সবুজের গালিচায় স্বর্ণালী আভা ছড়াচ্ছে ফসলের মাঠ : হাওরাঞ্চলে চলছে ধান কাটা

স্টাফ রির্পোটার: আগাম বন্যায় ফসলের ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য মসজিদ-মন্দিরে প্রার্থনা, ফলন খুব ভালো, আর ১৫ দিন সময় পেলে সব ধান ঘরে উঠবে।
গত বছর নেত্রকোণা জেলায় আগাম বন্যায় সমস্ত বোরো ফসল বিনষ্ট হয়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেনি। তাই কৃষক এবছর বোরো ধান ঘরে তুলতে পারছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে হাওর এলাকায় বোরো ধান কাটা চলছে। কৃষকদের মনে আনন্দের সীমা নেই। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। এখন রোদের কারণে সবুজ ধান ক্ষেত সোনালী রঙ ধারণ করেছে। আর ১৫/২০ দিন সময় গেলে সকল ধান ঘরে উঠবে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা ।
নেত্রকোণার খালিয়াজুরী,মোহনগঞ্জ,মদন, উপজেলার বেশির ভাগ হাওরাঞ্চল হলেও কলমাকান্দা, বারহাট্টা, আটপাড়ায় হাওরাঞ্চল রয়েছে। এসব উপজেলায় আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধান কাটা শুরু হয়েছে। এপ্রিলের ১৫ তারিখ থেকে কাটা শুরু হবে ব্রি-২৯ ধান। এবার যাতে আগাম বন্যায় জমি না তলায় সেজন্য কৃষকরা প্রতিদিন যার যার ধর্ম অনুযায়ী মসজিদ/মন্দিরে প্রার্থনা করছেন। তবে ধান কাটা শ্রমিকের সংকট বোধ করছেন জমির মালিকরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিক আনার জন্য তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলেও জানান।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবছর নেত্রকোণায় বোরোর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লক্ষ ৮১ হাজার ২৩৮ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৯৩০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৬৯২ হেক্টর জমি বেশি আবাদ হয়েছে। আর হাওরাঞ্চলে বোরোর আবাদ হয়েছে ৪১,০১০ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকের কষ্ট স্বার্থক হতে পারে এবছর।
নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলায় মোট ৩ শো কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ রয়েছে। যার ১ শো কিলোমিটারের মতো অংশে এলজিইডি ও সড়ক বিভাগ তাদের রাস্তা নির্মাণ করেছে। বাকি অংশের ৮৫-৯০ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য এবছর সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ১৬ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা। পিআইসি কমিটির মাধ্যমে ইতিমধ্যে বাঁধের কাজও সমাপ্ত হয়েছে।
এদিকে, এ বছর আগাম বন্যায় পানিতে যাতে ফসল না তলায় সেজন্য বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ কাজও দ্রুত শেষ করা হয়েছে। বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণে যাতে কোনো প্রকার দুর্নীতি না হয় সেজন্য জেলা মনিটরিং কমিটি সার্বক্ষণিক নজরদারি করেছে। নেত্রকোণা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল রোববার জানান, এবার হাওর উপজেলাতেই প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। সরকার বিনা মূল্যে কৃষকদের বীজ সার দেয়ায় ফলনও বাম্পার হয়েছে। আর সারা জেলাতে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯০০ হেক্টর। এখন রোদের কারণে ধান দ্রুত পাকছে। কৃষকরা ধান কেটে বাড়িতে নিতে পারছেন।


নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আক্তারুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সঠিক নিয়মে পিআইসি কমিটি করা হয়েছে। প্রত্যেকটা কমিটিতে জমির মালিক, স্থানীয় এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ নিয়মমাফিক করাসহ সঠিক তদারকির মাধ্যমে শতভাগ কাজ আদায়ে চেষ্টা করা হয়েছে। সবার সহযোগিতায় বাঁধের কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। বড় ধরণের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবছর কৃষকের বোরো ফসল সুন্দর ভাবে ঘরে উঠবে।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, হাওর এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা তিনি ঘুরে দেখেছেন। সারা মাঠ এখন সবুজের গালিচা ছেড়ে স্বর্ণালী আভা ছড়াচ্ছে। সবুজ ফসলের মাঠে এখন সোনালী রঙের আভা। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ৬০ থেকে ৮০ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হবে। ধান পরিবহনে যাতে কোনো সমস্যা না হয় তার জন্যও তদারকি ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ধান বিক্রিকালীন সময়ে আইন-শৃংখলা বজায় রাখার জন্য পুলিশকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী জানান।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।