গৌরীপুরে গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতন : সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড়

মো. আনোয়ার হোসেন শরীফ, গৌরীপুর থেকে : ময়মনসিংহের গৌরীপুরে স্বামীর সাথে পরকিয়া সন্দেহে এক নারীকে বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। গত শনিবার দিনভর নারীটিকে একটি ঘরে আটকে রেখে চালানো হয় নির্যাতন। দিনভর নির্যাতন শেষে নারীর মুখে চুন-কালি মেখে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে এলাকায় ঘোরানো হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে রোববার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নাছিমা আক্তার ও তার মা হাবিলা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গৌরীপুর পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামাবাদ মহল্লায় স্বামী-সন্তান ও শশুর-শ্বাশুড়ির সাথে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন সেলিনা বেগম। তিনি পৌর এলাকায় বিভিন্ন বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। সেলিনার স্বামী সোলেমান মিয়া সিএনজি চালক। গত কয়েকদিন আগে প্রতিবেশী শহীদ মিয়ার সাথে গৃহপরিচারিকা সেলিনার পরকিয়া প্রেম রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন শহীদের স্ত্রী নাছিমা আক্তার ওরফে টুক্কুনি। স্বামীর সাথে পরকিয়ার অভিযোগ এনে গত শুক্রবার সেলিনাকে বাড়িতে এসে বকাঝকা ও হুমকি দেন নাছিমা। বিষয়টি গত শনিবার সকালে শহীদের মুঠোফোনে জানিয়ে বিচার চান সেলিনা। এতে ক্ষিপ্ত হয় নাছিমা। গত শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি/১৮) সকাল ১১ টার দিকে একটি বাসা থেকে কাজ শেষে নিজ বাসায় ফেরার পথে রাস্তা থেকে সেলিনাকে ধরে নিয়ে যায় নাছিমা। তার নাছিমার ঘরে নিয়ে চালানো হয় নির্যাতন। নাছিমার সাথে নির্যাতন চালাতে সহযোগিতা করে নাছিমার মা হাবিলা ও বোন স্মৃতি আক্তার।
নির্যাতিতার পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, সকাল ১১ টায় সেলিনাকে ধরে নিয়ে বিবস্ত্র করে ফেলা হয়। সেলিনাকে রক্ষা করতে অনেকে এগিয়ে গেলেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন। সকাল ১১ টা থেকে বেলা ৪ টা পর্যন্ত ঘরে আটকে রেখে চলে নির্যাতন। লাঠি পেটা, স্পর্শকাতর স্থানসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কামড়, ও ব্লেড দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। এর পর ক্ষতস্থানে মরিচ গুড়ো ও লবন মিশিয়ে লাগানো হয়। নির্নম নির্যাতনে সেলিনার চিৎকারে আশপাশের লোকজন গেলেও নারীদের অ¯্রাব্য গালাগালের মুখে সবাই ফিরে আসেন। শুধু এতেই ক্ষ্যান্ত থাকেননি নির্যাতনকারী নারিরা। বেলা ৪ টার পর নাসিমার মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। তার পর মুখে চুন-কালি মেখে ও জুতার মালা পড়িয়ে লাঠিপেটা করতে করতে রাস্তায় বের করে আনা হয়। এর পর ইসলামাবাদ সড়কে সেলিনাকে লাঠিপেটা করতে করতে ঘুরানো হয়। ওই সময় নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে অনেকের পা’ ঝাপটে ধরেন সেলিনা। কিন্তু নাছিমার রোষাণল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারেনি সেলিনাকে।
নির্যাতন শেষে বেলা ৫ টার দিকে সেলিনাকে বাড়িতে দিয়ে যায় নাছিমা ও তার লোকজন। এর পর সেলিনাকে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ায়। চিকিৎসকরা নির্যাতনের মাত্রা দেখে দ্রুত নারীটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে নির্যাতনের স্বীকার সেলিনা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ নং ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।
এদিকে নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় রোববার সকাল ১১ টার দিকে গৌরীপুর থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নির্যাতনের মূল হোতা নাছিমা আক্তার, মা হাবিলা খাতুন কে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া ইসলাম ডলি ও গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখের হোসেন সিদ্দিকী।
এদিকে নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ঘেরাও করেন। ইউএনও অফিসে না থাকায় ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া ইসলাম ডলি তাদেরকে আইনী সহযোগিতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেন।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার আহম্মদ জানান, এ ঘটনায় নির্যাতিত নারীর স্বামী সোলায়মান মিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। নাছিমা আক্তার ও তার মা হাবিলা খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নাছিমার মেয়ে স্বর্ণা ছোট থাকায় ও মামলার এজাহারভুক্ত না থাকায় থাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।