নেত্রকোণায় চার দিনেও হয়নি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা বরাদ্দ ৫০ মে.টন চাল ১৬ লক্ষ টাকা

বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোণায় কাল বৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করছে জেলা প্রশাসন। চারদিন পর শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ করেছে বিদ্যুত বিভাগ। নেত্রকোণা জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, জেলা পুলিশ ও পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরবাসীর মাঝে খাবার পানি সংগ্রহ করা হয়েছে। অনেক স্থানে গাছ পালা উপড়ে পড়ে থাকায় ঘর-বাড়িতে,বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ সংকট এখনো কাটেনি পৌর এলাকার অনেক স্থানে। ঝড়ের চার দিন পরেও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরী না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে।
এদিকে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান রোববার সন্ধায় নেত্রকোণার মেদিনী ও বাংলা ইউনিয়নে কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মেদনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান নোমান সহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক। পূর্বধলা উপজেলা প্রশাসন ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আয়োজনে পূর্বধলা সদর ইউনিয়ন ও খলিশাউড় ইউনিয়নের পাঁচশো পঞ্চাশ জনের মাঝে জিআর ২০ কেজি করে চাল ও নগদ জিআর ৫শত করে টাকা দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ৫০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বস্ব উপজেলাকে সব ধরণের ক্ষতি ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা প্রণয়নের জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সে অনুযায়ী কাজ করছে বলেও জানা গেছে। এছাড়াও জেলার ৩ হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ও ৫ হাজার ২শ হেক্টরের অধিক উঠতি বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নেত্রকোণা পৌরসভায় ৭ মে.চাল, নগদ ৩ লাখ টাকা,সদর উপজেলায় ১৮ মে. চাল, নগদ ৪ লাখ টাকা,পূর্বধলায় ৫ লাখ টাকা ১৫ মে চাল, আটপাড়ায় ১০ মে. চাল ও ২ লাখ টাকা এবং খালিয়াজুরীতে ২ লাখ টাকা নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য টিন বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল জানান, ঝড়ের দ্বিতীয় দিন একটি দূর্যোগ মোবাবেলার প্রস্তুতি সভা ডাকা যেত। আমাদের জেলার দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি কার্যক্রম খুব দূর্বল। দূর্যোগ মোকাবেলার জন্য একটি বাহিনী থাকা জরুরি, যাতে করে তারা যে কোনো দূর্যোগে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে পারে।
জেলা কৃসকলীগের সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকার বলেন, ৭২ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও কেন প্রশাসন দূর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি সভা করেনি। যদি সব দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হতো তাহলে বিধ্বস্ত এলাকাগুলি ও সাধারণ মানুষ দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতো। এখনো ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের বোরো ফসলের ক্ষতির তালিকা তৈরী করেনি কৃষি বিভাগ। অনেক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সরকারী বরাদ্ধ দেয়ার পরেও তা পায়নি।
নেত্রকোণা বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবারের কালবৈশাখী ঝড়ে নেত্রকোণা জেলা সদরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় ঘর-বাড়ির পাশাপাশি বিদ্যুতের শতাধিক খুঁটি উপড়ে পড়ে ও ভেঙে যায়। এছাড়া জেলার বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় বিভাগের (পিডিবি) ৩৩ কেভি (কিলো ভোল্ট) লাইনের ৭টি খুঁটি উপড়ে পড়ে, এছাড়াও ৩০টি ১১ কেভি খুঁটি ও ২টি গাছ বিদ্যুতের লাইনের ওপর পড়ে যায়। অপরদিকে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৯০টি খুঁটি ভেঙে গিয়ে জেলার কেন্দুয়া, আটপাড়া, মদন, সদর উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ বিছিন্ন রয়েছে।
নেত্রকোণা পিডিবির নিবার্হী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কয়েকদিনের মধ্যে জেলার সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবারাহ দেয়া সম্ভব হবে।’
এদিকে নেত্রকোণা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘জেলা শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিদিন রাতে ডিউটিরত পুলিশ ছাড়াও সাদা পোশাকে অতিরিক্ত পুলিশ টহল দিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় মোটরসাইকেল দিয়ে পুলিশ বাহিনী টহল দিচ্ছে।’
জেলা দূর্যোগ, ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, এখনো সম্পূর্ন তালিকা তৈরী করা হয়নি, দু’এক দিনের মধ্যে তালিকা প্রস্তুতের কাজ শেষ হবে। আসলে, আমরা তো উপজেলার কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়ে থাকি। তারা তালিকা প্রনয়ন করে পাঠালেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তাদের বিভিন্ন অযুহাতের কারণে তা বিলম্ব হচ্ছে বলেও দাবী করেনে তিনি।
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক হিসেবে ৩ হাজার ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। তালিকা প্রনয়ন করতে সকল উপজেলা প্রশাসন মাঠে কাজ করছে। তবে তালিকা তৈরীর কার্যক্রম বিদ্যুত না থাকার কারণে একটু বিলম্ব হয়েছে। সোমবার ৪ টায় জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা বলেও রয়েছে জানান জেলা প্রশাসক।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সকালে কালবৈশাখী ঝড়ে জেলা শহর সহ বিভিন্ন উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।