অগ্নিযুগের বিপ্লবী পুরুষ ছিলেন জ্ঞানচন্দ্র মজুমদার

বিশেষ প্রতিনিধি:বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের অন্যতম নেতা, বাংলার সশস্ত্র ব্রিটিশবিরোধী সংগঠন অনুশীলন সমিতির শীর্ষনায়ক ও ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা পুরুষ অগ্নিযুগের বিপ্লবী জ্ঞানচন্দ্র মজুমদারের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী ৩ অক্টোবর ।

১৯৭০ সালের ৩ অক্টোবর এই দিনে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই আপাদমস্তক বিপ্লবী। ১৮৮৯ সালে (তারিখা অনাবিষ্কৃত) বর্তমান নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতার নাম মহেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার।

ঢাকা কলেজে অধ্যয়নকালে অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন জ্ঞানচন্দ্র মজুমদার। পরে সে দলের শীর্যস্থানীয় নেতাদের একজন হয়ে উঠেন। জীবনের বহু বছর রাজনৈতিক কারণে কারাযাপন করেন। তিনি অল ইন্ডিয়া কংগ্রেসের সদস্য এবং বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিত্ব ছিলেন। বিভিন্ন মেয়াদে ময়মনসিংহ জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪০ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন আমৃত্যু মানবতাবাদী এই বিপ্লবী।

১৯০৬ সালে এন্ট্রান্স পাস করে ঢাকা কলেজে পড়ার সময় অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা পি. মিত্রের সংস্রবে আসেন এবং তিনিই সমিতির সর্বপ্রথম সদস্যরূপে বিধিবদ্ধ শপথ গ্রহণ করেন। ১৯০৬-১০ সনে সমিতির সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিলো।

তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে ঢাকার ব্রাহা রাজনৈতিক ডাকাতির ঘটনা। এই বিপ্লবী কাজের মধ্যেও তিনি ১৯১০ সনে বি.এস.সি. পাস করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে এম.এস.সি. পড়ার সময় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পুলিশি তৎপরতার জন্য তাঁর পড়া শেষ হবার আগেই ১৯১৬ সনে তিন ধারা আইনে আটক থাকেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে ১৯১৯ সনে ছাড়া পেয়ে কংগ্রেস আন্দোলনে যোগ দেন এবং ময়মনসিংহ জেলায় কংগ্রেস সংগঠন গড়ে তুলে বহু বছর তার সম্পাদক এবং পরে সভাপতি হিসেবে কাজ করেন। ১৯২৫-৩০ সালে তিনি বাংলার প্রধান নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ১৯৩৮ সনে তিনি তদানীন্তন কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের বিপক্ষে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে মিলিত হয়ে তাঁর মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বহুবার তাঁকে কারাবরণ করতে হয়।

দেশ বিভাগের পর ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানে বাস করেন। পাক-গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। জীবনের ২৬ বছর তাঁর কেটেছিল ব্রিটিশ রাজের জেলে বন্দিদশায়। তবু কখনো আপস করেননি। সত্য ও স্বাধীনতার জন্য, ভারতমাতার মুক্তির জন্য জীবনকে বাজি ধরেছিলেন আজীবন লড়াকু মানুষটি। চেয়েছিলেন শোষণমুক্তি ও ভারতবাসীর স্বাধীনতা।

উপমহাদেশের ইতিহাস ভাষ্যকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জ্ঞানচন্দ্র মজুমদার পারিবারিকভাবেই রাজনৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বারহাট্টার গ্রামের বাড়িতে রাজাকার-আলবদররা লুটতরাজ চালালে জ্ঞানচন্দ্র মজুমদারের কর্মময় জীবনের অনেক প্রমাণাদিই নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি বর্তমানে জীবিত তাঁর উত্তরসূরিদের একাধিকজনের কাছে খোঁজ নিয়েও এই মহান ব্যক্তিত্বের কোনও ছবিও উদ্ধার করা যায়নি।

তবে কলকাতা থেকে প্রকাশিত সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, ‘সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান’ গ্রন্থ, ২০০৪ সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর ‘জেলে ত্রিশ বছর, পাক-ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ ও দরজি আবদুল ওয়াহাব এর ‘ময়মনসিংহের চরিতাভিধান’ গ্রন্থে জ্ঞানচন্দ্র মজুমদারের রাজনৈতিক জীবনের পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়া গবেষক আলী আহাম্মদ খান আইয়োব এর লিখা ‘নেত্রকোনা জেলার ইতিহাস’ গ্রন্থেও এই মহান বিপ্লবী যুগপুরুষের কথা উঠে এসেছে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।