বোঝা যাবে, কোন দল দেশের জিডিপি বৃদ্ধি, উন্নয়ন, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে নিরলসভাবে।
গত ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বিএনপি সরকারের সময়ে প্রতিবছর গড়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ হারে। বিএনপি সরকারের শেষ শাসনামলে অর্থাৎ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৫.৪ শতাংশ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশের বার্ষিক উৎপাদন বা জিডিপির আকার ছিল চার লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগের আমলে এটি পাঁচ গুণেরও বেশি বেড়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হয়েছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৭ কোটি টাকায়। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে খাদ্য উৎপাদন ১ কোটি ৮০ লাখ টন থেকে ২ কোটি ৬৯ লাখ টনে উন্নীত করা হয়েছিল। যা ছিল দেশের চাহিদার চেয়ে ২৯ লক্ষ মেট্রিক টন বেশি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ৫ বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্ত ভিত্তির উপরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। প্রবৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশে উন্নীত এবং মুদ্রাস্ফীতি ১.৪৯ শতাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। এরপরে ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ শতাংশ হারে। ২০০৯ থেকে ওই সময়ে প্রতিবছর গড়ে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নেয়ার সময় ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে মূল্যষ্ফীতি ছিল ১২.৩ শতাংশে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৮৪ শতাংশে। বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৭ সালের শেষে দারিদ্র্য প্রায় অর্ধেক কমে এখন এই হার দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশে। বিএনপি সরকারের শেষ বছর ২০০৫-২০০৬ সালে দেশে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ ডলার। সেটা প্রায় তিন গুণ বেড়ে এখন হয়েছে ১ হাজার ৬১০ ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশের বার্ষিক উৎপাদন বা জিডিপির আকার ছিল চার লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগের আমলে এটি পাঁচ গুণেরও বেশি বেড়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দাঁড়িয়ে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৭ কোটি টাকায়। বিএনপি আমলের চেয়ে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে চার গুণ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ০.৭৪৪ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগ আমলে চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার হয়েছে প্রায় সাত গুণ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রায় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বিএনপির শেষ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির তুলনায় বর্তমান অর্থবছরে এটি বেড়েছে আট গুণেরও বেশি। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ১৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় এক লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক থেকে দুই আমলের পার্থক্য আরও বেশি। বিএনপির শাসনামলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ছিল ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা প্রায় ১০ গুণ বেড়ে হয়েছে ৩৩.৪৪ বিলিয়ন ডলার।
দুই সরকারের আমলে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সের পার্থক্য প্রায় নয় বিলিয়ন ডলার। বিএনপির শেষ বছর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে ৪.৮ বিলিয়ন ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এটা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৫৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চূড়ান্ত হিসাবে এ তথ্য উঠে এসেছে। এর আগে, বিবিএসের সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছিল ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। সরকারের লক্ষ্য হলো—২০৩০ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। তা হলে ২০৪১ সাল নাগাদ দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এবারই প্রথমবারের মতো দেশে জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরে জিডিপির ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে। এরও আগের বছর এই হার ছিল ২৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বিবিএসের হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ, শিল্প খাতে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ এবং সেবা খাতে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিবিএসের চূড়ান্ত হিসাবে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলী খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সত্যিই ম্যাজিকের মতো দ্রুত বাংলাদেশের দিন বদলে যেতে শুরু করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এই উন্নয়নের ধারা আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। বিশ্বের ১১ উদীয়মান অর্থনীতির দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী মন্দা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। মূলত দেশীয় জিডিপি বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার দৃঢ়তা দেখিয়েছে। আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা দূরীকরণ, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তার রোধ করা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে সক্ষম হওয়ায় দেশের সার্বিক-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আগামীতে এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে, এই বিষয়ে আমি আশাবাদী।