
খালিয়াজুরী প্রতিনিধি: অকাল বন্যায় একমাত্র ফসল হারানোর পর এবার তীব্র শীতে কাপছে জেলার হাওরপাড়ের অসহায় মানুষ। অর্থের অভাবে শীতবস্ত্র কিনতে না পেরে শীতে কষ্ট করছেন তারা। খড়কুটো জালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন হাওরপাড়ের অসহায় মানুষ।
জানা গেছে, জেলার খালিয়াজুরী উপজেলায় গত বছর অকাল বন্যায় একমাত্র বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। অনেকে এক ছটাক ধানও কাটতে পারেনি। এতে করে হাওরবাসীকে ধার দেনা করে চলতে হচ্ছে। শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ তাদের নেই। গত চার-পাঁচদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এতে করে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাওড়পাড়ে পশ্চিমা বাতাস আর তীব্র শীতে মানুষ কাবু হয়ে গেছে। এখন ফসলী জমি রোপন করার সময়। শীতে ফসলী মাঠে কাজ করতে যেতে পারছে না। জেলেরা পারছে না মাছ ধরতে হাওরে যেতে। ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বেড়েছে বাতাসে শীতের তীব্রতা, আর বৃষ্টির মতো ঘন কুয়াশা। গতকাল সোমবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলেনি। এদিকে শীতের কাপড়ের অভাবে চরম র্দূভোগে পড়েছেন অসহায় মানুষ। গত বছর শত ভাগ ফসল হারিয়ে এমনিতেই মানবেতর জীবন যাপন করছে হাওর পাড়ের মানুষ। হাওরপাড়ের অসহায় মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রচন্ড এই শীতে র্দূভোগ বেড়েছে গবাদি পশুরও। খালিয়াজুরী উপজেলায় সরকারিভাবে শীতার্থদের জন্য ২ হাজার ৮ শত শীতবস্ত্র ( কম্বল) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে ওই সমস্ত শীতবস্ত্র অসহায় গরীব মানুষের মাঝে বিতরণ না করে নিজস্ব ও দলীয় লোকজনের মাঝে বিতরণ করছেন এলাকার জন প্রতিনিধিরা। এতে করে সাধারণ অসহায় মানুষ ও ভিন্ন দলের মানুষ তা পাচ্ছেনা। তারা সরকারি সাহায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আত্মমানবতার সেবায় অসহায় শীতার্থ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, ব্যবসায়ী ও সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছে হাওরপাড়ের অসহায় মানুষসহ সূধীজনেরা।
খালিয়াজুরী উপজেলা প্রশাপসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে প্রায় ৯৬ হাজার মানুষ বসবাস করে। উপজেলায় ৭০ ভাগ মানুষ হতদরিদ্র। গত বছরের বন্যায় ২৪ হাজার ৯শ কৃষক ও ৯ হাজার জেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবার সরকারিভাবে শীতে উপজেলার মেন্দিপুর ৩০০, চাকুয়া ইউনিয়নে ৪০০, খালিয়াজুরীতে ৪০০, নগর ইউনিয়নে ৩০০, কৃষ্ণপুরে ৪০০, গাজীপুরে ৩০০, উপজেলা পরিষদের জন্য ৪০০ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১০০ কম্বল দেয়া হয়। এর মধ্যে উপজেলার খালিয়াজুরী সদর ও গাজীপুর ইউনিয়ন গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত কম্বল নেয়নি এবং দরিদ্র মানুষের মধ্যে কোন কম্বলৈ বিতরণ হয়নি।
খালিয়াজুরী উপজেলার কাদিপুর গ্রামের ৬০ বছরের বৃদ্ধ খেলন রানী শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন। অভাবের তাড়নায় তার ছেলে কাজের সন্ধ্রানে বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে গেছে। ছেলে বউ ও দুই নাতি নিয়ে তিনি বাড়িতে আছেন। খেলন রানী বলেন, শীতে আর থাকতে পাছিনা। রাতের বেলায় সকলে মিলে গাদাগাদি করে থাকি। খুব শীত লাগে। একটা কম্বল পাইলে সবাই মিলে একটু উম (গরম) পাইতাম। একই ধরনের কথা বলেন পুরানহাটি গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধা রেনু আক্তার। তার ছেলে শহরে হোটেল বয়ে কাজ করে। তিনি বলে হঠাৎ কইরা শতি পড়ছে। শীতে খুব কষ্ট করতাছি। শুনছি সরকার গরীবরারে কম্বল দিছে। কিন্তু আমরা পাইলাম না। খালিয়াজুরী সদরের বিধবা চম্পা আক্তার বলেন, গরীবরে দেখার কেউ নাই। শীতে অত কষ্ট করতাছি, কেউ খবরও লয়না।
খালিয়াজুরী উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাজহারুল ইসলাম জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রাপ্ত বরাদ্দের সব দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য কম্বল দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ইউনিয়নের কম্বল নেয়া হয়নি।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার আবদুল্লাহ আল মামুন বাবু জানান, চাহিদার তুলনায় শীতবস্ত্র অপ্রতুল। সরকারি বরাদ্দের কম্বল দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।