
মো. আনোয়ার হোসেন শরীফ, গৌরীপুর প্রতিনিধি : দ্বিতীয় শিফটে ৪টি কক্ষে ২৪৫জন ছাত্রছাত্রী। আছেন ১০জন শিক্ষকের স্থলে মাত্র ৩জন শিক্ষক। ফাঁকা ক্লাসের শিক্ষার্থীদের এলোমেলো দৌঁড়ঝাপ, কেউ ব্যাট-বল হাতে ‘ছয়-চারের’ মারতে ব্যস্ত। ততক্ষণে জানাগেলো এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকগনও শিক্ষা উপকরণ মেলা নিয়ে ময়মনসিংহে ন্যস্ত। সোমবার এ অবস্থা বিরাজ করছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এ দিকে সরকারপাড়া পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন একবারে তালা বুঝিয়ে সবাই চলে গেলেন ময়মনসিংহের উপকরণ মেলায়। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আম্বিয়া আক্তার শাহীন জানান, উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেই তারা মেলায় গেছেন। তবে শিক্ষা বিভাগের খোদ বড়কর্তা উপজেলা শিক্ষা অফিসার জুয়েল আশরাফও জানেন না, এ বিদ্যালয় বন্ধ করে সব শিক্ষক মেলায় যাওয়ার বিষয়টি। তিনি জানান, মেলাও শিক্ষার অংশ। উপজেলার প্রায় ৫০জন শিক্ষক এ মেলায় এসেছেন। তাদের মধ্যে পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও ৪জন শিক্ষক রয়েছেন।
অধিকাংশ বিদ্যালয়ের দরজা নির্ধারিত সময়ে খোলা ও বন্ধ হচ্ছে না এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শিক্ষকদের গমন রেজিস্টারও চালু নেই। ঝড়েপড়া রোধে হোম ভিজিটের বালাই নেই। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদযাপনে উপজেলা পর্যায়ে ঢাক-ডোল পিটিয়ে ৬মার্চ থেকে শুরু হয় দিবসের কর্মসূচী। এবারের শ্লোগান ‘মানসম্মত শিক্ষা- শেখ হাসিনার দীক্ষা’ এ মর্মবাণী পৌঁছেনি ইউনিয়নের সিংহভাগ স্কুলে।
উপজেলা সদরের সামনে শিক্ষা অফিসের মাত্র ১০গজ দূরে অবস্থিত পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়টিতে ‘সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী’র নির্দেশে এক ছাত্রকে বের করে ও তার বাবা প্রধান শিক্ষক মারধোর দেয়ায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেই প্রধান শিক্ষক একেএম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌস আরেক সহকর্মীকে পেটানোর অভিযোগে তিনিও আজ সাময়িক বরখাস্ত। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামীম আরা। সোমবার (১২মার্চ/১৮) এ বিদ্যালয়টি মাত্র ক্লাস নিচ্ছেন মো. মতিউর রহমান, নাজমা বেগম ও রোজি সুলতানা। প্রশিক্ষণে রয়েছেন মিনান নাহার, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে সাবিরা আক্তার। বাকী ৪জনই মেলায়। নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শুরু ও শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়ার সময়ে খেলাধুলা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এ বিদ্যালয়টি উপজেলার মডেলখ্যাত!
স্কুলের সামনে অপেক্ষমান অভিভাবক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আমরা বড় সমস্যায় আছি। মডেল এখন আর মডেল নাই। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রোজি সুলতানা বলেন, সোমবার ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষক মুঠোফোনে জানায় তিনি সহ অন্যান্য শিক্ষকরা উপকরণ মেলায় আছেন। আমরা তিন শিক্ষক স্কুলের ক্লাসগুলো যেনো চালিয়ে নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামীম আরা জানান, শিক্ষা বিভাগের নির্দেশেই আমরা উপকরণ মেলায় গিয়েছি।
অপরদিকে সোমবার সকালে সরকারপাড়া পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিস্কুট বিতরণ করেই ছুটির ঘন্টা বাজার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্জিনা আক্তার বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।