নাটোর জেলা পরিষদের জমি বরাদ্দের অনিয়ম: মাস পেরিয়ে গেলেও মুখ দেখেনি প্রতিবেদন

নাটোর প্রতিনিধি: গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নাটোরের মোকরামপুরে জেলা পরিষদের লীজ দেয়া জমির অনিয়ম তদন্তে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন হয়। কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন। এরই মধ্য অবৈধ লীজ গ্রহিতারা বহাল তবিয়তে পাকা-কাচা দোকানঘর তৈরী করে তা থেকে মাসিক ভাড়া নিচ্ছেন।
জানা যায়, নাটোর জেলা পরিষদের মালিকানাধীন সদর উপজেলার মোকরামপুর এলাকায় জেলা পরিষদের ৫৭ শতক আয়তনের একটি পুকুরের লীজ প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয় উক্ত মৌজার ২নং খতিয়ানের ৫৮নং দাগের ২২ শতক ভূ-সম্পত্তি জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আলী আকবর তথ্য গোপন করে তার মেয়ে জামাই তারিক হাসান ও জামাইয়ের ভাই মেহেদী হাসানের নামে লীজ নিয়েছেন। শুধু তাই নয় সেই পুকুরে মাটি ফেলে ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে সাব লীজ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠে। যা নিয়ম (সরকারি প্রজ্ঞাপন/ রাষ্ট্রপতির আদেশ) বর্হিভূত। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৩ মে জেলা পরিষদের মাসিক সভায় জেলা পরিষদের সহকারি প্রকৌশলী শাহ মোঃ আশিবকে আহবায়ক করে, জেলা পরিষদের ২নং প্যানেল চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি, পরিষদের সদস্য অ্যাড. মানসী ভট্টাচার্য, সানাউল্লাহ আল আজাদ, আবু বক্কর সিদ্দিক, রইস উদ্দিন রুবেলকে নিয়ে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পরবর্তী মাসের মাসিক সভায় প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুরোধ হয়। কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও দেওয়া হয়নি সেই তদন্ত প্রতিবেদন। এরই মাঝে অবৈধ লীজ গ্রহিতারা তৈরী করেছেন পাকা-কাঁচা দোকানঘর। তা থেকে নিয়মিত-ই চলছে ভাড়া আদায়।
স্থানীয় পান ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন ও আনিছুর রহমান জানান, আমাদের সবার মোট ১৩টা পান আড়ৎ রয়েছে। প্রতি আড়ৎ থেকে মাসে ১২’শ টাকা ভাড়া দিচ্ছি। ভাড়া নিচ্ছে মেহেদী হাসান। পান আড়তের সিকিউরিটি বাবদ মোট দুই লাখ টাকা ইতিমধ্যে পান ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে লীজ গ্রহিতাদের প্রদান করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী জুয়েল হোসেন জানান, পুকুর ভরাট করে তারিক ভাই ও মেহেদী ভাই দোকান করে তার কাছে মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছে। একমাস হলো তিনি দোকানে উঠেছেন। মাসিক ভাড়া চুক্তিতে তিনি এখানে ব্যবসা করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, তদন্ত চলাকালিন অবস্থায় কিভাবে স্থাপনা নির্মান হয়। আবার সেখান থেকে প্রতিমাসে ভাড়া আদায় হয় তা বুঝে আসেনা। দ্রুত অবৈধ লীজ বাতিলের দাবী জানান তিনি।
দত্তপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জালাল উদ্দিন জানান, আগের ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান করে তা থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অবৈধ লীজ বাতিলে গণসাক্ষর সহ জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনেরও সাড়া মেলেনি। আমরা খুবই আশাবাদি ছিলাম যে তদন্ত করে দ্রুত সময়ে রিপোর্ট দিয়ে অবৈধ লীজ বাতিল করা হবে।
এ বিষয়ে লীজ গ্রহিতা মেহেদী হাসানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে দলবলসহ সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন তিনি।
এর আগে তারিক হাসান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জনগণের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে নিজ উদ্যেগে পুকুর ভরাট করে তিনি দোকানঘর করে দিয়েছিলেন। সাব লীজ দেবার কথা অস্বীকার করেছিলেন তিনি।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক জেলা পরিষদের সহকারি প্রকৌশলী শাহ মোঃ আশিব বরেন, নানা ব্যস্তায় এখনো তদন্ত কার্যক্রম এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি। লীজ গ্রহনের ব্যাপার যে অবৈধ তা আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। সাব লীজ দিয়ে ভাড়া আদায় হচ্ছে তাও আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। একটা চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে কি নির্মাণ কাজ ও ভাড়া আদায় কার্যক্রম বন্ধ রাখা যেতো না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, দ্রুত এ বিষয়ে প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, জেলা পরিষদের জায়গার ইজারার যে সকল অনিয়ম হয়েছে সে বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর সাথে কথা হয়েছে। নির্বাহী তাকে জানিয়েছেন লীজ নিয়ে অনিয়ম হয়েছে। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি এখনো রিপোর্ট দেয়নি। রিপোর্ট দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ লীজ অবশ্যই বাতিল হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী এনামুল হক বলেন, মোকরামপুর এলাকায় জেলা পরিষদের জমি লীজের অনেকগুলো অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। নিয়ম বহিভূত লীজ বিশেষ করে সাব লীজ, টাকা পয়সার অবৈধ লেনদেন এমন অভিযোগ চেয়ারম্যান বরাবরে আসার পরে মে মাসের মাসিক সভায় সার্বিকভাবে সরেজমিনে গিয়ে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তাদের তদন্ত প্রতিবেদনটি এখনো হাতে এসে পৌঁছায়নি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ লীজ বাতিল করা হবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।