গৌরীপুরে বিনা বেতনে ৩৯ বছর যাবত পাঠদান

মো. আনোয়ার হোসেন শরীফ, গৌরীপুর থেকে : বেতন নেই, ভাতা নেই; এরপরেও থেমে নেই পাঠদান। বিনাবেতনে ৩৯বছর যাবত শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের টিকুরী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা। প্রতিবছর প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীও অংশ নিচ্ছে। শতভাগ পাসের কৃতিত্বও আছে। তবে উপবৃত্তি সুবিধা বঞ্চিত হওয়ায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রতিবছরই কমছে।
মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সহকারী শিক্ষক মৌলভী মো. আমজাদ হোসেন আজাদ জানান, মাদরাসা ১৯৮০সনে প্রতিষ্টিত। এ মাদরাসায় ১ম শ্রেণিতে ৫০জন, ২য় শ্রেণিতে ৪০জন, ৩য় শ্রেণিতে ২৫জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ৯জন ও ৫ম শ্রেণিতে ৫জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। ২০১৭সনে এ মাদরাসা থেকে প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় ৬জন অংশ নেয়। স্বীকৃতি অর্জন করে ১৯৮৩সালে। মাদরাসার কোড নং ৫২৮৬৯, ইআইএন নং ৮০১৮৪১। প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে চাকুরী যোগদান করেছি। যোগদানের পর দেখি বেতন-ভাতা নেই। চার সদস্যের পরিবার-পরিজন নিয়ে দৈন্যদশায় কাটছে দিন।
মাদরাসায় ১৯৮৩সন থেকে মো. আমজাদ হোসেন আজাদ, ১৯৮৫সন থেকে মেহেরুনন্নেছা, ২০০৫সন থেকে শরিফা আক্তার ও একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মূলে আবেদন করে ২০১১সন থেকে রাবিয়া বেগম সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক পদে খাদিজা বেগম যোগদান করে পাঠদান করে আসছেন। দীর্ঘদিন যাবত বেতন না পাওয়ায় প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দিয়ে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়েছেন ৫জন। সহকারী শিক্ষক পদেও যোগ দিয়েই এক বছরও থাকেন আরো অনেকেই। নিজের জমিতে এলাকার ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার আলো বিস্তারে মনোযোগী মো. আমজাদ হোসেন আজাদ অবশ্য এ মাদরাসা ছেড়ে যেতে পারেননি। বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী তানজিনা আক্তার, ৫ম শ্রেণির ছাত্র শরিফ মিয়া জানান, স্যার ও ম্যাডামরা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। ২য় শ্রেণির ছাত্রী কুলসুম আক্তার জানায়, আপা খুব ভালো। আদর করেন। বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসার প্রতিযোগিতায় তিনি আমাদের চকলেট দেন। তবে অভিভাবকরা জানান, পাশের স্কুল ও মাদরাসায় ছাত্রছাত্রীরা উপবৃত্তি পায়, এ মাদরাসায় ২০১৩সন থেকে বন্ধ থাকায় আমাদের ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ এখানেই দরিদ্র ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করছে।
এ দিকে প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম ও সহকারী শিক্ষক রাবিয়া বেগম পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘সরকারি বিধিমোতাবেক’ দেখেই এ মাদরাসায় যোগদান করেন। তারাও এমপিওভুক্তি পাননি। অপরদিকে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তারুণ্যদীপ্ত যৌবন সব বিলিয়ে দিয়েছেন আজাদ। পরিবারের ১২ সদস্য নিয়ে জীবনের শেষপ্রান্তে এখনও প্রতীক্ষার প্রহর গুনচ্ছেন, হয়তো এমপিওটা দেখে যেতে পারবেন। অন্য দু’ শিক্ষকের পরিবারে আর্থিক অনটনে কাটছেদিন।
সরজিমনে দেখা যায়, পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষকগণ আন্তরিক। শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে ছাত্রছাত্রীদের অংশ গ্রহণ রয়েছে। মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জসিম উদ্দিন জানান, এলাকার ছাত্রছাত্রীদের দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায় বঞ্চিত শিশুদের অগ্রসর করছে এ মাদরাসাটি। এলাকার বঞ্চিত ও দরিদ্র পরিবারের সিংহভাগ শিশু এ মাদরাসাটিতে পড়ে। তাই ছাত্রছাত্রীরাও বেতন দিতে পারে না। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাগন বিনাবেতনে পাঠদান করে যাচ্ছেন। তাদের এমপিওভুক্ত দ্রুত প্রয়োজন। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুল আলম বলেন, মাদরাসা শিক্ষকরা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকার তাদের বিষয়ে দ্রুত একটি নীতিমালা করতে যাচ্ছে। তারপর হয়তো সরকার তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।