জমি লিখে না দেয়ায় বৃদ্ধ মাকে গোয়াল ঘরে বেঁধে রাখার অভিযোগ

কলমাকান্দা প্রতিনিধি : নেত্রকোণার জেলার কলমাকান্দার বড়খাপন ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামে জমি লিখে না দেয়ায় বৃদ্ধ মাকে গোয়াল ঘরে বন্ধি করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছেলে সবুজ মিয়া ও ছেলের বউ সাহেদা খাতুনের বিরুদ্ধে।

নির্যাতনের শিকার ফসর বানুর (৮৫) শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের আমজাদ আলী ২০১১ সালে ও ২০১৬ সালে একটি দলিল দেখিয়ে তার স্ত্রী ফসর বানুর অংশের জমি পাষন্ড ছেলে সবুজ মিয়া জোর পূর্বক দখল নেয়ার চেষ্ঠা চালায়। এ ব্যাপারে ফসর বানু বাদী হয়ে দুর্গাপুর জজ আদালতে দলিল বাতিল চেয়ে মামলা করেছেন। মামলা নং (৩৪/২০১৮)।
নির্যাতনের স্বীকার ফসর বানু জানান, তার স্বামী আমজাদ আলী প্রায় ১০ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। তার ৫ মেয়ে ও ৩ ছেলে। তারা হলেন, আবদুল হান্নান, আক্কাছ আলী, সবুজ মিয়া ও মেয়ে রহিমা খাতুন, আফরোজা আক্তার, মিনা আক্তার, স্বপ্না আক্তার এবং শাবানা আক্তার। বাদীর মেয়ে মিনা আক্তার ভাই সবুজের কাছে পৈতৃক সম্পত্তি দাবি করলে সবুজ মায়ের ওপর ক্ষিপ্ত হতে থাকে। সবুজ মায়ের জমির অংশ টুকুও লিখে নিতে চায়। কিন্তু মা ফসর বানু জমি লিখে দিতে না চাইলে তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। সবুজ মিয়া ও তার স্ত্রী সাহেদা আক্তার মিলে মাকে গোয়াল ঘরে দফায় দফায় নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতা।
তিনি আরও জানা যায়, ফসর বানুর নামে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডও রয়েছে। ওই কার্ডের টাকাও উত্তোলন করে হাতিয়ে নেয় সবুজ মিয়া।

সর্বশেষ গত রোববার মায়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেত দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে। প্রতিবেশীরা বৃদ্ধাকে রক্ষা করতে এলে তাদের খুনের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। বাদীর মেয়েরা খবর পেয়ে মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করাতে চাইলেও হাসপাতালে নিতে দেয়নি সবুজ ও তার স্ত্রী সাহেদা।

প্রতিবেশী জরিনা খাতুন জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। এ নিয়ে মাকে প্রায়ই মারপিট করে। রাতে গোয়াল ঘরে তালাবদ্ধ করে সকালে তালা খুলে দেয় সবুজ। এ ব্যাপারে শুধু জরিনাই নয় গ্রামের অনেকেই এই নির্যাতনের কথা তুলে ধরে পাষন্ড সবুজের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবী জানান।

বড়খাপন ইউপি সদস্য মঞ্জুরুল হক বলেন,এ বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সবুজ এলাকার কোন মানুষকেই তোয়াক্কা করছেনা। ছেলে ও বৌ হাতের নির্যাতনের কথা এলাকার সবার মুখে মুখে।
ফসর বানুর বড় ছেলে আবদুল হান্নান জানান, আমরা তিন ভাই পাঁচ বোন বসতবাড়িসহ .৬৬ শতাংশ পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে। তার মধ্যে ছোট ভাই সবুজ বিভিন্ন কৌশলে দলিল করে বাড়িসহ .৪২ শতাংশ ভূমি জোরপূর্বক দখল নেয়ার চেষ্ঠা চালায়। এর প্রতিবাদ করতে গেলেই আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও মারপিট করে। কিছুদিন পূর্বে মার উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় আমার পরিবার সাজেদা খাতুনকে মারপিট করে হাত ভেঙ্গে দেয় সবুজ।

ফসর বানুর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নির্যাতিত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘জমির লাইগ্যা ওরা আমারে মারধর করে। আটকে রাখে। আমি এর বিচার চাই।’

সবুজ মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান বলেন,বিষয়টি শুনেছি আমরা খতিয়ে দেখছি। সবুজ দোষী প্রমানীত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার মা ফসর বানুর পূর্নবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।