তিন দিন ধরে পানি ও বিদ্যুৎ নেই! নেত্রকোণা পৌরসভা ও পুলিশের উদ্যোগে চলছে পানি সরবরাহ

বিশেষ প্রতিনিধি: শুক্রবারের ঘুর্ণিঝড়ে বিদ্যুত লাইন ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে টানা তিন দিন ধরে পানি ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে পুরো নেত্রকোণা। টানা বিদ্যুত না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে নেত্রকোণা জেলা শহর সহ বিভিন্ন উপজেলার জনগণ। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। জেলার একমাত্র আধুনিক সদর হাসপাতালে জেনারেটর না থাকায় শিশু ওয়ার্ডের রোগীরা হাসপাতাল ছেড়েছে ইতিমধ্যে। আর হাসপাতালে রোগীদের দূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। তবে নেত্রকোণা পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতিদিন চলছে পানি সরবরাহের কাজ। এছাড়া জেলা পুলিশের পক্ষেও দিন ভর চলছে খাবার পানি বিতরণ। রাতে ভূতুরে শহরে পরিনত হওয়ায় স্থানীদের মাঝে বেড়েছে আতংক। তবে দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
শুক্রবার সকালে নেত্রকোনা শহর সহ বেশ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকারী ঝড়ে ঘর বাড়ির পাশপাশি ভেঙ্গে গেছে বিদ্যুতের খুঁটি। আর এ কারণে জেলার নেত্রকোণা সদর, পূর্বধলা,আটপাড়া সহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ সরবারাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। এদিকে জেলার একমাত্র আধুনিক সদর হাসপাতালে জেনারেটর না থাকায় রোগীরা রয়েছে চরম দুর্ভোগে। জেলা উপজেলা শহর জুড়ে দেখা দিয়েছে পানি সংকটও।
এরি মধ্যে হাসপাতাল থেকে অনেক রোগীকে দেয়া হয়েছে ছাড়পত্র। কেউ আবার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে নিজে থেকেই চলে গেছেন অন্যত্র। আর যারা ভর্তি রয়েছেন তারাও প্রয়োজনীয় ঔষধ ও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর রাতে ভূতুরে শহরের মত আতংকে বিরাজ করছে শহরের সাধারণে মাঝে।
জেলা জুড়ে বিদ্যুত লাইন সংস্কারে দিনরাত কাজ করছে বিদ্যুত বিভাগ। দু’্্ এক দিনের মধ্যে শহরের আংশিক এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে এই নির্বাহী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন।
নেত্রকোণা বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবারের প্রলয়ংকারী কাল বৈশাখী ঝড়ে নেত্রকোণা জেলা সদর সহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় ঘর-বাড়ির পাশাপাশি বিদ্যুতের শতাধিক খুটি উপড়ে পড়েছে। কিছু কিছু খুুঁট ভেঙ্গে গেছে।
নেত্রকোণা বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় বিভাগ (পিডিবি)র ৩৩ কেভি (কিলো ভোল্ট) লাইনের ৭টি খুঁটি উপড়ে গেছে, এছাড়াও ৩০টি ১১ কেভি খুঁটিতে গাছপালা বিদ্যুতের লাইনের উপর পড়ে যায়। অপর দিকে নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৯০টি খুঁটি ভেঙ্গে গিয়ে জেলার খালিয়াজুরী, কেন্দুয়া, আটপাড়া, বারহাট্টা,মদন,সদর উপজেলা সহ জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে দেখা দিয়েছে তীব্রু পানি সংকট,সেই সাথে অনেক এলাকায় গ্যাস সরবারাহ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তপক্ষ ফলে দূর্ভোগের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। শহরের যান চলাচল অধিকাংশ যান চলাচল বন্ধ। কিছু কিছু হালকা যান চলাচল করলেও তাতে বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে কিন্তু কেউ কেউ বাড়তি ভাড়া দিয়েও রিক্সা,অটো সহ যান সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা শহরের বিদ্যুৎ না থাকায়, বিদ্যুৎ সরবারাহ বন্ধ থাকায় নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে রোগীদের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। চরম দূভোর্গে পড়েছে হাসপাতালের ভর্তি ও বহিঃ বিভাগের রোগী ও তাদের স্বজনেরা। শিশু ওয়ার্ডের রোগীরা বিদ্যুতের কারণে হাসপাতাল ছেড়েছেন। এছাড়াও ভর্তিকৃত রোগীরা হাসপাতালের বেড থেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। পর্যাপ্ত পানি সরবারাহ না থাকায় ময়লা ও দুর্গন্ধে ছড়াচ্ছে হাসপাতালের সৌচাগার গুলো। তীব্রু সংকট দেখা দিয়েছি বিশুদ্ধ পানির।
নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালের মা ও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আটপাড়া স্বরমুশ্বিয়া এলাকার বাসিন্দা রাশিদা বেগম বলেন,কাল রাতে তিনটি মোম জালিয়েও রাত শেষ হয়নি। সকালে পানি পায়নি, বাথ রুম থেকে র্দুগন্ধ চড়াচ্ছে। গরমের কারণে কাল রাতে বাচ্চা ঘুমাতে পারেনি,সুস্থ্যতার জন্য এসে আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
আধুনিক সদর হাসপাতালের স্কোনো ওয়ার্ডের সেবিকা শেফালি আক্তার বলেন, ভাই ঝড়ের কারণে এসি বন্ধ হয়ে গেছে,শিশুদের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাবে এমন আশংকায় শিশুদের তাদের মায়েদের কাছে দেয়া হয়েছে। আর অন্যদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
মহিলা ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সেবিকা স্মৃতি আক্তার বলেন, কারেন্ট নেই আমরাই অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যতটুকু পারছি সেটুকু সেবা দিচ্ছি। কারেন্ট নেই তাই রোগীদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। ভূক্তভোগী রোগী ও স্বজনরা বলছেন,জেলা সদরের একমাত্র হাসপাতাল সেখানে জেনারেটর নেই। একদম নিন্মমানের সেবা দেয়া হচ্ছে রোগীদের। বহিঃ বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা একজন রোগী নাম প্রকাশে অনিচ্ছা শর্তে বলেন, এই হাসপাতালটা শুধু নামে মাত্র আছে এখানে চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দেয় না শুধু এসে একবার ঘুরে দেখেই চলে যায়।
নেত্রকোণা সিভিল সার্জন তাজুল ইসলাম খানের মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জেলা শহরের বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে বিদ্যুৎ বিভাগ কজ করছে জানিয়ে নেত্রকোণা বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, ৩৩ কেভি লাইনের ৭ টি খুটি ভেঙ্গে পানিতে পড়ে যাওয়া একটু দেড়ি হচ্ছে,তবে আগামি কালের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
আর জেলা শহর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার বিদ্যুৎ সংযোগ ও বিদ্যুৎ সরবারাহ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজন। ময়মনসিংহ থেকে উন্নত মানের টেকনিশিয়ান এনে সমাধান করার চেষ্টা চলছে। নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মুজিবুর রহমান বলেন, ৯০টি খুঁটি ভেঙ্গে গেছে যাতে করে আমাদের লাইনের সমস্যা সমাধান করতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে জরুরি ভিত্তিতে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
জেলা কৃষি বিভাগসূত্র জানায়,এপযর্ন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে শিলাবৃষ্টিতে নেত্রকোণায় ৮ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমির উঠতি বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে।শুক্রবারের ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে চার উপজেলায় ৫ হাজার দুই ৪১ হেক্টর জমির পাকা বোরো ফসল নষ্ঠ হয়েছে। শনিবার ঢাকা থেকে কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মনিটরিং ড. আলহাজ উদ্দিন আহমেদ ও ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আসাদুল্লাহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম জানান, জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ না থাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো ঘটনায় জেলা পুলিশের হট লাইন নাম্বার খুলা রয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, শুক্রবারে কালবৈশাখী ঝড়ে প্রায় পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় যে সকল সমস্যা হয়েছে তা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। অচিরেই এ সমস্যা সমাধান হবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।