বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে কেন্দুয়ার মাছুয়াইল বিলের বোরো ফসল

মো. জিয়াউর রহমান, কেন্দুয়া : গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় মাছুয়াইল বিলের কয়েক শত একর বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছুয়াইল বিলের কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পরেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাছুয়াইল বিলের কয়েক শত একর বোরো ধানের জমি পানির নিচে। শ্রমিক সংকটের কারণে বিলের উচু এলাকার জমির ধান কৃষকরা কাটতে পারছেন না। আর পানিতে তলিয়ে যাওয়া পাকা ধান কচুরীপানায় ঘিরে ফেলেছে। কোনো কোনো কৃষককে কোমর পানিতে নেমে ধান কাটতে দেখা গেছে। তবে অনেকেই তাদের তলিয়ে যাওয়া ফসলের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। ফসল হারিয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিলপাড় থেকে বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার কোনো সংবাদ তার কাছে নেই।
স্থানীয় কৈলাটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ইসলাম উদ্দিন জানান, প্রায় ২৫ কাঠা (২৫০ শতক) জমিতে গাজী ও দেশী জাতের ধান রোপন করেছিলেন। এর মধ্যে ৪/৫ কাটা জমির ফসল কাটতে পেরেছেন তিনি। বাকি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তাই কাটাও সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, শুধু আমার নয় বিলপারের অনেকের ক্ষেত পানির নিচে। গত বছরও এভাবে তাদের ফসল হারিয়েছে বলে জানান ইসলাম উদ্দিন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সুরুজ আলী জানান, গত কয়েক বছর ধরে অকাল বন্যা আর শিলা বৃষ্টিতে কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারেন না। টানা ফসলহারা নিঃস্ব কৃষক বুক ভরা আশা নিয়ে এবার অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই বোরো ধানের বীজ বপন শুরু করেন। কিন্তু বীজতলায় অঙ্কুর গজাতেই নিন্মচাপের প্রভাবে সামান্য বৃষ্টিতে বীজতলা তলিয়ে নষ্ট হয় বীজতলা। পরে পুনরায় বীজ বপন করে বোরো ধান আবাদ করে কৃষকরা। বিলের পানি নিস্কাশনের একমাত্র রঙ্গিখালী খালটি কাকিনা বিলের অংশটুকু ভরাট করে বোরো ফসলের ক্ষেত তৈরী করায় বোরো মৌসুমে খালের স্বাভাবিক পানি চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এই সৃষ্ট জলাবদ্ধাতার ও এলাকার কৃষকদের দুর্দশার বিষয়টি স্থানী সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু ৫ মাসেও এই লিখিত আবেদনের কোনো সাড়া পেলাম না।
কেন্দুয়া উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে বিলটি অবস্থান। বিলের সিংহভাগ অংশটি পড়েছে উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ও সান্দিকোণা ইউনিয়নের সীমানায়। বাকি সামান্য অংশটুকু পাশ্ববর্তী ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের সীমানায়। এই বিলপারের রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কৈলাটি, ফতেপুর, দ্বিগর, সহিলাটি ও সান্দিকোনা মোকন্দাবাদ, হারারকান্দি, বিরামপুর এবং আঠারবাড়ি ইউনিয়নের স্ত্রীদেবপুর, রায়পুর, বাগড়াসহ আশেপাশের আরো কয়েকটি গ্রামের হাজারো কৃষকের বোরো ফসলের একমাত্র অবলম্বন হলো এই মাছুয়াইল বিল। বিলের সাথে সংযুক্ত বেতাই নদীসহ কয়েকটি খাল দিয়ে উজানের পানি এ বিলে নির্গত হয়। আর একটি মাত্র খাল রঙ্গিখাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমে কিংবা আগাম বন্যায় পানি সময়মত নিষ্কাশন না হওয়ায় এই দুর্যোগের কবলে পড়েন বিলপারের কৃষকরা। আর পানি নিষ্কাশনের রঙ্গিখালী খালটিতে পলি জমে বিলের চেয়ে উচু এবং কাকিনা বিলের অংশটুকু দখল হওয়ায় কয়েক বছর ধরে শুকনো মৌসুমেও এই বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যার কারণে এখন আর পুরো বিলে বোরো আবাদ করা সম্ভব হয় না।
এলাকাবাসির অভিযোগ, কৃষকদের আর্তনাদ ও তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনেন না। এই বিলের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে ও রঙ্গিখালী খালটি খননের দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী কিন্তু কোনো মহলই কর্ণপাত করছেন না। এ বিল এলাকার কৃষকের দুর্দশা নিয়ে একাধিকবার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুনজর পড়েনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চন্দন কুমার মহাপাত্রের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে শিলা বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে মাছুয়াইল বিলে বোরো জমি তলিয়ে গেছে এই খবর আমার কাছে নেই এবং এলাকার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও আমাকে জানাননি। কেন্দুয়ায় কোনো এলাকায় বোরো ধান ক্ষেত তলিয়ে যায়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকতাদিরুল আহমেদ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানান, কৃষি অফিসার বলেছে, তলিয়ে যাওয়ার আগেই ধান কেটে ফেলার জন্য কৃষকদের স্থানীয় উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়েছিলেন। যতটুকু জমি তলিয়েছে তার ধান আগেই কাটা হয়ে গিয়েছিল। কোনো জমির ধান তলিয়ে যায়নি বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।