
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রূপাকে ধর্ষণের পর হত্যার মামলায় চার আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও একজনকে সাত বছরের কারাদ- দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার বেলা ১১ টা ২০ মিনিটে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় দিয়েছেন।
এর আগে বেলা ১১টা ৭ মিনিটে আদালতে বসেন বিচারক। এরপর ৭৩ পৃষ্ঠার রায়ের অংশ বিশেষ পড়ে শোনান তিনি।
মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন- ময়মনসিংহ-বগুড়া রুটের ছোঁয়া পরিবহণের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫), জাহাঙ্গীর (১৯) ও চালক হাবিবুর (৪৫)। এছাড়া সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) সাত বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ছোঁয়া পরিবহনের বাসটি (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৩৯৬৩) রুপার পরিবারকে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি ছিল উভয়পক্ষের যুক্তিতর্কের সমর্থনে আইন দাখিলের দিন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক রায়ের দিন ধার্য করেন।
গত ৩ জানুয়ারি মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরে মামলায় জব্দ তালিকা, সুরতহাল রিপোর্ট, চিকিৎসক, পাঁচ আসামির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি গ্রহণকারী চারজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৭ জনের ২৩ জানুয়ারি আদালতে সাক্ষ্য ও জেরা সমাপ্ত হয়। ঘটনার ১৭৩ দিন ও মামলার ১৭১ দিনে চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় দিলো আদালত।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি এ কে এম নাছিমুল আক্তার বলেন, আমরা এ রায়ে খুশী।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী আইনজীবি এ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ বলেন, দ্রুততম সময়ে এই মামলায় রায় ইতিহাসে নজির হয়ে থাকবে। অপরাধীরা এই রায়ের ফলে অপরাধ থেকে অনেকটাই সরে আসবে।
তবে রায়ে সন্তুষ্ট নন আসামিপক্ষের আইনজীবী শামীম চৌধুরী দয়াল। তিনি বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। উচ্চ আদালতে আপিল করব।
গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপাকে চলন্ত বাসে পরিবহণ শ্রমিকরা ধর্ষণ করেন এবং বাসেই তাকে হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে লাশ ফেলে রেখে যায়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ রাতে লাশ উদ্ধার করে। পর দিন ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে রূপার ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে ছবিরভিত্তিতে বোনকে শনাক্ত করেন।