
কেন্দুয়া প্রতিনিধি: অফিসারদের খরচের কথা বলে হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানে জন প্রতি ৩শ ২০ টাকা থেকে ১২শ টাকা করে আদায় করছেন এক মাদরাসা সুপার। টাকা না দিলে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিচ্ছেন না ওই সুপার। শুধু তাই নয়, সুপারের কথা মত যারা টাকা দিচ্ছেন কেবল তাদেরকেই উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গগডা মোজাফরপুর দাখিল মাদরাসার চিত্র এটি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর পক্ষে ওই মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রমজান মিয়ার পিতা গগডা গ্রামের রিকশাচালক দুলাল মিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বিষয়ে জরুরি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করেছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গগডা দাখিল মাদরাসার সুপার মো. ইয়াহিয়া ও সহকারি মৌলভী আব্দুল ওয়াহাব মিয়া অফিসারদের খরচের কথা বলে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩শ ২০ টাকা শুরু করে ১২শ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন এবং টাকা না দিলে কোনো শিক্ষার্থীকেই উপবৃত্তি দিচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়েই হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা টাকার বিনিময়ে উপবৃত্তি সুবিধা নিচ্ছেন। রমজান মিয়া ছাড়াও মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির দিদারুল আমিনের কাছ থেকে ৫শ ২০ টাকা, ফাহিমা আক্তারের কাছ থেকে ৪শ টাকা, জেনিয়া আক্তারের কাছ থেকে ৪শ টাকা, মুক্তামণির কাছ থেকে ৪শ টাকা, তানজিলা আক্তারের কাছ থেকে ৪শ টাকা, ইবরাহিম মিয়ার ৫শ ২০ টাকা, আশিক মিয়ার কাছ থেকে ৫শ টাকা, অষ্টম শ্রেণির আব্দুল কাইয়ূমের কাছ থেকে ৬শ টাকা, আশিক মিয়ার কাছ থেকে ৬শ টাকা, মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ৫শ টাকা, আফরোজা আক্তারের কাছ থেকে ৩শ ২০ টাকা, বদরুল আমিনের কাছ থেকে ৫শ ২০ টাকা, ইমন মিয়ার কাছ থেকে ৫শ টাকা, কাউসার মিয়ার কাছ থেকে ৫শ ২০ টাকা, এনামুল হকের কাছ থেকে ৫শ টাকা, নবম শ্রেণির মাজহারুল ইসলামের ৬শ টাকা, রহমত উল্লাহর কাছ থেকে ৬শ টাকা, আকরাম মিয়ার কাছ থেকে ৬শ টাকা, সারোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ৫শ টাকা, মোশাররফের কাছ থেকে ৫শ টাকা ও দশম শ্রেণির মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে ৫শ ২০ টাকা, সারোয়ার আলমের কাছ থেকে ৬শ ২০ টাকা, হেপি আক্তারের কাছ থেকে ৫শ ২০ টাকা, হৃদয় মিয়ার কাছ থেকে ৫শ টাকা ও শরীফের কাছ থেকে ৫শ টাকাসহ মাদরাসার উপবৃত্তিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষার্থীর কাছ থেকেই টাকা আদায় করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রমজান মিয়ার পিতা রিকশাচালক দুলাল মিয়া জানান, ২০১৭ সালে আমার ছেলের নামে উপবৃত্তি প্রদানের জন্য মাদরাসা সুপার মো. ইয়াহিয়ার কাছে গেলে তিনি মৌলভী শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাবের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে আব্দুল ওয়াহাবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি উপবৃত্তির খরচ বাবদ আমার কাছে ১২শ টাকা চান। কিন্তু আমি তখন টাকা দিতে না পারায় আমার ছেলের উপবৃত্তি হয়নি। এদিকে ২০১৭ সালের শেষের দিকে কিছু উপবৃত্তি দেওয়া হবে শুনে গেলে আবারাও তিনি টাকা চান। কোনো উপায় না দেখে বাধ্য হয়েই ১২শ টাকা দেওয়ার পর তারা আমার ছেলের নাম উপবৃত্তির তালিকাভুক্ত করেন।
মাদরাসা সুপার মো. ইয়াহিয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে আমার নাম ভাঙ্গিয়ে যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে তাহলে আমি কি করব।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এ ঘটনায় তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।