ভাই-বোনদের ঠকিয়ে সম্পত্তি বিক্রি, হত্যার হুমকিতে সংখ্যালঘু পরিবার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহ নগরীর মহারাজা রোড এলাকায় আইনের তোয়াক্কা না করে সব ভাই-বোনদের ঠকিয়ে পুরো পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন ভারত প্রবাসী সুখময় কুমার গুহ।
আইনগতভাবে বড় ভাই’র অবৈধ এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েও কোন ফল পাচ্ছেন না অন্য দুই ভাই ও বোন।
উল্টো সম্পত্তি কেনা নগরীর প্রভাবশালী আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক ব্যক্তির সন্ত্রাসীরা তাদের বসতভিটা ছাড়তে ৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকি-ধমকিতে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, অনিদ্রা আর অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে অসহায় এক সংখ্যালঘু পরিবার। জীবনের বিনিময়ে হলেও তাঁরা নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষার কথা জানিয়েছেন।
শুক্রবার দুপুর ১২ টার দিকে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন সংখ্যালঘু ওই পরিবারের সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে পরিবারটির অভিভাবক স্নেহাশীষ চৌধুরী, মিরা রাণী গুহ দাস ও বিপ্লব কুমার গুহ মানিক উপস্থিত ছিলেন।
সংখ্যালঘু ওই পরিবারটির সদস্য, স্থানীয় সংবাদকর্মী বিপ্লব কুমার গুহ মানিক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নগরীর মহারাজা রোডের ৯ ও ১১ নম্বর হোল্ডিং এ তাদের মোট জমির পরিমাণ ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ জমির মালিক ছিলেন তাঁর দাদা রায় বাহাদুর জগদীশ চন্দ্র গুহ (জেসিগুহ)। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে শিশির কুমার গুহ ওয়ারিশসূত্রে এ জমির মালিক হন।
শিশির কুমার গুহের দুই স্ত্রী ছিলেন। উইল প্রোভাইডে প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের সম্পত্তি দেয়া হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী ক্ষণা রাণী গুহ, তার তিন ছেলে সুখময় কুমার গুহ, সুবিনয় কুমার গুহ, বিপ্লব কুমার গুহ ও বোন মিরা রাণী গুহ দাসের মাঝে সম্পত্তি ভাগ করে দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভাগাভাগিতে মোট সম্পত্তির ৪ আনা করে তিন ছেলেকে দেয়া হয়। বোন ও স্ত্রীকে দেয়া হয় ২ আনা করে। ১৯৬২ সালে বাবা শিশির কুমার গুহ এ সম্পত্তি তার সন্তানদের নামে দলিল করে দেন। এর তিন বছর পর তিনি মারা যান।
পরে বৈধভাবে তার সন্তানরাই এ সম্পত্তির মালিক হন। ১৯৭৫ সালে তাঁর বড় ছেলে সুখময় গুহ ভারত চলে যান। ১৯৯৮ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর ছোট ভাই বিপ্লব কুমার গুহ’র নামে তিনি নিজের সম্পত্তির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিপ্লব কুমার গুহ মানিক বলেন, ১৯৯৮ সালে হঠাৎ করেই দেশে ফিরে সুখময় কুমার গুহ নিজের অংশের মালিকানাসহ পুরো সম্পত্তিই আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন এবং তাঁকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে দেন, যেটি সম্পূর্ণ অবৈধ।
বাবার উইল অবমাননা করে এককভাবে তিনি আরেকজনের নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছেন। অথচ আইনগতভাবে তিনি এটি দিতে পারেন না।
সংবাদ সম্মেলনে এ পরিবারের অভিভাবক স্নেহাশীষ চৌধুরী জানান, আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের ওই ব্যক্তি মাস খানেক আগে ১১ নম্বর হোল্ডিং’র আমাদের দু’তলার বাড়িটি দখলে নিয়ে গুড়িয়ে দেন। এখন ৯ নম্বর হোল্ডিং’র দু’তলা বাড়ি ছাড়ার জন্য সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
ওই ব্যক্তি ও তাঁর সন্ত্রাসীরা বার বার আমাদের হুমকি দিচ্ছে। বাড়ি না ছাড়লে সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলেও জানিয়েছে। কিন্তু আমরা আমাদের বাড়ি ছেড়ে যাবো না। জীবন দিয়ে হলেও বসতভিটা রক্ষা করবো। আমি জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তাঁরা এখন পর্যন্ত কোন রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে হুমকি-ধমকিতে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।