স্বাধীনতা ও যথেচ্ছাচার এক নয় : সাংবাদিকদের রাষ্ট্রপতি

বিশেষ প্রতিনিধি: গণমাধ্যমকে তথ্যভিত্তিক সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ‘স্বাধীনতা ও যথেচ্ছাচার’ যে এক নয় তা সাংবাদিকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। রোববার বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের তথ্যভিত্তিক সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সৎ সাহসই পারে একজন সাংবাদিককে পেশাগত উৎকর্ষের শীর্ষে নিয়ে যেতে। আপনারা সমালোচনা করবেন। তবে তা যেন তথ্যভিত্তিক হয়। কোনভাবেই যেন একপেশে না হয়। গঠনমূলক সমালোচনা সরকার পরিচালনা ও জাতিগঠনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
“গণমাধ্যমের সুষ্ঠু বিকাশে অবাধ তথ্য প্রবাহ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। এ লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নের পাশাপাশি গণমাধ্যম যাতে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতে পারে সরকার সে ব্যাপারে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে। মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা মানে যা ইচ্ছে তা করা বা যথেচ্ছাচার নয়। একজনের স্বাধীনতার জন্য অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার কেউ কাউকে দেয়নি। তাই দায়িত্ব পালনকালে আপনাদেরকে সচেতন হতে হবে।”
দেশের গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে গণমাধ্যমকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, তথ্যের প্রবেশাধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়ন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যম গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে পারে, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও মতামত পরিবেশনের মাধ্যমে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পাঠকদের সত্য ও কল্যাণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে গণমাধ্যম কখনো পিছপা হবে না-এ বিশ্বাস আমার রয়েছে।”
“সংবাদপত্রের দায়িত্বশীল ও পেশাদারী ভূমিকা সাধারণ জনগণকে সঠিক তথ্য প্রদান করে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বিভিন্ন সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে সমাধানের পথ খুঁজতে সহযোগিতা করে। জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে জনমত গঠনেও তাদের ভূমিকা অপরিসীম। আমি আশা করি সকল গণমাধ্যম বস্তÍনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে জাতির উন্নয়নে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। দেশের গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে তারা আরও তৎপর হবে।”
দেশে গণমাধ্যমের বিকাশের কথা তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
“দেশের সংবাদমাধ্যম এখন শুধু সংবাদপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমান সরকারের সাংবাদিকবান্ধব নীতির কারণে দেশে গড়ে উঠেছে বহু বেসরকারি টিভি চ্যানেল, এফএম রেডিও, অনলাইন রেডিও, অনলাইন টেলিভিশন এবং পাশাপাশি তৃণমূলের কন্ঠস্বর হিসেবে কাজ করছে কমিউনিটি রেডিও। দেশের গণমাধ্যমের এই যে বিকাশ তার সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “অসত্য, উষ্কানিমূলক কিংবা হলুদ সাংবাদিকতা কখনই জনগণ ও গণতন্ত্রের বন্ধু হতে পারে না। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ করে সংবাদপত্র ও সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য যে নীতিমালা ও আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে তাতে দেশে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধে সহায়ক হয়েছে। আমি আশা করি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল অধিকতর কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের যাত্রাকে আরও এগিয়ে নিতে সাংবাদিকদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
আবদুল হামিদ বলেন, “২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য-আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে সরকার নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এসব কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা ও সহযোগিতা খুবই জরুরি বলে আমি মনে করি।”
“সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। প্রতিটি পেশার উৎকর্ষের জন্য ভালো কাজের স্বীকৃতি থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশ প্র্রেস কাউন্সিল গণমাধ্যমের সুষ্ঠু বিকাশ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের কল্যাণে আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি ভালো কাজের জন্য পুরস্কার এবং মন্দ কাজের জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এটাই সকলের প্রত্যাশা। এ কাজে গণমাধ্যমকেও সহযোগিতা করতে হবে। আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমিত না রেখে প্রেস কাউন্সিলকে গণমাধ্যমের আস্থা ও কল্যাণের কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে ছয়টি ক্যাটাগরিতে ৫ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে পদক দেয়া হয়। পদক প্রাপ্তরা হলেন- কলামনিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী (আজীবন সম্মাননা)। তার পক্ষে পদক নেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার।
সমকালের বিশেষ প্রতিনিধি রাজীব নূর (গ্রামীণ সাংবাদিকতা), জনকণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাজন ভট্টাচার্য (উন্নয়ন সাংবাদিকতা), দৈনিক বরিশাল সময়ের প্রধান প্রতিবেদক মর্জিনা বেগম (নারী সাংবাদিকতা), দৈনিক আমাদের সময়ের আলোকচিত্রী আলামিন লিয়ন (আলোকচিত্র)। প্রাতিষ্ঠানিক সম্মানা দেয়া হয় দৈনিক সংবাদকে। সম্মাননা প্রাপ্তদের হাতে ৫০ হাজার টাকার চেক ও সম্মাননা পত্র তুলে দেন রাষ্ট্রপতি।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।
আরও বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, প্রেস কাউন্সিল পদক ২০১৮ এর জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।