
ফয়েজ আহমেদ হৃদয়, মদন প্রতিনিধি : নেত্রকোনার মদনে মুক্ত জলাশয় দখল করে মাছ চাষের পর এখন চলছে বোরো আবাদ। জেলার মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের রাম গোপলপুর গ্রামের ধলাই, মগড়া ও কাঠালচোরা এই তিন নদীর মোহনাকে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে প্রভাবশালী একটি মহল। পুরো শুস্ক মৌসুমে তারা পানি আটকে মাছ চাষ নিধন করেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। পরবর্তীতে এখন পানি শুকিয়ে তাতে ধান রোপন করেছে। বার বার প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। এদিকে মুক্ত জলাশয়ের সুফলতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামবাসী। বেকার হয়ে পড়ছে এলাকার জেলে পরিবারের লোকজন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরও নদী দখল করেই চলছে ধান রোপন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে দৈনিক সমকালসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ‘মদনে মুক্ত জলাশয় গুলো প্রভাবশালীর দখলে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন সরেজমিনে গিয়ে নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ নিধন দৃশ্য দেখার পরও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয় নি।
ফলে প্রভাবশালীরা তাদের ইচ্ছা মত মুক্ত জলাশয়ের পানি সেচ যন্ত্রে শুকিয়ে মাছ নিধন শেষ করে নদীতে ধান রোপন করছে। রাম গোলালপুর গ্রামের মৃত আলতু ভূইঁয়ার ছেলে মোজাম ভূইয়া এ নদীতে ধান রোপন করায় নদী হয়ে পড়েছে এখন ফসলের মাঠ। দেখাদেখি ফতেপুর ইউনিয়নসহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নের নদী গুলো দখল করে ধান রোপনের হিড়িক পড়েছে।
এ ব্যাপারে তলার হাওরের জিরাতি কৃষক সোনা মিয়া, লাই মিয়া, রঞ্জন, সুকুমার অভিযোগ করে বলেন, ধলাই নদীতে ধান রোপন করায় আমরা ২০ কিঃমি ঘুরে বর্র্ণি নদী দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এর আগে মগড়া নদীতে গাছের ডাল, বাঁশ পুতে, কাটা দিয়ে মাছ নিধন করায় নৌ চলাচল বন্ধ থাকে। এখন পুরোপুরি নদী শুকিয়ে ধান রোপন করায় সেচ না দিতে পারার ফলে শত শত একর ফসলের জমি রয়ে যাচ্ছে পতিত। প্রভাবশালী মহলের ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে পারছেন না বলেও জানান তারা। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আশুহস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার জেলেরা জানান, মগড়া নদীসহ বিভিন্ন মুক্ত জলাশয় গুলোতে ধান রোপন করায় মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মুক্ত জলাশয় গুলোতে অবাধে মাছ ধরার সুযোগ চান তারা।
ধান রোপনকৃত মোজাম ভুইয়া জানান, মাদ্রাসা কমিটির লোকজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ধলাই নদীর কিছু অংশ ইজারা নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মদন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওয়ালীউল হাসান জানান, মুক্ত জলাশয় দখল করে মাছ নিধনের খবর পেয়েই আমরা গিয়ে নদী উন্মুক্ত করে দিয়ে এসেছি। এখন ধানের ব্যাপারটি জানিনা। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও তিনি জানান।