ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গার তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ : নিলাম ও জরিমানা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার আলীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলায় জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহাম্মেদ পলাশের অনুগামী শ্রমিক নেতা মোকারম সর্দারকে ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং তার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বিআইডিব্লিউটিএ’র ঢাকা নদী বন্দর। এছাড়া ফতুল্লা বালুরঘাট এলাকায় হাজী আলাউদ্দিনের অবৈধ বালুরঘাটের অবৈধ ১০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে জব্দকৃত বালু ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা করেছে ।

বৃহস্পতিবার অভিযানের তৃতীয় দিনে সকাল থেকে বিকেল অবধি ফতুল্লার আলীগঞ্জ থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলে।

এসময় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী জায়গায় বালু ফেলে ভরাটকৃত জায়গা ভেকুর মাধ্যমে অবমুক্ত করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। বিআইডিব্লিউটিএর নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেট শামীম বানু শান্তির নেতৃত্বে এ উচ্ছেদ অভিযানে ফতুল্লা থানা পুলিশ ও বিপুল সংখ্যক আনসার বাহিনীর সদস্য অংশ নেয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিআইডিব্লউটি এর ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম-পরিচালক আরিফ উদ্দিনসহ বিআইডব্লিউটিএ’র অন্যান্য কর্মকর্তারা।

বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক আরিফ উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযানের তৃতীয় দিনে আলীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলায় মোকারম সর্দারকে ১ লাখ টাকা জরিমানাসহ তার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে । এছাড়া ফতুল্লা বালুরঘাটে বেশ কিছু অবৈধ বালুর গদি উচ্ছেদ করে জব্দকৃত বালু ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা নিলামে বিক্রি করা হয়।
সদর উপজেলার ফতুল্লার পোস্ট অফিস থেকে আলীগঞ্জ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার তীর ও ওয়াকওয়ে দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা ও ভাঙচুরের অভিযোগে জিডি করেছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা বন্দর।

গত ৩ মে দায়ের করা ওই জিডিতে এতে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সরকার কর্তৃক নির্মিত ওয়াকওয়ে তারা অন্যায়ভাবে ব্যবহার সঙ্গে ব্যবসার কারণে সেটা ভেঙে ফেলেছে।

জানা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশে কয়েক বছর আগে বুড়িগঙ্গা নদীর ফতুল্লার পোস্ট অফিস থেকে আলীগঞ্জ পর্যন্ত সোয়া কিলোমিটার এলাকায় কোটি টাকা ব্যায়ে জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও সীমানা পিলার স্থাপন করা হলেও হাইকোর্টের নির্দেশের কোন তোয়াক্কাই করেনি প্রভাবশালী মহল। বরং প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওয়াকওয়েই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। আলীগঞ্জে টিসিবির ভবন সংলগ্ন এলাকা থেকে পিডব্লিউডি খেলার মাঠ পর্যন্ত এলাকাটি নিয়ন্ত্রন করে থাকেন জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহাম্মেদ পলাশ। এই এলাকাতেই মূলত ওয়াকওয়ের ত্রাহিদশা। আলীগঞ্জ মাদরাসা সংলগ্ন ঘাট থেকে কয়েক শ’ ফুট ওয়াকওয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেখানে এখন ওয়াকওয়ের চিহ্ন বলতেই নেই। অনেক স্থানেই ওয়াকওয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। আলীগঞ্জ মাদরাসা ঘাটে নদীর তীর দখল করে বসানো হয়েছে দু’টি বিশালাকারের ক্রেন। ২/৩টি এক্সাভেটরও (ভেকু) রয়েছে। অবাধে চলছে বালু, কয়লার লোড আনলোডিং কার্যক্রম। স্তূপীকৃত করে রাখা হয়েছে বালু ও কয়লা। স্থাপনা করা হয়েছে একাধিক বাশের জেটি। এসব সব নিয়ন্ত্রনে কাউসার আহমেদ পলাশ। ফতুল্লার ২৩টি শ্রমিক সংগঠন পলাশের নিয়ন্ত্রনে। এছাড়া আলীগঞ্জ পিডব্লিউডি মাঠের শেষ প্রান্তে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অসংখ্য কাঠের গুড়ি স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

বিআইডিব্লউটি এর ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম-পরিচালক আরিফ উদ্দিন জানান, বুড়িগঙ্গা নদীর তীর দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উচ্ছেদ অভিযানে ৩য় দিনের মত অভিযান করা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা বেশির ভাগই জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহাম্মেদ পলাশের অনুগামী লোকজনের। উচ্ছেদ অভিযান ধারাবাহিক ভাবে চলবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।