ধর্মপাশায় বোরো ধান কাটা শুরু: কৃষকদের মুখে হাসি

মিঠু মিয়া ধর্মপাশা  প্রতিনিধি:সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে আগাম ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন ধানের শীষের সবুজে ও সোনালী রংঙের বর্ণিল ধানের সমাহার।
বোরো ধান কাটা শুরু হওয়াতে কৃষকদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে। হাওরে হাওরে পাকা ও আধা পাকা ধান বাতাসের তালেতালে দুলছে। ধানের মৌ মৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। জমিতে পাকা ধান দেখে কৃষক-কৃষাণীসহ জনমনে স্বস্তি বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার  দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, ধর্মপাশায় উপজেলায় যতদুর চোখ যায় শুধু সবুজ ও সোনালী রঙের চোখ ধাঁধাঁনো দৃশ্য। মাঠ জুড়ে সবুজ ও সোনালী রং বলে দিচ্ছে গ্রাম বাংলার কৃষকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা ইরি-বোরো ধান চাষের দৃশ্য। সর্ববৃহৎ। চন্দ্রসোনার  থাল হাওর ও সোনামড়ল হাওর সহ অন্যান্য ছোট বড় হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান কাটা শ্রমিকদের সাথে জমির মালিকরাও আনন্দে ধান কাটছেন।

এ সময় উপজেলার রাজাপুর  গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আব্দুল হাই বলেন, এবার বোরো ফসল কাটতে পেরে আমরা অনেক আনন্দিত। এবার ব্রি ২৮ ধানে ছিটা হয়েছে। ফলনও ভাল হয়নি। তবে ব্রি ২৯ ধানের ফলন খুবই ভাল হয়েছে। এবার আমি ৬ কেদার ২৮ ও ৬ কেদার ২৯ ধান চাষাবাদ করেছি। আশা করছি ২৮ ধানের ক্ষতি ২৯ ধান দিয়ে পুষানো যাবে। কৃষক আশিক আলীর মতো অন্যান্য কৃষকরাও এভাবে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।

এছাড়া জমির পাকা ধান গোলায় তুলতে অন্যান্য কৃষকরাও ধান কাটার মেশিন, ধান কাটার শ্রমিক সংগ্রহ, ধান মাড়াইয়ের মেশিন সংগ্রহ, ধান শুকানোর খলা ও ধান রাখার গোলা তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রকৃতি অনুকুলে থাকলে আর মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে কৃষকরা জমির ধান গোলায় তুলতে পারবেন বলে স্থানীয়রা জানান।

প্রসঙ্গত-গত বছর হাওর ডুবিতে কাচা ফসল হানির ঘটনায় কৃষকদের আহাজারিতে চারদিকে হাহাকার ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে সারা বছর কৃষকদের চাল ও টাকা দিয়ে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন রাখে। এতে ভাতের অভাবে কোন মানুষকে কষ্ট পেতে হয়নি। এবার জমির পাকা ধান কাটতে পেরে কৃষকদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে। কৃষকদের সাথে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে।ব্যাপারে ধর্মপাশা  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুয়েবুর রহমান বলেন,ধর্মপাশা উপজেলায় ৩১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে।  গত কয়েক দিন ধরে ব্রি ২৮ ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রকৃতি অনুকুলে থাকলে এবার বাম্পার ফলন গোলায় উঠবে।আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সঠিক সময়ে চারা লাগানো, নিবিড় পরিচর্যা, যথা সময়ে সেচ দেওয়া, সার সংকট না থাকায় উপজেলার কৃষকরা কিছু নতুন জাতের ধান চাষ করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাল সার কম দেয়া, তাপমাত্রার ভারসাম্যহীনতা সহ বিভিন্ন কারণে ২৮ ধানে সামান্য ছিটা হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। অন্য ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি প্রকৌশলী ধর্মপাশা উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত (এসও) নাসির উদ্দিন বলেন, ধান কাটা শুরু হওয়াতে কৃষকদের সাথে আমরাও আনন্দিত। যদিও এবার হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাধের খুবই ভাল হয়েছে। এরপরও প্রকৃতির সাথে কারো হাত নেই। যদি প্রকৃতি অনুকুলে থাকে তবে এবার বাম্পার ফসল পাবেন কৃষকরা।উপজেলার রাজাপুর দক্ষিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানুর রেজা চৌধুরী বলেন, গত বছর হাওর ডুবিতে ফসল হানির ঘটনায় কৃষকরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এবার বাম্পার ফসল গোলায় উঠলে কিছুটা হলেও পুরণ হবে। এছাড়া ধান কাটা শুরু হওয়াতে কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আলাদা আনন্দ বিরাজ করছে।উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের কৃষক আল আমিন মিয়া জানান আমি
বর্তমানে জমির পাকা ধান গোলায় তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। এবার জমিতে ভাল ধান উৎপাদন হয়েছে। ধান গোলায় উঠলে কিছুটা হলেও গত বছরের ক্ষতি পুষানো যাবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।