
বিশেষ প্রতিনিধি: চাকরি থেকে বরখাস্তের প্রায় দেড় বছর পর বিজিবি সাবেক সদস্য হেদায়াতুল্লাহকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে খোঁজে পেয়েছে তাঁর পরিবার। বিজিবি’র এই সাবেক সদস্য হেদায়াতুল্লাহকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার। তার চাকরি ফিরিয়ে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তার স্বজনেরা।
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার আংগারোয়া গ্রামের মরহুম গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে হেদায়াতুল্লাহ ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর বিজিবি’র সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। হেদায়াতুল্লাহর যখন তিন বছর বয়স তখন তার বাবা মারা যান। এরপর খুব কষ্টে হেদায়াতুল্লাহকে মানুষ করেন তার মা। হেদায়াতুল্লাহ বিজিবিতে যোগ দেয়ার কিছু দিন পরেই বিয়ে করেন। তখন থেকেই শুরু হয় সংসারে অশান্তি। তার স্ত্রী আর মায়ের মধ্যে প্রায়শই ঝগড়া বিবাদ হতো। এজন্য কিছু দিন পরপরেই সে বাড়িতে চলে আসত।
হেদায়াতুল্লাহর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ছুটি না নিয়ে হেদায়াতুল্লাহ বাড়িতে চলে আসায় ২০১৭ সালের ৭ মে কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করে। চাকরি হারানোর দিন সে বাড়িতে এসে কিছুক্ষণ পর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান। এরপর আর ফিরে আসেনি। তখন থেকেই সে পাগল হয়ে বিভিন্ন রেল স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে বেড়ান।
শুক্রবার (১২অক্টোবর,২০১৮) ময়মনসিংহ রেল স্টেশনে হেদায়াতুল্লাহর খোঁজ পেয়ে বাড়ি থেকে ছুটে আসেন তার স্বজনেরা। সেখান থেকে তাকে বৃুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।
কেন্দুয়ার গড়াডোবা ইউনিয়নের মেম্বার মিলন মিয়া জানান, আমরা জানতাম হেদায়েতুল্লাহ চাকরী চলে যাওয়ার পর বিদেশ চলে গেছে। বর্তমানে কোথায় কিভাবে আছে জানিনা।
হেদায়েতুল্লাহ’র বিষয়ে জানতে চাইলে গুরুত্বর অসুস্থ তার মা ঝরিনা বেগম (৮০) জানান, অনেক দিন ধরে ছেলের কই আছে জানি না, আমি ছেলেকে দেখতে চাই, ছেলের চাকরী ফিরে চাই।
হেদায়াতুল্লাহ বর্তমানে কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোণা ইউনিয়নের ক্ষিদিরপুর তার শ্বশুর বাড়িতে আছেন। তার স্ত্রী রোজিনা আক্তার জানান, পারিবারিক নানা সমস্যার বিষয়ে বিজিবিতে অভিযোগ করলে আমার স্বামীর চাকরি চলে যায়। অভাবের সংসারে চাকরি চলে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি আমার স্বামী। তখন থেকে সে পাগল হয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। আমরা অনেক খোঁজাখুজির পরে সাধারণ মানুষের কাছে জানতে পারি আমার স্বামী পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। এতোদিন তাকে খুঁজে পাইনি।
দেড় বছর পর শুক্রবার তাকে খুঁজে পেয়েছি। স্বামীকে বাড়ি নিয়ে এসেছি। তিন বছরের এক সন্তান নিয়ে এতোদিন খুব কষ্ট করেছি। শাশুড়িরও (হেদায়াতুল্লাহ’র মার) প্যারালাইন্সিস। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করি,সরকার আমার স্বামীর চাকরি ফিরে দিলে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।
হেদায়াতুল্লাহ’র সাথে বলতে চাইলে সে তেমন কিছু বলতে পারেনি। শুধু বলেন, সরকার কি আমার চাকরি ফিরিয়ে দেবে ?