মদনে ধান কাটা নিয়ে বিরোধে ৩ ছাত্রকে আসামী করে চুরির মামলা

মদন প্রতিনিধি: নেত্রকোণার মদনে বিরোধপূর্ণ জমির ধান কাটা নিয়ে এক মামলায় এইচএসএসসি পরীক্ষার্থী ও নবম দশম শ্রেণীর ছাত্রসহ ১১ জনকে আসামী করে জমির মালিকের ছেলে রফিকুল ইসলাম বাবুল মদন থানায় একটি ধান চুরির মামলা দায়ের করেন।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের ভবানীপুর মৌজার বিরোধ পূর্ণ জমির বিআরএস দাগ নং ৩৪-৩৫। উক্ত ৫৩ শতাংশ ভূমি ১৯৯২ সালের ৭ জানুয়ারি ২২ হাজার টাকা নগদ প্রদান করে ভূমির মালিক উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের ভাগজান গ্রামের ইছাক মিয়া পিতা মৃত ফিরোজ নেওয়াজের নিকট থেকে মৌখিক ভাবে ক্রয় করে ভোগদখল করে আসছেন ওই গ্রামের নিরিহ কৃষক নূরুল ইসলাম।
২০১০ সালে উক্ত জমি বিক্রি করে নাই বলে ভূমির মালিক ইছাক মিয়া লোকমুখে প্রকাশ করেন। এতে নূরুল ইসলাম বিষয়টি গ্রাম্যমাতাব্বরগণকে জানালে ইছাক মিয়ার বাড়িতে ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি এক সালিশি বৈঠকে বসেন কুঠুুরিকোনা গ্রামের রহিছ উদ্দিনের নেতৃত্বে মাতাব্বারগণ। বৈঠকে উক্ত বিষয়ে ব্যাপক আলোচনার পর রেজিষ্ট্রি ছাড়া জমি কেন ক্রয় করা হলো এর জন্য ক্রেতাকে আরো বারো হাজার টাকা জমির মালিককে প্রদান করে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য রায় দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি মদন সাবরেজিঃ অফিসের দলিল লেখক আব্দুর রউফ ফেরদৌসের মাধ্যমে দলিল লেখার পর ভূমির মালিক ইছাক মিয়া ও তার ছোট ভাই এখলাছ মিয়ার মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হলে জমি রেজিস্ট্রি না করেই তারা বাড়ি চলে যায়। এর কিছুদিন পর উক্ত ভূমি অন্যস্থানে বিক্রি করার জন্য ইছাক মিয়া মদন সাবরেজিস্ট্র অফিসে এলে জমি ক্রয়কারী নূরুল ইসলাম বাঁধা দেয় এবং নেত্রকোনা হাকিমের আদালতে সত্যের দাবিতে একটি মামলা দায়ের করেন । পরবর্তীতে সে অসুস্থ্য হয়ে যাওয়ায় মামলার খোঁজ খবর নিতে না পারায় ২০১৮ সালে ইছাক মিয়ার পক্ষে একতরফা ডিগ্রী হয়। উক্ত ডিগ্রী পেয়ে ডিগ্রীর কাগজ পত্র মদন থানায় দায়ের করে জমি ফেরত চেয়ে অপর পক্ষ আইনি সহযোগিতা চায়। এরই প্রেক্ষিতে ৬ মে পুলিশ দু’পক্ষকে থানায় ডেকে স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে দশ শতাংশ জমির ধান কেটে তিন ভাগের একভাগ জমির মালিক ইছাক মিয়াকে দেওয়ার জন্য বলেন। উক্ত প্রস্তাব উভয় পক্ষ মেনে নিলেও ভূমির মালিক ইছাক মিয়ার ছেলে মামলার বাদী বাবুল গত শুক্রবার সকালে উক্ত ভূমির ধান কাটার জন্য শ্রমিক নিয়ে জমিতে গেলে দখলদার নূরুল ইসলাম এতে বাধাঁ দেয় এবং জমির ধান কেটে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে শুক্রবার ভূমির মালিক ইছাকের ছেলে বাবুল বাদী হয়ে মদন সরকারি হাজী আব্দুল আজিজ খান ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদ হৃদয়, জাহাঙ্গীরপুর টি. আমিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ফারুক, বাগজান কুটুরিকোনা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র তারেকসহ ১১ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
জমির দখলকার নূরুল ইসলাম জানান,থানার সিন্ধান্ত আমরা মেনে নিয়েছিলাম,শুক্রবার সকালে বাদী বাবুল লোকজন নিয়ে আমার রোপন কৃত বোরো ধান জোরপূর্বক কেটে নিতে চাইলে আমি বাঁধা দেই। পরে কে বা কারা ধান কেটে নিয়ে যায় আমি জানি না। তবে আমার এইচ এস সি পরীক্ষার্থী ছেলের লেখাপড়া নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে এই মামলা আসামী করা হয়েছে।
বাদী মোঃ রফিকুল ইসলাম বাবুল জমি বিক্রির কথা অস্বীকার করে জানান, তারা মামলা করে আমাদের পক্ষে রায় হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সঠিক উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
ইউপি সদস্য মোঃ মনসুর মিয়া জানান, জমির কাগজে পত্রে মালিক ইছাক মিয়ার ছেলে বাবুল শুক্রবার সকালে বিরোধপূর্ণ জমিতে ধান কাটতে গেলে এ অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে তবে গ্রাম্য সালিশে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
মাতাব্বর কুটুরি কোনা গ্রামের রহিছ উদ্দিন জানান, মানুষ বেইমানি করলে কিছু করার নেই। তবে নরুল ইসলাম ওই জমিটি ইছাকের কাছে থেকে ক্রয় করেছিল। অনেকেই এ বিষয়টি নিঃস্পত্তি করার জন্য আমার কাছে অনুরোধ রেখেছেন। আমিও এ ব্যাপারে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ফখর উদ্দিন আহমেদ জানান, সোমবার উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃংঙ্খলা সভায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তবে আমি বিষয়টি নিঃস্পত্তি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।
মদন থানার ওসি মোঃ শওকত আলী জানান,এ ব্যাপারে মদন থানায় ১১ জনকে আসামী করে ভূমির মালিক ইছাক মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম বাবুল একটি মামলা দায়ের করেন। তবে বিষয়টি নিঃস্পত্তি করার জন্য এলাকাবাসীকে বলা হয়েছে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।