
মো. আনোয়ার হোসেন শরীফ, গৌরীপুর থেকে : ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সোমবার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, সাবেক শিক্ষক, সেরা অভিভাবক, জমিদাতা ও শিক্ষানুরাগীদের সংবর্ধনা, সাবেক ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের মিলনোৎসবের মধ্য দিয়ে পশ্চিমপাড়া সরকারি বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদযাপিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি। শতবর্ষ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি মেম্বার মো. মোস্তাকিম। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু রায়হান ও সহকারী শিক্ষক মো. মুরাদ হোসেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক দিলরুবা ইয়াসমিন।
বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত শতবর্ষের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর এ.কে.এম আব্দুর রফিক, গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রী (অনার্স) কলেজের অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার জুয়েল আশরাফ, বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিব উল্লাহ হাবিব, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন জুয়েল, আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিন্টু, শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হালিম, জুম গ্রুপ ইন্ডাস্টিজ লিমিটেডর মহাব্যবস্থাপক শতবর্ষ অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক প্রাক্তন ছাত্র হাবিবুর রহমান বাবলু প্রমুখ।
১৯১৮সালের নবী হোসেনের বৈঠকখানায় এ বিদ্যাপীঠটি জন্ম নেয়। এ-ঘর থেকে ও-ঘর ঘুরে অবশেষে সমেদ আলীর দেয়া ৫০শতাংশ ভূমিতে দাঁড়িয়ে অ-আ, ১-২ শৈশবের চিৎকারে ভূমিষ্ট হয় পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর ওই বছরেই একবার কসম উদ্দিনের বাড়িতে পরে লদুর বাড়িতে ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাসেম মাস্টারের বাড়িতেও চলে পাঠদান। ঠাঁই মিলে মক্তবেও। এ গ্রামের সন্তান দানশীল সমেদ আলীর দেয়া ৫০শতাংশ ভূমিতে ইয়াদ আলী হাজী, লদুর বাপ, পেচুর বাপ, তারাব খান পাঠান ও সদর উদ্দিন খানের শ্রমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। প্রথম প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনও করেন সদর উদ্দিন খান পাঠান মাস্টার।
বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৩২১জনের মধ্যে ১৭১জন ছাতও ১৪৮জন ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। প্রধান শিক্ষক দিলরুবা ইয়াসমিন ও সহকারী শিক্ষক হিসাবে নাসির মো. ইসতিয়াক, ফাতেমা আক্তার, রেজাউর রহমান, রুনা সুলতানা, শহীদুল্লাহ কায়সার, মো. মুরাদ হোসেন কর্মরত আছেন। ২০১৭সনে সমাপনি ৬৩জন ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। পাশের ৯২শতাংশ। এপ্লাস পেয়েছে জেরিন সুলতানা, বীথী আক্তার, শাহরিয়ার নাফিস প্রত্যয়। ট্যালেন্টপুল শাহরিয়ার নাফিস প্রত্যয় ও সাধারণ গ্রেডে আশরাফুল ইসলাম বৃত্তি লাভ করে। সহকারী শিক্ষক হিসাবে নাসির মো. ইসতিয়াক জানান, বর্তমানে শিশু শ্রেণিতে ৩১জন, ১ম শ্রেণিতে ৪২জন, ২য় শ্রেণিতে ৫৩জন, ৩য় শ্রেণিতে ৭৯জন, শ্রেণিতে ৪র্থ শ্রেণি ৫৮জন ও ৫ম শ্রেণিতে ৫৮জন ছাত্রছাত্রীকে পাঠদান দেয়া হচ্ছে।
লেখাপড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবার খেলাধুলায়ও চমক সৃষ্টি করেছে এ বিদ্যালয়টি। ২০১৭সালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপে ইউনিয়ন পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ান ও উপজেলায় রানার আপ হয়। সহকারী শিক্ষক মো. মুরাদ হোসেন জানান, স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ে ক্রিকেট, ভলিবল ও এ্যাথলেটিক্সেও কয়েকবার চ্যাম্পিয়ান হয়।
দেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনামধন্য লেখক আসকার ইবনে সাইক (উবাইদুল্লা) ও কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর গুলিতে নিহত হাফিজ উদ্দিন, ন্যাপের প্রয়াত মহাপরিচালক ফজলুর রহমানও এ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ৫ম শ্রেণির ১৯৩০ব্যাচের ছাত্র আবুল কাসেম ম্যানেজার ছিলেন নেত্রকোণার সাবেক জেলা সমবায় অফিসার, সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ অধ্যক্ষ ডক্টর এ.কে.এম আব্দুর রফিক, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রফেসর ডা. আব্দুল মজিদ, কর্ণফুলী পেপার মেইলের রেঞ্জ অফিসার বাবলু মিয়া, পিডিবি’র সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু হাসান খান পাঠান, চরনিখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আজিজ বিএসসি, ট্রেনোগ্রাফার কলিম উদ্দিন, বেক্সিমকোর ডেপু ইনচার্জ আলী এমদাদ খান মোহন, জুম গ্রুপ ইন্ডাস্টিজ লিমিটেডর মহাব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বাবলু, পুলিশ বদরুল আলম বাচ্চু-সহ দেশ ও দেশের বাহিরে শত আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিয়েছে এ বিদ্যাপীঠ। শৈশবের মহোৎসবের যোগ দিতে এসেছেন ১৯৫৮সালে প্রথম আর দ্বিতীয় স্থান নিয়ে লড়াকু জুটি সাবেক ছাত্র আবুল কাসেম মাস্টার ও সাবেক ছাত্রী হাসিনা বানুও।