পর্যটন সম্ভাবনার আকর্ষণীয় হাওর জনপথ উচিতপুর

মদন প্রতিনিধি: পর্যটন সম্ভাবনার আকর্ষণীয় জনপথ হয়ে উঠছে নেত্রকোণার মদন উপজেলার উচিতপুর। দিনে দিনে হাওর পাড়ের খোলা এ স্থানে পর্যটকদের পদচারণার চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভ্রমন পিপাসু লোকজনের পথচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে হাওরাঞ্চলের এ জনপথটি। বিশেষ করে সরকার হাওরবাসীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে হেমন্তকালীন যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ডুবন্ত রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণ করায় এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বেড়ে গেছে। এখানে সমুদ্র বা দীপ নেই। তবে বর্ষার জলরাশি সমুদ্রের মতো বিশাল। বোরো ধানের মাঠ-ঘাট সব পানিতে একাকার। তার উপর ছোট ছোট দীপের মতো এক একটি গ্রাম। চার দিকে অতিথি পানি থৈ থৈ করছে। জলমগ্ন পথঘাঠ মাঠ প্রান্তর সবকিছু। নদী খাল বিল জলাশয় একাকার হয়ে বিশাল এ জলরাশি মিলেই ভাটির দেশ। নিঃসঙ্গ হিজল করচের দেশ। ছয়মাস জলমগ্ন প্রায় জলবন্ধি। অতিথি পানি চলে গেলে ফের জেগে উঠে আশপাশ, নদী, খাল-বিল দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ফসলি মাঠ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মন্ডিত এ অঞ্চলটিতে সরকার ডুবন্ত সড়ক ও সেতু নির্মাণ করায় পূবালী হাওয়ায় প্রাণটাকে শান্ত করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু, শিশু, যুবক, যুবতি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এখানে এসে হাওরের বৈচিত্র লিলা-ভূমিতে বিচরণ করে সাঁতার কাটে আর শিতল হাওয়া উপভোগ করে। তবে সবার মুখে একটি কথাই এত সুন্দর ও আরাম প্রিয় জায়গা ভ্রমণ করা কার মনে না চায় ?


আকষর্ণীয় এস্থানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পর্যটকদের সেবা পাওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় আগত পর্যটকরা সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
পর্যটকসহ সকলের দাবি সরকারিভাবে এই অঞ্চলে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় বাড়বে। এ নিয়ে এলাকাবাসী গঠন করেছেন উচিতপুর পর্যটন সুরক্ষা পরিষদ। এ সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ শামছুল ইসলাম তালুকদার। এই এলাকাটিতে সরকারিভাবে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুললে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারবে, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে দেয়ার জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
ঈদ পরবর্তী সময়ে উচিতপুর ঘাটে প্রচুর দর্শনার্থী ও পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এ সময় গাজীপুর জেলার কবি ইজাজ আহমেদ মিলন, তার সহধর্মীণি বিউটি আক্তার, সমকালের বর্ষসেরা প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলা ভিশনের মামুন খান, যমুনা টিভির স্টাফ রির্পোটার ও দৈনিক বাংলার নেত্র পত্রিকার সম্পাদক কামাল হোসেন, নরসিংদীর আহমেদ আলী, ঘোরাশালের মরিয়ম বেগম, ভৈরবের আশিক মিয়া, মদন প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ আল আমীন তালুকদারসহ অনেকেই জানান, এ ঘাট দেখেতে যে কাউকে বিমোহিত না হওয়ার উপায় নেই। হাওরের জল ও নৌকায় ঘুরাঘুরি যে কারো ভালো লাগবে। জলের মায়ায় নিজেকে চাইবে পর্যটকরা। হাওরটির সৌন্দর্য্য হৃদয়ে লেগে থাকার মতো।


তবে দূর-দূরান্তের লোকজনের সেবার কোন প্রকার সুযোগ-সুবিধা না থাকায় লোকজন চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সরকার এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করতে পারেন। এ ব্য্যপারে তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
নেত্রকোণা শহরের বাসিন্দা ও গণমাধ্যম কর্মী পল্লব চক্রবর্তী জানান, হাওরের কোল ঘেষা এ স্থানে দ্রুত শৌচাগার, স্থানে স্থানে ব্রাঞ্চ,খাবারের হোটেল, ডাকবাংলো করা দরকার। এগুলো করলেই বর্ষার ছয় মাস পর্যটকদের আনাগোনো বেড়ে যাবে।
গণমাধ্যম কর্মী ও কবি মামুন খান জানান,সম্প্রতি পর্যটকদের যাতে কোনো প্রকার সমস্যা না হয় সে লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। এ কমিটির উদ্যোগে বৃহষ্পতিবার জেলার গণমাধ্যম কর্মী ও স্থানীয়দের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা করা হয়েছে।
উচিতপুর পর্যটন সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি ও অধ্যক্ষ মোঃ শামছুল আলম তালুকদার জানান, আমরা স্ব-উদ্যোগেই পর্যটকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তবে বিপুল পরিমাণ লোকজনের সমাগম ঘটায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করে অচিরেই এই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলবেন বলে তিনি আশাবাদী।
মদন থানার ওসি মোঃ রমিজুল হক জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে এ অঞ্চলে দর্শাণার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। পুলিশ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। লোকজন পানিতে সতর্ক থাকার জন্য পুলিশ বিভাগের অর্থায়নে ঘাটে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওয়ালীউল হাসান জানান, সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা নিয়মিত সভা করেছি। পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।