
বিশেষ প্রতিনিধি: ভাষা ও সাহিত্যে এবছর একুশে পদক (মরণোত্তর) পাচ্ছেন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক খালেকদাদ চৌধুরী। নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ড মোঃ মুশফিকুর রহমান ও খালেকদাদ চৌধুরীর ছেলে সাংবাদিক হায়দার জাহান চৌধুরী জানান।
খালেকদাদ চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত পরিচিত: খালেকদাদ চৌধুরীর জন্ম ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনার মদন উপজেলার চানগাঁও গ্রামের মাতুলালয়ে। তাঁর পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার সোনাজোর গ্রামে। তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ১৯২৬ সালে আইএ পাশ করার পর ইসলামিয়া কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স নিয়ে বিএ পড়েন।
১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘বিকাশ’ পত্রিকায় তার কবিতা প্রকাশিত হয়। শিক্ষা এবং কর্ম জীবনের সুবাদে তিনি ১৯২৫ থেকে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতায় অবস্থান করেন। আবুল মনসুর আহম্মদ সম্পাদিত ‘দৈনিক কৃষক’ এ সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৪১ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে প্রধান সম্পাদক এবং আবুল মনসুর আহম্মদকে অন্যতম সম্পাদক করে ‘দৈনিক নবযুগ’ পত্রিকা প্রকাশিত হলে খালেকদাদ চৌধুরী পত্রিকাটির কিশোর বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পান। কলকাতায় থাকাকালে প্রচুর গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ ও অনুবাদ সাহিত্য লিখেছেন। ‘সওগাত’, ‘মোহাম্মদী’, ‘প্রদীপ’, ‘মাহেনও’, ‘দিলরুবা’, ‘যুগবাণী’ প্রভৃতি পত্র-পত্রিকাগুলোতে নিয়মিতভাবে তাঁর লেখা প্রকাশিত হতো। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার জীবন ছেড়ে নেত্রকোনায় ‘জনসংযোগ কর্মকর্তা’ পদে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে নেত্রকোনা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তরাকাশ’ নামক একটি পত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। উত্তরাকাশ-এর নিয়মিত লেখকদের মধ্যে কবি নির্মলেন্দু গুণসহ অনেকে পরবর্তীকালে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পান। পরবর্তীতে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘সৃজনী’ নামে অপর একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন।
খালেকদাদ চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে রয়েছেঃ উপন্যাস- ‘একটি আত্মার অপমৃত্যু’, ‘চাঁদ বেগের গড়’, ‘রক্তাক্ত অধ্যায়’, ‘এ মাটি রক্তে রাঙা’, ‘অভিশপ্ত মসনদ’, অনুবাদ- ‘মরু সাহারায়’, ‘বাহারীস্তান-ই-গায়বী’(চার খণ্ড), ‘আবু বকর দ্বীপ’, ‘বেদুঈনের মেয়ে’, ‘সালেম’, গল্প- ‘গল্প সংগ্রহ’, ‘সাপমারির অভিশাপ’, আত্মজীবনী- ‘শতাব্দীর দুই দিগন্ত’ এবং অন্যান্য- ‘বহ্নিশিখা’, ‘বিশ্ব সাহিত্য পরিচয় ও অন্যান্য প্রবন্ধ’। এর মধ্যে বেশ কিছু রচনা আজও গ্রন্থাকারে প্রকাশ হয়নি। ১৯৮৩ সালে তিনি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ পান।