
ফয়েজ আহমেদ হৃদয়, মদন থেকে : নেত্রকোণার হাওরাঞ্চল মিঠা পানির মাছের জন্য বিখ্যাত। এরমধ্যে মদন উপজেলার হাওরাঞ্চলের সবকটি হাটবাজারে ইদানিং বহু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত ও বড় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। এতে অপুষ্টিতে ভূগছে এলাকার জনগণ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে এলাকার হাটবাজার গুলোতে মিঠা পানির বড় মাছে ভরপুর থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে হাটবাজার গুলোতে ২/৩ প্রকারের পোনা মাছ ছাড়া বড় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই মিঠা পানির আইর-গুজি, চিতল, কাল বাউশ, রিটা, রুই, কাতল, মৃগেল,পাঙ্গাস, শোল-গজার, বাগাইর, গাং মুগুরসহ বহু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বর্ষার পানি আসার সাথে সাথেই এক শ্রেণীর অসাধু মৎস্য শিকারি সরকার নিষিদ্ধ কারেন্ট, কণা, মশারি জাল দিয়ে মা মাছসহ পোনা মাছ নিধন করায় এবং শুকনো মৌসুমে বাঁশের বায়না দিয়ে ঘেড়াও করে পানি শুকিয়ে মাছ ধরায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকার অভিজ্ঞ মহলের ধারনা। তাদের মতে প্রশাসন নতুন পানি আসার সাথে সাথেই বিভিন্ন এলাকার অসৎ মৎস্যজীবিদের সাথে আলোচনা করে মা ও পোনা মাছ নিধন বন্ধ করলে মিঠা পানির মাছের জন্য বিখ্যাত এ অঞ্চলের লোকজন মিঠা পানির ছোট-বড় মাছের অভাব পূরণ করে পুষ্টিহীনতা থেকে রক্ষা পেত। এছাড়া মদন উপজেলার উন্মুক্ত জলাশয় গুলোসহ সব জলাশয় মসজিদ-মাদ্রাসার নামে ইজারা পত্তন হয়ে যাওয়ায় এ উপজেলায় ‘‘জাল যার জল তার’’ এনীতি অনুসৃত হচ্ছে। দরিদ্র লোকজন ঠাক-ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছে না। আর ইজারাদারগণ তাদের ইচ্ছা মাফিক পানি সেচন করে মাছ ধরছে।
মৎস্যজীবি হাসনপুর গ্রামের দিগেন্দ্র,নরেনদ্র,রাণা, কার্তিক জানান, এখন জাল ফেলে মাছ ধরার কোন স্থান পাচ্ছি না। এলাকার সবগুলো জলাশয় পত্তন দেয়ায় আমাদের জেলে পরিবার গুলো এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। আর এলাকাবাসী হারাচ্ছেন মিঠা পানির সুস্বাধু মাছ।
মদন উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক মোতাহার আলম চৌধুরী জানান, এ সময়ে স্থানীয় হাটবাজার গুলোতে বড় মাছে সয়লাব ছিল। কিন্তু বর্তমানে বড় মাছের আকাল। প্রশাসন এবং জনগণের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সম্ভাবনাময় এ এলাকার মিঠা পানির মাছের অভাব দূর করা সম্ভব। লোক দেখানো আইন প্রয়োগ করে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ কোন দিনেই সম্ভব নয়। মিঠা পানির মাছের জন্য বিখ্যাত এ এলাকার জনগণ যাতে পুষ্টিহীনতায় না ভোগে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের আগাম পরিকল্পনা গ্রহন করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
মদন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, বহু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, হাওর ভরাট, শুকনো মৌসূমে হাওরগুলো সেচ দিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরা এবং অভয়াশ্রম না থাকায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এর নিরসনের জন্য অভয়াশ্রম নির্মাণের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। এবং নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ করার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।