আপনারা মনে করেন আমি মহা সুখে আছি?

বিশেষ প্রতিনিধি : সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের দর্পণ। সংস্কৃতিই ব্যক্তি, জাতি ও দেশের প্রকৃত পরিচয় বজন করে। একদিনে হঠাৎ করে সংস্কৃতি গড়ে উঠে না। দিনে দিনে মানুষের ধর্মীয় সামাজিক বিশ্বাস ও আচার আচরণ, জীবনমান, চিত্তবিনোদনের উপায় ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সংস্কৃতি। আমাদের সংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহু পুরানো ও সমৃদ্ধশালী। বঙ্গবন্ধু (শেখ মুজিবুর রহমান) বলেছিলেন, ‘যত দিন বাংলা আকাশ থাকবে, ততদিন বাংলার সংস্কৃতি থাকবে’। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নেত্রকোনায় এই সব কথা বলেন। শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার মাঠে আন্তর্জাতিক লোকসংস্কৃতি উৎসবের উদ্বোধন ও অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গ্রাম-শহর নির্বিশেষে তথ্য প্রযুক্তি এখন সবার জীবনে প্রভাব ফেলেছে। তথ্যের অবাদ প্রবাহের ফলে সারা বিশ্ব এখন গ্রামে পরিণত হয়েছে। ফলে আকাশ সংস্কৃতি এখন বাস্তবতা। সারাদেশে আমাদের সংষ্কৃতির বিভিন্ন উপাদান ছড়িয়ে রয়েছে। এগুলোকে সংগ্রহ করে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। আর তা হলেই বর্হিবিশ্বে আমাদের সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য ফুটে উঠবে।
জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, বৃহত্তর মংমনসিংহ বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদ অংশ। গারো পাহাড়ের পাদদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য়ে ভরপুর খাল-বিল, হাওর-বাওর সেশ্টিত এই অঞ্চলে বহু কবি, সাহিত্যিক রাজনীতিক, সমাজসেবক জন্মগ্রহণ করেছেন। মনসা মঙ্গল কাব্যের রচয়িতা কবি দ্বিজ বংশীদাস, বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী, শিশু সাহিত্যি উপেন্দ্র কিশোর রায়, সুকুমার রায়, সাহিত্যিক নিরোদ চন্দ্র চৌধুরী, শির্পাচার্য় জয়নুল আবেদীন, চলচ্চিত্রকার সত্যজিত রায়সহ বহু গুণী এ ভূখ-ে জন্মেছেন। তাঁরা এ অঞ্চকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন তেমনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশকে তুলে ধরেছেন বর্ণাঢ্যভাবে। এ অঞ্চল থেকেই ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র মতো বিশ্ব সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে।’


ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি মোস্তফা জব্বারের সভাপতিত্বে লিখিত এ সব বক্তব্যের আগে তিনি হাস্যরসে বলেন, ‘আমার বাড়ি নেত্রকোণার পাশে কিশোরগঞ্জ। আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন আমাকে সবাই বলতো ভাইট্টা। আর যখন আমি গুরুদয়াল কলেজে পড়তাম তখন আমাকে বলতো ভাইট্টা গাবড়। এখন অবশ্য আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা দেখে মানুষ এসব বলেনা।’ এ-সময় রাষ্ট্রপতির হাস্যরসের কথা শুনে সবাই হেসে উঠেন। তিনি বলেন, আমি দুই বার রাষ্ট্রপতি হলেও নেত্রকোনায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে এই প্রথম আসা হলো। কারণ এর আগে হয়তো আমাকে কেউ আনতেও চাননি। রাষ্ট্রপতি সাধারণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি রাষ্টপতি হয়ে যে কত মহাসুখে আছি। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে আমি আগের মতো স্বাধীনভাবে চলতে পারিনা। কথা বলতে পারিনা। মানুষকে কাছে আসতে দেয়না। এই যে দেখেন এত বেষ্টনির বাইরে কত মানুষ আছেন। আমি এসএসএফকে বলেছি অন্তত সামনের কাপড়ের বেষ্টনি খুলে দিতে। কারণ অনেকেই আমাকে দেখার সুযোগ পাবেন। আমিও একটু হলেও তাঁদের দেখতে পারবে। গানে আছে- দূরের মানুষ কাছে এসো। কিন্তু আমার কাছের মানুষও দূরে সরে যাচ্ছে।’ অন্তত ১৩ মিনিটের বক্তব্যের শেষে বর্তমান সরকারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতিতেও এই উন্নয়নের ছোঁয়া আজ স্পষ্ট।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর শুধু লাঙ্গল গরুর দেশ নয়। বাংলাদেশের তরুণদের উদ্ভাবিত সফটওয়ার এখন বিশ্বের বহু দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনে আমরা সফলতা অর্জন করেছি।’
বুধবার দুপুর একটার দিকে রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন থেকে রওনা দিয়ে সোয়া একটার দিকে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে দুইটার দিকে নেত্রকোনার সাকুয়া এলাকায় বিজিবির মাঠে পৌঁছান। সেখান থেকে কুড়পাড় এলাকায় সার্কিট হাউজ হয়ে দুপুর দুইটা ২০ মিনিটে মোক্তারপাড়া এলাকার পুরাতন জেলখানায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ই্নকিউভিশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর তিনি পৌনে তিনটার দিকে মোক্তারপাড়া মাঠে আসেন। লোকসংস্কৃতি উসৎবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট লোকগবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার। বক্তব্য দেন, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধান মন্ত্রীর কাযালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়র রহমান খান, আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান শেলী, দীনেশ চন্দ্র সেনের প্রপৌত্রী দেবকনা সেন, ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচায অধ্যাপক সবুজ কলি সেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের লোকসংস্কৃতি গবেষক ও শিল্পীবৃন্দ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

 

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।