নাটোরের হালতিবিলে জলাবদ্ধতায় বোরো ধান চাষে শঙ্কায় কৃষক

নাজমুল হাসান, নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হালতিবিলে জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় দুইশ হেক্টর জমির বোরো ধান চাষ নিয়ে চরম দুঃচিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। হালতিবিলের খোলাবাড়িয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি অবৈধভাবে ভরাট করে দখল এবং পানি নিষ্কাশনের পথ আটকে মাছ শিকার করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গত দুই বছর আগে ভুক্তভোগি কৃষকরা নিজ উদ্যোগে এবং স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন দুই মৌসুমে খাল সংস্কার করে জলাবদ্ধতার পানি নিষ্কাশন করার ব্যবস্থা করে বোরো ধান চাষ করার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। এবার এ জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও প্রতিকার না পেয়ে ৮ গ্রামের শত শত ভুক্তভোগি কৃষক হতাশায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দখল হওয়া ২০ কিলোমিটার খাল উদ্ধার করে সংস্কার করলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ১৯৮১ সালে উপজেলার হালতি বিলে ব্রক্ষ্মপুর ইউনিয়নের ইয়ারপুর হতে মোহনপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জিয়া খাল নামে একটি খাল খনন করা হয়েছিল। সংস্কারের অভাবে সেই খাল ভরাট ও অবৈধ দখল হয়ে প্রতিবছর সৃষ্ট জলবদ্ধতায় বিলের প্রায় দুইশ হেক্টর জমির ইরি-বোরো চাষ নিয়ে বিপাকে পড়ে কৃষকরা। বিশেষ করে খোলাবাড়িয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া জিয়া খালের উৎস মুখ সহ এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবৈধভাবে ভরাট করে দখল ও পানি নিষ্কাশরে সব পথ আটকে মাছ শিকার করায় খালটি দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে উপজেলার বাঁঁশিলা, সোনাপাতিল, তেঘরিয়া, মাধনগর, খোলাবাড়িয়া, হালতি, পাটুল সহ ৮টি গ্রামের শত শত কৃষকরা চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে বোরো ধান চাষ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে। গত দুই বছর আগে ভুক্তভোগি কৃষকরা নিজ উদ্যোগে খাল সংস্কার করে জলাবদ্ধতার পানি নিষ্কাশন করে বোরো ধান চাষ করেছিল। গত বছর স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ভরাট করে দখল করা খালটি উদ্ধার করে খনন করে জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নিলেও সংস্কার শেষ হওয়ার আগেই রহস্যজনকভাবে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এবার এ পরিস্থিতিতে জলাবদ্ধতা নিরসনে ভুক্তভোগি কৃষকরা স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা কৃষি অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইউএনও কাছে প্রতিকার চেয়েও কোন কাজ না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে।
তেঘরিয়া গ্রামের কৃষক সাইদুর, সিদ্দিকুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, শামসুল ইসলাম জানান, খোলাবাড়িয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া জিয়া খাল অবৈধ দখল করে ভরাট করায় হালতি বিলের নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে ফলে আমরা সময়মত ধান লাগাতে পারি না । আর বোরো ধান বিলম্বে লাগালে ফলন বিপর্যয় ঘটার আশংকা থাকে।
তেঘড়িয়া গ্রামের কৃষক ফরমাজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মসলেম উদ্দিন জানান, দুই বছর আগে নিজ উদ্যোগে ও গত বছর প্রশাসনের উদ্যোগে জলাবদ্ধতা নিরসনে খোলাবাড়িয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি সংস্কার করে পানি নিঃস্কাশন করে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু এবার ওই খালটি অবৈধভাবে দখল করে ভরাট করে মাছ শিকার করায় পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা এবার করা যাচ্ছে না, ফলে এবার আমরা বোরো ধান লাগাতে পারবো কি না নিশ্চিত হতে পারছি না।
কৃষক মোজ্জামেল হক ও গফুর মন্ডল জানান, হালতি বিলে প্রতি বছরের সমস্যা জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য কৃষিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।উ
উপজেলা কৃষি অফিসার আমিরুল ইসলাম জানান, কত হেক্টর বোরো জমিতে জলাবদ্ধতা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিবছর হালতি বিলে জলবদ্ধতার কারণে কৃষকদের দেরিতে বোরো ধান লাগাতে হয়।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা হাসান জানান, হালতি বিলে জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে খালটি সংস্কার করে সমস্যা সমাধনের জন্য বলা হয়েছে।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুধাংশু কুমার সরকার জানান, হালতিবিল উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে জলাবদ্ধতার সংকট নিরসনের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহন করেছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন না পাওয়ায় দিন দিন সংকট আরো ঘনিভূত বিলাঞ্চলের কৃষকদের। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে এই সংকট নিরসন সম্ভব হবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।