শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও গবেষণানির্ভর আন্তর্জাতিক মানের গড়তে চাই- উপাচার্য

অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খান, দেশের স্বনামধন্য গবেষক, অধ্যাপক ও লেখক। সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন নেত্রকোণায় প্রতিষ্ঠিত শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেহাবি) উপাচার্য পদে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের খ্যাতিমান এই অধ্যাপককে ২০১৭ সালে গবেষণায় সাহিত্য পদকে ভূষিত করেছে বাংলা একাডেমি।
২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৮’ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। যা সংসদে পাস হয় চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা,অবকাঠামো নির্মাণ চর্চাসহ সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি ‘দৈনিক বাংলার নেত্র পত্রিকা’র বিশেষ প্রতিনিধি মাহাবুব আলমের সঙ্গে কথা বলেন শেহাবি’র প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ড. রফিকউল্লাহ খান। সাক্ষতকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি মাহবুব আলম।
মাহবুব আলম: নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠাতা উপচার্য আপনি। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সাজানোর ক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কী?
ড. রফিকউল্লাহ খান: আসলে একটা বিশ্ববিদ্যালয় যখন গড়ে ওঠে এবং যিনি উপাচার্য হন তিনি অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করেন। আবার দেশের একটা নিজস্ব রুচি ও সংস্কৃতি থাকে। যে অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় সেখানকার ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সঙ্গে সংগতি রেখেই ওই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা উচিত। বাইরে থেকে আরোপিত সংস্কৃতি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ফলপ্রসু হয় না এবং সম্ভাবনা তৈরি করে না। আমি মনে করি বর্তমান বাংলাদেশের যে শিক্ষা পরিস্থিতি, চাকরির বাজারে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের যে অসহায় অবস্থা সেগুলো বিচার করেই জ্ঞান ও জ্ঞানের উৎকর্ষ এবং সেই সঙ্গে এমন শিক্ষা দেওয়া যাতে বেকারত্বের মতো দুঃসহ বোঝা আমাদের ছেলে-মেয়েদের বহন করতে না হয়। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় হবে এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-যেখানে শিক্ষকরা হবেন মস্তিষ্ক আর ছাত্ররা হবে এর প্রাণ।শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের সেভাবে গড়ে তুলতে এমন বিষয় নিয়ে পাঠদান করা হবে-যেখানে বিভাগ থাকবে, ইনস্টিটিউট থাকবে এবং শিক্ষার্থীদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন সবই থাকবে।
মাহবুব আলম: প্রথম কোন কোন বিষয় চালু করা হবে? কোন শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে?
ড. রফিকউল্লাহ খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বিষয় শিক্ষাদান কার্যক্রম। সেই শিক্ষাদান কার্যক্রম যদি আমরা শুরু না পারি তাহলে যে অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সে অঞ্চলের মানুষের আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হবে না। সুতরাং অনেকগুলো বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরুর চিন্তা থাকলেও প্রথমে চারটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করতে চাই। এরমধ্যে দুটি বিভাগকে আমি আমাদের দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি- বিশেষ করে বাংলা ও ইংরেজি।
বাংলা-নিজের মাতৃভাষা, যে ভাষার জন্যে আমরা প্রাণ দিয়েছি, সেই ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষাদান। দ্বিতীয় ইংরেজি-আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য ছেলে-মেয়েদের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞান জরুরি। বিশ্বব্যাপী ইংরেজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমাধ্যম। আর তৃতীয় বিষয়টি উন্নয়ন অর্থনীতি অধ্যয়ন(ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স); এটি নির্বাচনের কারণ একই সঙ্গে দুটি বিষয়কে সে ধারণ করতে পারবে। একটি হবে অর্থনীতি আর অন্যটি উন্নয়ন। বিশ্ববিদ্যালয়টি এমন একটি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত যেখানে উন্নয়ন, সে নদী উন্নয়ন থেকে শুরু হাওর উন্নয়ন, তারপর ওখানে যে কৃষি ও মৎস্য সম্পদের বিস্তার এবং বৈচিত্র্য; সেগুলো উন্নয়ন অর্থনীতির গবেষণার ও পাঠদানের বিষয় হতে পারে। আমরা সেভাবেই পাঠ্যক্রমকে সাজাবো।
আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যেটা জরুরি-তা হচ্ছে কম্পিউটার বিজ্ঞান। পাঠ্যক্রমটা সেভাবেই সাজিয়ে আমি চেষ্টা করবো, প্রত্যেকটা ছেলে-মেয়েকে কম্পিউটার জ্ঞানে শিক্ষিত করার। যাতে তারা অন্তত এর প্রাথমিক জ্ঞানগুলো দ্রুত অর্জন করতে পারে।তা না হলে তারা গবেষণা করতে পারবে না,আন্তর্জাতিক যোগাযোগও হবে না। তাই এই জ্ঞানটা শুরুতেই আমাদেরই তৈরি করে দিতে হবে, যাতে ওই মানসিকতা নিয়েই এগিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা।
মাহবুব আলম: এখনও ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা হয়নি। হাওর জেলা নেত্রকোণা, সেখানখার মতো মফস্বলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে গেলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। এসব মোকাবিলা করে সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও রূপরেখায় আপনার কোন ধরনের ভূমিকা থাকবে?
ড. রফিকউল্লাহ খান: হাওর অঞ্চলে নয়,সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। বিলের মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে অক্সফোর্ডের কথা, যেটা আজ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে দেখতে হবে তার পরিকল্পনাটা কেমন। বিস্তৃত জলাভূমি অনুর্ভর ভূ-খ- পড়ে আছে। সেখানে যদি উন্নত ও আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়,তাহলে পৃথিবীর কত দেশের গবেষক সেখানে গবেষণা করতে আসবে। বৈশ্বিকভাবে এটাকে সেভাবেই তৈরি করতে হবে। আর নেত্রকোণায় যে সুবিধা রয়েছেও। সেখানে আশেপাশে রয়েছে ছোটখাট বিল-ঝিল; যেখানে লেক (হ্রদ) তৈরি ছাড়াও রয়েছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সৃষ্টির সুযোগ। আমি আশা করি,এখানে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে পারবো। এর জন্য যে খুব বেশি সময় লাগবে আমি তাও মনে করি না। এর জন্যে প্রাথমিকভাবে দরকার ভূমি অধিগ্রহণ। এলাকার জনগণ খুবই সহযোগিতামূলক মনোভাব। এক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। হয়তো কিছুটা সময় লাগতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় শতবর্ষী প্ল্যানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েদের একটা অবকাঠামো দিতে হবে। নেত্রকোণায় এই সুযোগ রয়েছে। শহরে জমি পাওয়া কষ্টের, পরিকল্পনা আছে কিন্তু বাস্তবায়নের জন্য ভূমি নেই। কিন্তু সেখানে এ সঙ্কট নেই। আমরা একটা বিস্তৃত ও সুনির্দিষ্ট এবং শতবর্ষের পরিকল্পনা সামনে রেখেই মাস্টার প্ল্যান তৈরি করবো। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান থাকবে শতবর্ষের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনও শতবর্ষ হয়নি। এরপরও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমরাও সেটা করবো। মানুষ এগুলোকে দুঃস্বপ্ন ভাবে কিন্তু মানুষই তো স্বপ্ন দেখে! আমি একাধিকবার নেত্রকোণায় গিয়েছি, সেখানকার মানুষ আমাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে-ওই অঞ্চলে মানুষের অসাম্প্রদায়িক চেতনা। এটা আমার কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় মূলত গড়ে ওঠে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি ও দেশীয় পরিস্থিতিসহ সব কিছু মিলিয়ে, সেখানে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী যতটা সম্ভব প্রগতিশীল চিন্তা চেতনা প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করতে পারবো।
মাহবুব আলম: প্রথম বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট কেমন ? কোন খাতে কেমন বাজেট রয়েছে?
ড. রফিকউল্লাহ খান: এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট তো বহুমুখী বাজেট। একটা হচ্ছে-ভূমি অধিগ্রহণের বাজেট, অবকাঠামা নির্মাণের বাজেট। তবে প্রাথমিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে খুব বেশি বাজেট লাগবে না। এজন্য আমরা ক্ষুদ্র একটা বাজেট দিয়েছি। অনুমোদন হলে আমরা হয়তো কাজটা শুরু করতে পারবো। আশা করি সেটা হয়ে যাবে। আমরা যদি ছয়মাস যেতে পারি এবং আমাদের বিভাগগুলো চালু করতে পারি। তাহলে আর আটকে থাকবে না।
মাহবুব আলম: বর্তমান সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি বাস্তবায়নও হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিষয় চালু হবে কী?
ড. রফিকউল্লাহ খান: প্রথমে ‘শেখ হাসিনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামেই প্রস্তাবিত হয়েছিল। পরে সাধারণ বিশ্বাবিদ্যালয় হিসেবে আইন পাস হয়। প্রথম উপাচার্য হিসেবে আমার কাজ হবে ওই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকেই বেশি মাত্রায় গুরুত্ব দেয়া। কারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জানা মানুষ কখনও অন্তত কর্মহীন থাকে না। কোনো না কোনোভাবে জীবন-যাপনের পথ বের করতে পারবে। ঘরে বসেও সে আয় করতে পারবে। সেসব বিষয়গুলো নিয়েই আমরা কাজ করার চেষ্টা করবো।
মাহবুব আলম: প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী হিসেবে আপনার পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলবেন ?
ড. রফিকউল্লাহ খান: এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দেবো, প্রযুক্তিরই সহায়তা নেবো। প্রথম বর্ষ থেকেই আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষা ও কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হবে।
মাহবুব আলম: উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গবেষণা ও গ্রন্থাগারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা। অথচ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক বাজেটে এ দুটি খাতই অবহেলিত দেখা যায়। এ বিষয়ে যদি কিছু বলেন।
ড. রফিকউল্লাহ খান: গবেষণা ও গ্রন্থাগার-এগুলো তো থাকবেই। তবে শুরুতেই গ্রন্থাগার ডিজিটাল করা যাবে না। ডিজিটাল হতে সময় লাগবে,তবে তা খুব বেশি নয়। কেননা তথ্য লাগবে, উপকরণ লাগবে। উপকরণ ছাড়া তো আর গ্রন্থাগার হয় না। গ্রন্থাগার ওই মাপের ও ওই মানের করে নিয়ে আমরা সেটাকে ডিজিটালে রূপান্তর করবো। তবে গ্রন্থাগারকে খুব বিশাল আকৃতির করতে হবে সেটা আমি মনে করি না। কিন্তু বিশাল আয়োজন থাকবে এতে। এখান থেকে যাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকরা প্রযুক্তিগত জ্ঞান সংগ্রহ করতে পারেন সেজন্য আমরা উন্নত বিশ্বের ও প্রাসঙ্গিক জ্ঞানগুলো নেবো। অপ্রয়োজনীয় বই দিয়ে গ্রন্থাগারকে আমরা আচ্ছন্ন করবো না।
আর গবেষণা হচ্ছে একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গবেষণা না হলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের গবেষকদের সেখানে টানা যাবে না। এক্ষেত্রে গবেষণার বিষয়গুলো কি হবে ? এটা হতে পারে-ওই এলাকার প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ। চুনাপাথর, সাদা মাটি, সোমেশ্বরী নদীর বালি- এই বালি দিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম কাঁচ তৈরি করা সম্ভব। যোগাযোগের পশ্চাতপদতার কারণে এবং এসব জিনিসকে বাইরে সরবরাহের অভাবের কারণেই সম্ভবত ওই মানের গবেষণা হয়নি। আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিকমানের গবেষণার পরিবেশ তৈরি করবো। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করবো যাতে বিদেশি গবেষকরাও সেখানে আসেন এবং এসব বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আর ওখানকার (নেত্রকোণা)যে প্রাকৃতিক বিন্যাস, বৈচিত্র্য, শহরটিরও একটি বিশেষত্ব আছে। অর্থাৎ একটি জায়গার প্রকৃতিই বলে দেবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃংস্কৃতি কেমন হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের দেখলেই বোঝা যায়, সে হার্ভাডের, কেমব্রিজ নাকি ফ্রাঙ্কফুর্টার। অবশ্য এ সংস্কৃতি তৈরি হয় অনেক বছরে, ১০০-২০০ বছরে।
মাহবুব আলম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে তার আলাদা কোনো চিন্তা রয়েছে কী না। আর আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাতীয় উন্নয়নে এ বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু অবদান রাখবে বলে আপনি আশাবাদী ?
ড. রফিকউল্লাহ খান: অবশ্যই। প্রধানমন্ত্রীর যে দৃষ্টিভঙ্গি; আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতায় আমাদের মতো একটি দেশে তার যে চিন্তা, স্বপ্ন, মানবমুখিতা, শিক্ষার প্রতি তার যে দৃষ্টিভঙ্গি, অবশ্যই সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগোপযোগী এবং বিশ্বমানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষা-কার্যক্রম চালানো হবে। আমি একে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবান্ধব এবং আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এসব কথা হয়তো সবাই বলে, মানে স্বপ্ন দেখার সময় আমরা বলি। কিন্তু আমি আমার সময়ে, যতদিন দায়িত্ব পালন করবো চেষ্টা করবো এই স্বপ্নটা বাস্তবায়নের। যদিও একদম প্রথম থেকে শুরু করতে হচ্ছে।
এসব কথা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৮ তে ও বলা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কিছুই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। যাতে সবাই অনলাইনে সার্চ করলেই দেখতে পায়। কর্মকা- না দেখলে তো মানুষ আশাবাদী হতে পারবে না।


মাহবুব আলম: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার কী ধরনের প্রত্যাশা থাকবে?
ড. রফিকউল্লাহ খান: শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যাপারে আমরা সবাই স্বচ্ছ নিয়ম অনুসরণ করি। কিন্তু তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিভাগে ভর্তি করতে পারছি না। যার পড়ার কথা সমাজবিজ্ঞান সে পড়ছে বাংলা সাহিত্যে। যার পড়ার কথা বাংলা সাহিত্যে সে পড়ছে অন্য কিছু। ফলে যে সমস্যাটা হয় এতে ছেলে-মেয়েদের প্রাথমিক আগ্রহটা কমে যাচ্ছে। তারপর চাকরিমুখী চিন্তা চলে আসছে তার মধ্যে, শিক্ষাটা নয়। আমরা যখন শুরু করবো ছেলে-মেয়েদের ওইভাবেই বোঝাবো, আমি যেহেতু প্রথম উপাচার্য আমার সঙ্গে তাদের সম্পর্কটা খুবই গভীর হবে। আমি তাদের বোঝাতে চেষ্টা করবো, যাতে তারা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ধ্যানীর মতো লেখাপড়াটা করে। কারণ আত্মবিশ্বাস ও আন্তরিকতা নিয়ে পড়লে কেউ-ই ব্যর্থ হয় না। সবার স্বপ্নই পূরণ হয়। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কাছেও আমি আন্তরিকতা, সততা ও একাগ্রতা আশা করবো।
মাহবুব আলম: এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তচিন্তা চর্চায় উপাচার্য হিসেবে আপনার উদ্যোগ কী থাকবে ?
ড. রফিকউল্লাহ খান: আমাদের দেশে অনেক মুক্তচিন্তার মানুষ আছেন, কিন্তু সামাজিক বাস্তবায়তায় আত্ম-প্রকাশের সুযোগ কম। হয়তো এর পরিণতি দেখেও ভয় পান অনেকে। একটা মানুষ তার চিন্তা- চেতনায় জীবন দিলো, কিন্তু তা পৃথিবীর মানুষকে আলোকিত না করলে সে জীবন দেয়া বৃথা। সক্রেটিস তো নিজেই হেমলক পান করেছিলেন, তার হয়তো আত্মবিশ্বাস ছিলো যে, ‘আমার যে শিক্ষা সেটা ধ্বংস হয়ে যাবে না।’
আর মুক্ত চিন্তকদের আত্মপ্রকাশের সুযোগ তৈরি করতে হবে। সে সুযোগ নতুন প্রজন্ম তৈরি করবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিম-লে যদি পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূল থাকে সেখানে যে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসবে তারা যদি গভীর চিন্তাশীল মানুষ হয় এবং একত্র হয়ে কথা বলতে থাকে তাহলে শুভ এবং কল্যাণ চিন্তার দিকে দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হবে।
মাহবুব আলম: স্যার,সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. রফিকউল্লাহ খান: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ, ধন্যবাদ দৈনিক বাংলারনেত্র পরিবারকে। আমাকে স্বপ্ন প্রকাশের সুযোগ দেয়ায়।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।