স্মরণ: ভাষা সৈনিক অছিম উদ্দিন আহম্মদ

এনামূল হক পলাশ: অছিম উদ্দিন আহম্মদ বাংলা ১৩২২ সালের ১লা বৈশাখ মোতাবেক ইংরেজী ১৯১৫ সালে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার কামতলা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
মরহুম আব্দুল ছমির উদ্দিন আহম্মদ এর ঔরসে ও মরহুমা করিমুন্নেছা বিবির গর্ভে অছিম উদ্দিন আহম্মদ জন্ম গ্রহণ করেন। প্রচন্ড সম্ভাবনা ও স্বচ্ছলতার ভেতর দিয়ে তাঁর জীবন কেটেছে। তাঁর স্ত্রীর নাম নুরুন্নাহার বেগম। বসবাস করেছেন পুরাতন হাসপাতাল রোড, নেত্রকোণায়।
তিনি স্যার সলিমউল্লাহ্ মুসলিম ছাত্রাবাসের আবাসিক ছাত্র হিসাবে ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ১৯৫২ হতে ১৯৫৮ সন পর্যন্ত তিনি নেত্রকোণা টাউন মুসলিম লীগের সেক্রেটারী এবং ১৯৬২ সন হতে ১৯৬৮ পর্যন্ত নেত্রকোণা মহকুমা মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৬১-৬২ সালে নেত্রকোণা “ইউলিটি ফাল্ড” কমিটির সম্পাদক হিসাবে কাজ করা কালে তাঁর নেতৃত্বে নেত্রকোণা প্যাভিলিয়ন, নেত্রকোণা পুলিশ ক্লাব, নেত্রকোনা পাবলিক হল এর উন্নয়ন মূলক কাজ সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ১৯৫৬ সনে তিনি আটপাড়া-বারহাট্টা নির্বাচনী এলাকা থেকে দুইজন প্রতিদ্বন্ধীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৬৭ সনে আবার ময়মনসিংহ জেলা কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৭০ সনে পর্যন্ত কৃতিত্বের সহিত ঐ পদে আসীন থাকেন।
ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি নেত্রকোণা শহরে অবস্থান করেন এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যান্যদের সাথে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে নেত্রকোনা কলেজের অধ্যাপক আমীরুল্লাহ বাহার চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও অছিম উদ্দিন আহমেদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ওয়াজেদ আলী, আবদুুল খালেক, সত্যকিরণ আদিত্য, কুমুদ রঞ্জন বিশ্বাস, নকুল চন্দ্র সিংহ, এম এ মজিদ, ফজলুর রহমান খান প্রমুখ। আমীরুল্লাহ বাহার চৌধুরী দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে পরবর্তীতে অছিম উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক এবং গাজী মোস্তফা হোসেনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।
১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজনীতির প্রতি আস্থা হারিয়ে তিনি গ্রামের বাড়ীতে বসবাস শুরু করেন এবং জমি সম্পত্তি রক্ষনবেক্ষনের কাজে নিযুক্ত হন। সে সময় গ্রামের দুঃস্থ, অসহায়, সাধারণ মানুষের বিপদে তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং বিপুল জনগণের সম্মান ও ভালোবাসা অর্জন করেছেন। পরবর্তীতে শহরে বসবাস শুরু করলেও আর কোনদিন রাজনীতির সাথে যুক্ত হননি।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠন ও সামাজিক কর্মকান্ডের নেতৃস্থানীয় অবস্থানে ছিলেন। তিনি সারাজীবন সততার সাথে জনহিতকর কাজে লিপ্ত ছিলেন। তার শখ বা পছন্দ ছিল বই পড়া, বাজার করা, চিঠি লিখা। তিনি ২০০১ সালের ২২ জানুয়ারী রোজ সোমবার বার্ধক্য জনিত কারনে মৃত্যুবরন করেন।
তথ্যসূত্র ঃ ১) ভাষা-সংগ্রামে নেত্রকোনা, সম্পাদক- ইকবাল হাসান তপু, অমাস, নেত্রকোনা ২) একুশে ফেব্রুয়ারি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, ফুলে হুসেন, বিভাস প্রকাশনী, ঢাকা ৩) শাহ আবদুল মোত্তালিব, কুন্তল বিশ্বাস ও সঞ্জয় সরকার রচিত নেত্রকোনায় ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রবন্ধ। ৪) লেখক কর্তৃক অনুসন্ধান।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।