নাটোর শহরে রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ

নাজমুল হাসান, নাটোর: নানা অনিয়য়ের মধ্যে দিয়ে নাটোর শহরে চলছে রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজ। অবৈধভাবে গাছ কাটা, উচ্ছেদে লেনদেন, দায়সারা ড্রেন নির্মাণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। আর একারণে নাটোরবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ না হওয়ায় প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য থেকে শহরবাসী বঞ্চিত হবে বলে জানিয়েছেন তারা। তবে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
জানা যায়, নাটোর শহরের ভিতর দিয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তার প্রশস্তকরণ ও ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এর আগে রাস্তা নির্মাণের জন্য সওজ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নামে। শুরু হয় মাপজোক ও চিহ্নিত করার কাজ। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ইচ্ছেমতো মাপজোক করায় অনেক বৈধ জমির মালিকও ক্ষতিগ্রস্থ হন। টাকা দিয়ে অনেকে অবৈধ জায়গা টিকিয়ে রেখেছে। আবার টাকা না দেওয়ায় অনেকের বৈধ জায়গা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে আতঙ্কে অনেকেই টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই রাস্তার দুই ধারের গাছকাটা হয়েছে। অন্যদিকে, রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণের প্রকল্প থাকলেও তা পরিবর্তন করে সওজের সীমানা ঘেঁষে করা হচ্ছে। ফলে ড্রেন সমান্তরাল না হয়ে আঁকাবাঁকা হচ্ছে। এতে পানি না নেমে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ড্রেন নির্মাণের ক্ষেত্রে আটটি রড ব্যবহার করার কথা থাকলেও কিন্তু কোথাও পাঁচটি, কোথাও ছয়টি বা সাতটি করে রড ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া দরপত্রে ব্রোকেন স্টোন (ভাঙা পাথর) ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে আস্ত পাথর।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর নাটোর শহরের কানাইখালী মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহরের প্রধান সড়ক প্রসস্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ অনুযায়ী ৫৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সড়ক দুই লেনের কাজ শুরু করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শামিম এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড এবং মীর হাবিবুল আলম ও মীর শরিফুল আলম যৌথভাবে কাজটি পায়। গত বছর ৬ অক্টোবর স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল এর উদ্বোধন করেন। সড়কের মধ্যে ১ দশমিক ২০ মিটার বিভাজক ও দুই পাশে ১ দশমিক ২০ মিটার করে ড্রেন রয়েছে। মূল রাস্তা রাখা হয়েছে ৯ মিটার করে ১৮ মিটার।
শহরের কান্দিভিটার বাসিন্দা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক সাজিদ আলী ঝর্না বলেন, ছায়াবানী সিনেমা হল থেকে কেন্দ্রীয় মসজিদ মার্কেটের সামনে নিমতলা মোড়ের পশ্চিম পাশে ৪৮ ফিট জায়গা না থাকায় ড্রেন বাদ দিয়েই রাস্থা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক স্থানে ৪৮ ফিট জায়গা না থাকায় রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
শহরের বাসিন্দা, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও চিকিৎসক জাকির তালুকদার বলেন, ‘একটি পরিকল্পিত সড়ক নির্মাণের প্রত্যাশা দীর্ঘদিন ধরে লালন করে আসছে শহরবাসী। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণসহ নিম্ন মানের কাজের সন্দেহ করা হচ্ছে। এ জন্য শহরবাসী হতাশ। আমরা চাই, দরপত্রের শর্তানুযায়ী কাজ হবে। কিন্তু, তা হচ্ছে না। এটি দুঃখজনক। এর ফলে সরকারের সম্পদের অপচয় হচ্ছে।’
নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, দরপত্র অনুযায়ী যেখানে যে পরিমাণ সিমেন্ট, রড দেয়ার কথা তা দেয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া ড্রেন নির্মাণ কাজে পুরাতন ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটি খননের পর রোলার করার নিয়ম থাকলেও, তা করা হচ্ছে না। খোয়া ও ইট ব্যবহার শর্তানুযায়ী হচ্ছে না। এরই মধ্যে কাজের মান নিয়ে নাটোরবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছে। নিম্ন মানের কাজ নিয়ে একাধিক জেলা উন্নয়ন ও সমন্ব্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদাররা কারো কথায় কর্ণপাত করছেন না। অবিলম্বে কাজের মান দেখভাল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার আশফাকুর রহমান বলেন, ‘এসব অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন।’ তিনি জানান, দরপত্রের শর্তানুসারে সব কাজ করা হচ্ছে। তিনি স্বীকার করেন, ভাঙা পাথরের ক্ষেত্রে ১৫-২০ শতাংশ আস্ত পাথর থাকতে পারে। তাছাড়া ড্রেনের গভীরতা অনুযায়ী রড ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে।
নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাইনি। কোথাও কোনো অনিয়ম দেখা গেলে ঠিকাদারকে বলে তাৎক্ষণিক তা সংশোধন করা হয়েছে।’ তিনি জানান, অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ না থাকায় আপাতত ড্রেন নির্মাণ না করে সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে। এছাড়া, উচ্ছেদের নামে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।