ঈদে দৌলতদিয়ায় ১৯ ফেরি ও ১৯ লঞ্চ থাকবে

রাজবাড়ী প্রতিনিধি: দেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট। আর এ ঘাট দিয়ে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদ মৌসুমে যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুন। যা সামাল দিতে হিমশিম খান ঘাট কর্তৃপক্ষসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

তবে এবারের ঈদে ঘরমুখো ও ঈদ শেষে ঢাকামুখি যাত্রী পারাপারে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৯টি লঞ্চ এবং যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে ১৯টি ফেরির ব্যবস্থা করেছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএসহ অন্যান্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ।

বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে চলাচলকারী বেশির ভাগ ফেরি অনেক পুরাতন ও ত্রুটিপূর্ণ এবং ফেরি ঘাটে সমস্যা থাকায় ঈদ যাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন অনেকে। এছাড়া যাত্রীদের সুবিধার্থে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হ্যাচারী থেকে ঘাট এলাকা পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমান লাইটিং, টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ১৬ টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। রো রো ফেরি (বড়) ভাষা শহীদ গোলাম মওলা ছাড়া অপর ১৫ টি ফেরিই ত্রুটিপূর্ন। প্রায়ই এ ফেরিগুলো কোন না কোন যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিকল হয় এবং নারায়ানগঞ্জ ডগ ইয়ার বা পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় মেরামতের পর পুনারায় চালানো হয়। ভাষা শহীদ গোলাম মওলার মত আর দু-একটি ফেরি বহরে সংযুক্ত করা হলে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সহজ হতো।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয় সুত্রে জানাগেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৯৭৯ সালে রো রো ফেরি (বড়) খান জাহান আলী, ভাষা শহীদ বরকত, আমানত শাহ, শাহ আলী, শাহ মকদুম নামের পাঁচটি ফেরি বহরে যুক্ত হয়। ফেরি গুলো দীর্ঘ দিনের পুরানো হওয়ায় বয়সের ভারে বর্তমানে মাঝে-মধ্যেই বিকল হয়ে ভাসমান কারখানায় মেরামতে থাকছে। মেরামত করা হলেও কয়েকদিন পর আবার বিকল হচ্ছে। পরবর্তীতে কিছু ইউটিলিটি ফেরি বহরে যুক্ত হলেও সেগুলোর অবস্থাও ভালো না। এখন এই রুটে যানবাহন পারাপার স্বাভাবিক রাখতে আরো কয়েকটি নতুন ফেরির প্রয়োজন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফেরির মাস্টার জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি গুলো দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় তা খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। সামান্য স্রোত বা ঝড়ো বাতাস হলেই আর চলাচল করতে পারেনা। ঘাটে বসে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। এছাড়া স্রোতের কারণে অনেক পথ ঘুরে ঘাটে আসতে হয়, যাতে তেল খরচও বেড়ে যায়।

পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এনামুল হক অপু জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচলকারী ফেরি গুলো একদিকে যেমন দীর্ঘ দিনের পুরনো, অপরদিকে যতক্ষন কোন যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা না দেয় ততক্ষনই অপারেশনে থাকে। যে কোন ইঞ্জিনের চালু থাকার সময়ের পাশাপাশি বিশ্রামে থাকারও একটা সময় নির্ধারিত থাকে। কিন্তু এখানকার ফেরি গুলো সচল থাকলে ২৪ ঘন্টাই যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করে থাকে। এতে করে মেরাতম করা ফেরি গুলো আশানুরূপ সার্ভিস দিতে ব্যার্থ হয়।

তিনি আরো জানান, আসন্ন ঈদে চলাচলকারী ফেরিগুলো যাতে সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারে সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন। এছাড়া প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কারখানার সকল শ্রমিকের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট ব্যাবস্থাপক (বানিজ্য) মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ১৭ টি ফেরি চলাচল করছে। আসন্ন ঈদে বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দিতে আরো ২ টি ফেরি বহরে যুক্ত হবে, যা ২০ রোজার পর পর। এ রুটে চলাচলকারী ফেরিগুলো অনেক পুরাতন হওয়ার কারণে মাঝে মধ্যেই পুনর্বাসন করতে হচ্ছে ।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসামা সিদ্দিকা মিলি জানান, ঈদে ব্যাক্তিগত ও যাত্রীবাহি যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় দৌলতদিয়া প্রান্ত দিয়ে ঈদের আগের ৩ দিন ও পড়ের ৩ দিন পন্যবাহি ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে। ব্যাক্তিগত ও যাত্রীবাহি যানবাহনের সাথে পারাপার হবে পচনশীল পন্যবাহি ট্রাক। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, যানবাহনের সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ, যানজট মুক্ত, দালাল, চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ব দুর করতে ঘাট এলাকায় র‌্যাবের ১টি অস্থায়ী ক্যাম্প, পুলিশের ৫টি অস্থায়ী ক্যাম্পসহ পর্যাপ্ত পরিমান আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। পুরো ঘাট এলাকার সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণের জন্য টার্মিনাল এলাকায় তৈরি করা হচ্ছে একটি উচু ওয়াচ টাওয়ার। এছারা নদীতে নৌযানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌ পুলিশের পাশাপাশি থাকবে জেলা পুলিশের সদস্যরা। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ সব সময় তাদের পাশে থাকবে।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী জানান, ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহনে চাপ সামাল দিতে পর্যাপ্ত পরিমান লঞ্চ ও ফেরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া দৌলতদিয়া প্রান্তে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘরমূখো যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সরসারি জেল দেওয়া হবে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারের পাশাপশি ঘাট এলাকায় থাকবে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যামান আদালত।

 

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।