নেত্রকোণায় দম্পতি খুনের ৬ মাস পর রহস্য উদঘাটন: গ্রেফতার ৫ : স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

বিশেষ প্রতিনিধি:  নেত্রকোণায় নিজ বাড়িতে দম্পতি খুনের প্রায় ছয় মাস পর অবশেষে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভিস্টিকেশন (পিবিআই)। চাঞ্চল্যকর এই দম্পতি হত্যার মূল রহস্য বের হয়েছে। সোমবার বিকেলে ময়মনসিংহের পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বক্কর সিদ্দিকসহ পুলিশের উধ্বতন কর্মকর্র্তারা সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পিবিআই জানায়, নেত্রকোণার শহরের সাতপাই এলাকার কাশেম মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া (২১), হেলাল উদ্দিনের ছেলে পলাশ মিয়া (২২), সালাম মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া (২১) ও পারলা এলাকার কাশেম মিয়ার ছেলে আতিকুল (১৯) নাগড়া এলাকার হাকিম মিয়ার ছেলে পলাশ (২১)সহ ছয়জন গত বছরের ১০ অক্টোবর সন্ধায় বাসায় ঢুকে ওই দম্পতিকে হত্যা করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এর তিন দিন পর ১৩ অক্টোবর, স্থানীয়রা টের পেয়ে পুলিশকে সংবাদ দিলে শুক্রবার দুপুরে শহরের সাতপাই এলাকায় বাবলু স্মরণী সড়কের পাশের বাড়ি থেকে পুলিশ মিহির কান্তি বিশ্বাস (৭০) ও তার স্ত্রী তুলিকা রানী চন্দ ওরফে সবিতার (৫৮) লাশ উদ্ধার করে। মিহির সর্বশেষ, নেত্রকোণার সদর উপজেলার কৃষ্ণ গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তার স্ত্রী তুলিকা সমাজসেবা অধিদপ্তরের নেত্রকোণা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের দায়িত্বে ছিলেন।
গতকাল রবিবার পিবিআই এর পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে আজ বিকেলে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করলে আসামীরা ১৬৪ ধারার জবান বন্দিতে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
স্থানীয় বাসিন্দা পুলিশ ও নিহত দম্পতির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের আধাপাঁকা বাড়িটিতে মিহির কান্তি ও তুলিকা চন্দ একাই থাকতেন। এলাকায় তারা স্বজ্জন হিসেবে পরিচিত। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে সুমন বিশ্বাস ঢাকায় আর মেয়ে সুস্মিতা বিশ্বাস (৩২) সিলেটে স্বামীর সঙ্গে থাকেন।
আর বাড়িটির একাংশের একটি কক্ষে ভাড়াটিয়া রাজীব পন্ডিত (২৮) একাই থাকেন। তিনি মৎস্য অধিদপ্তরের সদর উপজেলায় ক্ষেত্র-সহকারী হিসেবে কর্মরত।
তিনি ঘটনার পর জানান, ১১ অক্টোবর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে খাবারের পানি আনার সময় সর্বশেষ দেখা হয় তুলিকা চন্দের সঙ্গে। এরপর থেকে তাদের আর সাড়া মেলেনি। দুই দিন পর শুক্রবার (১৩অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ভাড়াটিয়া রাজীব খাবারের পানি সংগ্রহ করতে মটার চালানোর জন্য তুলিকা চন্দের সন্ধানে খোঁজ নেন। এ সময় ঘরের দরজার কাছে দুর্গন্ধ পাওয়ার পর তিনি প্রতিবেশীদের ডাকেন। পরে প্রতিবেশীরা ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার হাসান চৌধুরীর উপস্থিতিতে তালা ভেঙে রান্নাঘরের মেঝ থেকে তুলিকার ও ঘরের খাটের ওপর মিহিরের লাশ দেখতে পান।
খবর পেয়ে পুলিশ ওইদিন দুপুর দেড়টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে বিকেলে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতল মর্গে পাঠায়। ওই দিন গভীর রাতে নিহতদের ছেলে সুমন বিশ্বাস বাদী হয়ে নেত্রকোণা মডেল থানায় খুনসহ ডাকাতির মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়। হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), বিশেষ শাখা (ডিএসবি), র‌্যাব ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভিস্টিকেশন (পিবিআই) কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা বিভিন্ন আলামতও সংগ্রহ করে। লাশ উদ্ধারের দুই দিন পর শহরের সাতপাই নদীরপাড় এলাকার নয়ন মিয়া (৪০) ও সাতপাই পালপাড়া এলাকার সালমান মিয়া (২৪) নামে দুই ব্যক্তিকে আটকও করে। পরে তাদের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
এ দিকে ওই খুনের রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় মামলাটি গত ৭ নভেম্বর পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভিস্টিকেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়। নেত্রকোণা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে ময়মনসিংহের পিবিআইকে তদন্ত করতে দেয়া হয়।
জানতে চাইলে পিবিআই ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, আমরা আসামীদের গ্রেফতার করে ঘটনার প্রকৃত রহস্য বের করেছি। আসামীরা ১০ অক্টোবর সকালে ওই বাসায় ( কাজের লোক হিসেবে) গাছের ডাল কাটার পর পারিশ্রমিক নেয়ার সময় মিহির কান্তির স্ত্রী তুলিকা চন্দ ড্রয়ার খুলে টাকা দিতে গেলে দেখে যে ড্রয়ারে আরো অনেক টাকা আছে। ওই সময় পারিশ্রমিক নিয়ে চলে যায়। পরে একই দিন সন্ধার পর বাসায় পিছনের দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে টাকা ও স্বর্ণালংকার নেয়ার সময় প্রথমে মিহির কান্তি দেখে ফেলে। এসময় আসামীরা মিহির কান্তিকে গলা টিপে হত্যা করে। মিহির কান্তিকে গলা টিপে হত্যার সময় স্ত্রী তুলিকা চন্দ এগিয়ে এলে তাকে গলা টিপে হত্যা করে আসামীরা। আজ বিকেলে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করলে আসামীরা ১৬৪ ধারার জবান বন্দিতে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

 

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।