ন‌ড়িয়া স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্সসহ ১৩টি ভবন ঝুঁকি‌তে

শরীয়তপুর প্রতিনিধি: ন‌ড়িয়া উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্সের সিমানা প্রাচীর ও গ্রেস নদী গ‌র্ভে চ‌লে গে‌ছে। উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্স এড়িয়ায় উপ‌জেলা প‌রিবার প‌রিকল্পনা কার্যালয়সহ ১৩টি ভবন ঝুঁ‌কি‌তে র‌য়ে‌ছে, যে কোন সময় নদী গ‌র্ভে চ‌লে যে‌তে পা‌রে। এছাড়াও গত এক সপ্তা‌হে ভাঙ‌নে উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্স সংলগ্ন ২শ বছরের পুরাতন মূলফতগঞ্জ বাজার‌টির ২শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে এবং ভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে পরেছে পাশের কেদারপুর ও পূর্ব নড়িয়া গ্রামের দেড় হাজার পরিবার। দুটি গ্রামের ৩৫০ পরিবার তাদের বসত ঘর সরিয়ে নিয়েছে অন্যত্র ।

শ‌নিবার দুপু‌র সোয়া ১২টার দি‌কে এলাকার হিন্দু ধ‌র্মের একমাত্র ম‌ন্দির ”কেদারপুর গ্রা‌মের রাম ঠাকুর সেবা ম‌ন্দির‌”নদী গ‌র্ভে চ‌লে যায়। ভাঙনের কারণে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। ব্যহত হ‌চ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা।

উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্স অফিস সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, ন‌ড়িয়া থানা কেদারপুর বা‌সিন্দা আব্দুল ক‌রিম দেওয়ান (মনাই দেওয়ান) এর প্র‌চেষ্টায় মূলফৎগঞ্জ ঐতিহ্যবাহী বাজারের পা‌শে ন‌ড়িয়া কেদারপুর গ্রা‌মে ১৯৬৫ সা‌লে একতলা বি‌শিষ্ট ন‌ড়িয়া থানা স্বাস্থ্য প্রকল্প না‌মে এক‌টি হাসপাতাল তৈ‌রি করা হয়। প‌রে ২০১১ সা‌লে উন্নিত ক‌রে ন‌ড়িয়া উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্স না‌মে এক‌টি তিনতলা ভবন বি‌শিষ্ট হাসপাতাল করা হয় এবং ওই হাসপাতালসহ পর্যাক্র‌মে দুইতলা ও একতলা বি‌শিষ্ট ছয় একর জ‌মি‌তে মোট ১২টি ভবন তৈ‌রি করা হ‌য়ে‌ছে। তার সা‌থেই র‌য়ে‌ছে ন‌ড়িয়া উপ‌জেলা প‌রিবার প‌রিকল্পনা কার্যাল‌য়ের দুইতলা ভবন‌টি। ওই ১৩টি ভবন যে কোন সময় নদী গ‌র্ভে চ‌লে যে‌তে পা‌রে। শরীয়তপুর ‌সি‌ভিল সার্জন ডা. খ‌লিলুর রহমান ব‌লেন, গত এক সপ্তা‌হ ধ‌রে পদ্মার তীব্র ভাঙ‌ন শুরু হ‌য়ে‌ছে। 

রোববার সকাল ৯টায় ন‌ড়িয়া উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্সের সিমানা প্রচীর ও বি‌কে‌লে গ্রেস নদী গ‌র্ভে চ‌লে গে‌ছে। ঝুঁ‌কি‌তে র‌য়ে‌ছে হাসপা‌তালের এ‌ড়িয়ার ১২টি ভবন। যে কোন সময় নদী গ‌র্ভে চ‌লে যে‌তে পা‌রে। তাই ভ‌র্তিকৃত রোগী‌দের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালসহ বি‌ভিন্ন হাসপাতা‌লে প্রেরণ করা হ‌চ্ছে। ত‌বে এখন নিরাপদ ভব‌নে ব‌র্হি‌বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও অন্ত:বিভাগ চালু র‌য়ে‌ছে। তিনজন চি‌কিৎসক ও ১৬ জন নার্স দি‌য়ে সী‌মিত আকা‌রে রো‌গী‌দের চি‌কিৎসা প্রদান করা হ‌চ্ছে। ‌সি‌ভিল সার্জন ব‌লেন, ১২ টি ভবন নিলা‌মের জন্য প্রাক্কলন মূল্য ধরা হ‌য়ে ৩৮ লাখ ৬৭ হাজার ৬১৬ টাকা। আগামী কাল সোমবার বি‌কেল ৩টায় ১২টি ভব‌নের ম‌ধ্যে মূল তিনতলা ও দুইতলা ২টি মূল ভবন নিলা‌মে যা‌বে। যার মূল্য নির্ধারন করা হ‌য়ে‌ছে। তিনতলা ভবন‌টি ১৫ লাখ ও দুইতলা ভবন‌টি ৯ লাখ টাকা। ন‌ড়িয়া উপ‌জেলা প‌রিবার প‌রিকল্পনা কার্যাল‌য়ের কর্মকর্তা ডা. না‌হিদ আল মাসুম ব‌লেন, ভাঙতে ভাঙ‌তে ন‌ড়িয়া উপ‌জেলা প‌রিবার প‌রিকল্পনা কার্যাল‌য়ের ভবন‌টি কা‌ছে চ‌লে এসে‌ছে। তাই নিরাপত্তার জন্য ভব‌নের সকল মালামাল অন্যত্র স‌রি‌য়ে নেয়া হ‌য়ে‌ছে। গত ১ সে‌প্টেম্বর থে‌কে ন‌ড়িয়া ভূমখাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য প‌রিবার কল্যাণ কে‌ন্দ্রে অস্থায়ীভা‌বে আমা‌দের কার্যক্রম চল‌ছে। ইকবাল মা‌ঝিসহ স্থানীয়‌রা জা‌নিয়ে‌ছেন, হাসপাতাল‌টি নিলা‌মে দেখ‌তে চাই না। আমরা চাই সরকার ভাঙন রক্ষায় দ্রুত বে‌ড়ি বাঁধের কাজ শুরু করুক। তাহ‌লে হাসপাতালসহ ব্যবসা প্র‌তিষ্ঠান, ফস‌লি জ‌মি ও বা‌ড়িঘরগু‌লো রক্ষা পা‌বে। ‌কেদারপুর গ্রা‌মের পলাশ বেপারী ও জা‌হিদ বেপারী ব‌লেন, গত ৭ সে‌প্টেম্বর আমা‌দের বসত বা‌ড়ি নদী গ‌র্ভে চ‌লে গে‌ছে। এখন গাছ তলা‌তেই থাক‌তে হ‌চ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন সরকা‌রি সহ‌যো‌গিতা পাইনি।

কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান বলেন, বসত বাড়ি, ফসলি জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে। এলাকার লোক নি:স্ব হয়ে গেছে। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল। এখন আমা‌দের প‌থে বসা ছাড়া কোন উপায় নেই। আমার নানার প্র‌চেষ্টায় ন‌ড়িয়া উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্স‌টি তৈ‌রি হ‌য়ে‌ছে কেদারপুর গ্রা‌মে। আজ তাও নদীগ‌র্ভে বি‌লিন হ‌তে যা‌চ্ছে। শরীয়তপুর পাউ‌বি’র উপ-প্র‌কৌশলী মো. তা‌রেক হাসান ব‌লেন, ন‌ড়িয়ার কেদারপুর ও পূর্ব ন‌ড়িয়ায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হ‌য়ে‌ছে। যেখা‌নে র‌য়ে‌ছে ন‌ড়িয়া উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্স । হাসপাতাল‌টি ঝুঁ‌কি‌তে র‌য়ে‌ছে। তাই ভাঙ্গনে বালু ভ‌র্তি জিও ব্যাগ ফালা‌নো হ‌চ্ছে। ন‌ড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, ন‌ড়িয়া উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কম‌প্লেক্স‌টি পদ্মার ভাঙ্গ‌নের ঝুঁকি‌তে র‌য়ে‌ছে। যে কোন মুহু‌ত্তে নদী গ‌র্ভে হা‌রি‌য়ে যে‌তে পা‌রে হাসপাতাল‌টি। তাই রোগী‌দের ও ভব‌নের মালামাল অন্যত্র স‌রি‌য়ে নেয়া হ‌চ্ছে। প্রশা‌নের পক্ষ থে‌কে সব ধর‌নের সহ‌যো‌গিতা করা হ‌চ্ছে। তি‌নি ব‌লেন, মুলফৎগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ীরা বির্পযস্ত অবস্থায় র‌য়ে‌ছে। ওই বাজারের প্রায় দেড় হাজার ব্যবসায়ী ক্ষ‌তিগ্রস্থ। বাজারটির উপর ওই এলাকার অন্তত ১০ হাজার পরিবার নির্ভরশীল । ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের সরকারি পর্যায়ে সহায়তা করা হবে। তি‌নি ব‌লেন, ভাঙন কব‌লিত এলাকার মানুষ মানবতার জীবন যাপন করছেন। ইতিম‌ধ্যে ক্ষ‌তিগ্রস্থ পরিবারগু‌লো‌কে শুকনো খাবার ও বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহ‌যো‌গিতা করা হ‌য়ে‌ছে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।