নেত্রকোণায় গ্রাম আদালতে ১০ মাসে ২৮২ টি মামলা নিষ্পত্তি

বিশেষ প্রতিনিধি: গ্রামীণ জনগণ বিশেষ করে নারী, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নেত্রকোণায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দিন ব্যাপী এই মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ আরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী, ইউএনডিপি’র কমিউনিকেশন এন্ড আউটরিচ স্পেশালিষ্ট অর্পণা ঘোষ।
সভায় গ্রাম আদালতে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিস্ট্রিক ফ্যাসিলেটর আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ। গ্রাম আদালতের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশনের সমন্বয়কারী আব্দুস সামাদ নয়ন।
মত বিনিময় সভায় উল্লেখ করা হয় যে, নেত্রকোণা জেলায় গত ১০ মাসে ৩৪৩টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ১১১টি দেওয়ানী মামলা ও ২৩২টি ফৌজদারী মামলা। নিষ্পত্তি করা হয়েছে ২৮২টি মামলা। মামলা নিষ্পতির শতকরা হার ৮২ % । নেত্রকোণার কেন্দুয়া, মদন ও দুর্গাপুর উপজেলার ২৮ টি ইউনিয়নে বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় কাযক্রম শুরু হয়েছে। এরমধ্যে গত দশ মাসে নেত্রকোণায় ২১ লাখ ৮২ হাজার ছয়শো টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মত বিনিময় সভায় নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট্র ও ইলেকট্রনিক মিডয়ার প্রায় ৫০ জন সংবাদ কর্মী অংশ গ্রহন করেন। মত বিনিময় সভায় তৃণমূল পর্যায়ে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান অতিথি মঈনউল ইসলাম বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে অল্প খরচে স্বল্প সময়ে ন্যায় বিচার পেতে পারে তার জন্য গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে বেশী বেশী সংবাদ প্রকাশ করে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, দরিদ্র ও প্রান্তিক এলাকার জনগণ যাতে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে কম সময়ে ও কম খরচে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে এ জন্য গণমাধ্যমকে বিভিন্ন ইতিবাচক সংবাদ প্রচারে ভূমিকা রাখতে হবে। আদালতে একটা মামলা দায়েরর পর কমপক্ষে দু বছর লেগে যায় পক্ষান্তরে গ্রাম আদালতে ২০/৩০ দিনের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তি করা যায়।তাই গ্রাম আদালত বাস্তবায়নে সবসময় থানার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, গ্রামে অনেক ছোটখাটো ঘটনা ঘটলেও সাধারণ মানুষ তার প্রতিকার চাইতে থানা বা জেলা আদালতে আসেন যাতে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। গ্রাম আদালতের সেবা সম্পর্কে গণমাধ্যম বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করে সাধারণ মানুষের মাঝে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও পর্যালোচনা করতে নীতি নির্ধারকবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি আরো বলেন, গ্রাম আদালতের বিচার উভয়পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি হয় বলে জনগণের মাঝে সম্প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে। তাই তিনি মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দকে গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম উপস্থিত সাংবাদিকদের মতামতের উত্তরে জানান, গ্রাম আদালতে ভালো সেবা দেয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দকে সন্মাননা প্রদান করার পরিকল্পনা আছে। এছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয় উল্লেখ করে তিনি সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদেরও বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে এ পর্যবেক্ষণে সহযোহিতা করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপি-এর পক্ষে অর্পনা ঘোষ, কমিউনিকেশনস ও আউটরিচ স্পেশালিস্ট, বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।