সুখাইড় জমিদারবাড়ি ভাটি বাংলার রাজমহল

মিঠু মিয়া , ধর্মপাশা প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নে অবস্থিত প্রায় ২৯০-৩০০ বছর আগের মোগল আমলের সুখাইড় জমিদার বাড়িটি ভাটি বাংলার রাজমহল হিসেবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও এখনো তা বেশ আকর্ষণীয় এই বাড়ি। একসময় বাড়িটিতে ছিল বাংলো, কাছারিঘর, জলসাঘর, গুদামঘর ও রেস্ট হাউস। কথিত আছে, গজারিয়া নদীর উত্তরপাড় হতে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল সুখাইড় জমিদার বাড়ির সীমানা।
ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৬৯১ সালে মোগল শাসনামলে মহামানিক্য দত্ত রায় চৌধুরী হুগলি থেকে আসাম যাওয়ার পথে কালিদহ সাগরের স্থলভূমির প্রাকৃতিক রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে সুখাইড়ে জায়গা কেনেন। ১৬৯৫ সালে জমিদার মোহনলাল ২৫ একর জমির ওপর এ বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। দৃষ্টিনন্দন নির্মাণ শৈলীর কারণে বাড়িটি একসময় হাওর এলাকার রাজমহল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
সুখাইড় জমিদার বাড়ির পশ্চিমে ধর্মপাশা, পূর্বে জামালগঞ্জ, উত্তরে বংশীকুা ও দক্ষিণে ঘাগলাজুর নদীর উত্তরপাড়। একসময় জামিদারদের মালিকানায় ছিল ধানকুনিয়া বিল, চারদা বিল, কাইমের দাইড়, সোনামোড়ল, পাশোয়া, ছাতিধরা,ধারাম, রাকলা, বৌলাই ও নোয়ানদীসহ ২০টি জলমহাল। জমিদারদের আয়ের উৎস বলতে ছিলÑ প্রজাদের ওপর ধার্যকৃত খাজনা, হাওরের মৎস্য খামার ও বনজঙ্গল। কিন্তু অযতে-অবহেলায় মোগল আমলের নিদর্শনগুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এককালে যে জমিদার বাড়ি ঘিরে পরিচালিত হতো প্রজাব্যবস্থা, সেই বাড়ির চারটি ভাগের মধ্যে এখনো বড়ো বাড়ি, মধ্যম বাড়ি ও ছোট বাড়ি টিকে আছে। জমিদারি পতনের পর বাড়িগুলোর অনেক বদ্ধঘর ও সিন্দুক রয়েছে, যা আজো খোলা যায়নি। কালের পরিক্রমায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাড়ির দেয়ালের নান্দনিক কারু কার্যগুলো।
কথিত আছে, সুখাইড় জমিদার বাড়ি পরিদর্শন করতে এসেছিলেন ইংরেজ প্রশাসক মি. বেলেন্টিয়ার। তিনি বেরিয়েছিলেন বাড়ির কাছের টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ শিকার করতে। সে সময়ই বেলেন্টিয়ারের হাতিকে তিনটি বাঘ আক্রমণ করে। মুহূর্তের মধ্যে বেলেন্টিয়ার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন সুখাইড়ের জমিদার মথুর চৌধুরী তিনটি বাঘকে গুলি করে হত্যা করেন। জ্ঞান ফেরার পর বেলেন্টিয়ার জমিদারকে নিজের রাইফেলটি উপহার দিয়ে দেন। ১৯২২-২৩ সালে সুখাইড়ে গড়ে ওঠা প্রবল নানকার বিদ্রোহ জমিদারি প্রথার ভিত নাড়িয়ে দেয়। এমন অনেক কাহিনি বিজড়িত এই জমিদার বাড়ি। ঐতিহ্যময় স্থাপত্যটি রক্ষায় প্রশাসন ও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন সুখাইড়বাসী। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এক অপরূপ পর্যটন নগরীতে পরিণত হতে পারে বাড়িটি।
সুখাইড় জমিদার বাড়ির বর্তমান বংশধর মোহন চৌধুরী এ প্রতিবেদককে জানান, আমাদের এই ঐতিহাসিক বাড়িটি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন পর্যটকরা আসেন। কিন্তু অর্থাভাবে আমাদের পক্ষে বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার যদি আমাদের এই বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের কাজে এগিয়ে আসে, তবে আমরা সাধুবাদ জানাব। ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোসাহিদ তালুকদার জানান, সুখাইড় জমিদার বাড়ি ধর্মপাশার অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী। এটি সংস্কার করে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি। এব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।