সংস্কার কাজ শেষ হবার আগেই ভেঙ্গে গেছে মোহনগঞ্জ-গাগলাজুর ডুবন্ত সড়ক

বিশেষ প্রতিনিধি: নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ গাগলাজুর ডুবন্ত সড়ক (সাবমার্জেবল রোডের) মেরামত কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাস্তাটির অনেক স্থানে আরসিসি ঢালাইয়ে পাথর বালি সরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নির্মাণ কাজ চলা অবস্থায় সড়কটির বিভিন্ন অংশে এসব গর্তের সৃষ্টি হয়। ঢালাই করা কংক্রীট থেকে বালু পাথর ও রড বেরিয়ে পড়েছে । বৃষ্টির পানিতে কাঁদায় হ্যানট্রলির ও ছোট ছোট যানবাহন সৃষ্ট গর্তে আটকে যাচ্ছে ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার কাজে যেখানে সিমেন্ট পরিমাণ মত ব্যবহার করা হয়েছে সে স্থানটি ঠিকে আছে। আর যেখানে সিমেন্ট এর পরিমাণ কম দেয়া হয়েছে সেখানে ভেঙে যাচ্ছে। বর্তমানে ব্যস্ত এই সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় হাওর এলাকার মানুষ যাতায়াতের ভূগান্তিতে পড়েছে। কৃষকরা রাস্তাটিকে ধান পরিবহনের কাজে ব্যবহার করতে না পারায় বিশাল ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে পড়েছেন। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় প্রতি মণ ধান পরিবহনে ১০০’শ টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে।
মোহনগঞ্জের তেঁতুলিয়া থেকে গাগলাজুর পর্যন্ত ডুবন্ত সড়কটি নির্মাণ করা হয় ২০০৪ সালে। গত কয়েক বছর ধরে কিছু অংশ চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় সরকার এটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। দায়িত্ব পায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ২টি প্যাকেজে টেন্ডারের মাধ্যমে ২জন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়।
২০১৬ সালের ৭ আগস্ট শুরু হয়ে ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট এর মধ্যে কাজ সমাপ্ত করার জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। গত বছর কিছু কাজ করার পর সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। নিয়াজিত ঠিকাদাররা রাস্তার কাজটি কার্যাদেশ সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হন। চলতি বছরে পানি সরে যাওয়ার অনেক পর আবার কাজ শুরু হয়।
মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৬/১৭ অর্থ বছরের তেথুলিয়া থেকে গাগলাজুর পর্যন্ত পুরাতন ডুবন্ত সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন অংশ মেরামতের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ২টি প্যাকেজে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা বরাদ্ধ প্রদান করা হয়।
সাংবাদিকরা সরে জমিন সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে নওগাঁও এবং গাগলাজুর বাজারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কৃষক, কৃষি শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও যানবাহন চালকরা রাস্তা মেরামতের জন্য ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারকে দোষারুপ করে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের শাস্তি দাবী করেন। স্থানীয়রা জানায়, রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে সর্বস্থরের মানুষের সকল পরিবহন কাজে বিঘœ হওয়ার কারণে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে।
২য় প্যাকেজের ঠিকাদারের প্রতিনিধি হারুন অর রশিদ জানান, সিডিউল মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। কাজ চলা অবস্থায় রাস্তা বন্ধ না করায় ভেকু ও যান বাহনে রাস্তা নষ্ট করেছে।
মোহনগঞ্জের গাগলাজুর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, রাস্তার কাজের মান ভাল না হওয়ার বিষয়টি সময়ে সময়ে উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে মৌখিক অভিযোগ করলে উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুব আলম কোন তোয়াক্কা না করে কাজ চালিয়ে যান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় এমপি রেবেকা মমিন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান হাওরবাসীর দুঃখ কষ্ট লাগবের জন্য হাওরাঞ্চলে বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প (এইচএফএমএলপি) প্রকল্পের আওতায় রাস্তাটি সংস্কারের জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা বরাদ্ধের ব্যবস্থা করেন। সেই টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার হয়নি।
কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থা এলজিইডির মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুব আলম জানান, এই রাস্তায় ১০টন মালামাল নিয়ে যানবাহন চলাচলের উপযোগী। কিন্তু ২৫/৩০টন মাল বোঝাই করা ট্রাক ও মাটিকাটার ভেকু মেশিন (এক্স্রাভেটর) চলাচলের ফলে রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। তবে কোন অসুবিধা হবে না। রাস্তাটির নির্মাণকাজ এখনো চলমান। ঠিকাদারকে চূড়ান্ত বিল দেয়া হয়নি। ভেঙে যাওয়া রাস্তার অংশগুলো ঠিকাদার মেরামত করতে বাধ্য।
এবিষয়ে এলজিইডির(নেত্রকোণা) নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম ইসমত কিবরিয়া জানান,গত বছর আগাম বন্যা হওয়ায় রাস্তাটির কিছু অংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় আমরা ঠিকাদারকে পুণরায় সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছি।
এবিষয়ে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান,আমি সড়কটির ব্যাপারে লিখিত কিংবা মৌখিক কোনো অভিযোগ পাইনি। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে দ্রুত জনগণের দুর্দশা লাগবের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।